চিরতা তেতো হলেও ভেষজগুণে অনন্য

কথা তো নয় যেন চিরতার পানি! প্রচণ্ড রকম তেঁতো স্বাদের বলেই হয়তো কেউ কটু কথা বললে তা চিরতার পানির মতোই তেঁতো লাগে। তবে স্বাদে যতই তেঁতো হোক না কেন, চিরতার গুণাগুণ আর উপকারিতার কিন্তু কোনো শেষ নেই।

চিরকালের তিতা গাছ বলে হয়তো বাংলায় এর নাম দেয়া হয়েছে চিরতা। এ গাছের হিন্দি নাম চিরেইতা, ইংরেজি নাম চিরেত্তা Chitretta), পাঞ্জাবী নাম চিরেইতা, তামিল নাম নিলাভেম্বু আর আরবী নাম কাসাবুজাজারেয়ী।

বিশেষজ্ঞদের মতে, নানাবিধ রোগ প্রতিরোধে কার্যকর চিরতা থেকে এ পর্যন্ত ৪০টিরও বেশি রাসায়নিক উপাদান শনাক্ত করা হয়েছে।

ইউনানি চিকিৎসাশাস্ত্র অনুযায়ী, চিরতা হৃৎপিণ্ড ও যকৃতের সবলকারক, চোখের জ্যোতিবর্ধক ও জ্বর রোগে বিশেষ উপকারী। আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে, চিরতা স্নিগ্ধকারক, হজমকারক, চক্ষুরোগনাশক ও লিভার রোগ উপশমকারী।

চলুন জেনে নিই উল্লেখযোগ্য কিছু ভেষজ গুণ-

জ্বর সারায়
আকস্মিক ঋতু পরিবর্তনে অনেকের জ্বর হয়, সেইসঙ্গে সর্দি-কাশিও বেড়ে যায়। তখন হাত-পা চিবোয় বা কামড়ায়। এ অবস্থা হলে ৫-১০ গ্রাম চিরতা ৪ কাপ পানিতে সিদ্ধ করে ২ কাপ থাকতে নামিয়ে ঠাণ্ডা করতে হবে। পরে তা ছেঁকে সকালে অর্ধেক ও বিকালে অর্ধেক খেতে হবে। কয়েকদিন খেলে জ্বরের এ ভাবটা চলে যাবে।

অ্যালার্জি সারায়
অ্যালার্জি সারাতে চিরতার তিতা রস সাহায্য করতে পারে। আগের দিন রাতে শুকনো চিরতা ৪-৫ গ্রাম পরিমাণ এক গ্লাস গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন ওটা ছেঁকে দিনের মধ্যে ২-৩ বারে খেতে হবে।

বমি কমায়
২ কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা একটু থেঁতো করে ভিজিয়ে রাখতে হবে। ভিজানোর ২-৩ ঘণ্টা পর ছেঁকে পানিটা অল্প অল্প করে খেতে হবে। এতে বমি থেমে যাবে।

হাঁপানির উপশম হয়
অল্প ঠাণ্ডা বা ঋতু পরিবর্তনের সময় যাদের সর্দি-কাশি হয়ে হাঁপানির টানটা বেড়ে যায়, তারা আধা গ্রাম চিরতার গুঁড়ো ৩ ঘণ্টা অন্তর মধুসহ চেটে খাবেন। এতে ২-৩ দিনের মধ্যে হাঁপানি কমে যাবে।

কৃমি সারায়
কৃমি হলে পেটের উপরের অংশটা মোচড়ায়, ব্যথা করে। পেটে কৃমি হলে আধা গ্রাম চিরতার গুঁড়ো সকালে মধুসহ বা চিনি মিশিয়ে চেটে খাবেন। এরপর পানি খেতে পারেন। এতে কৃমির উপদ্রব চলে যাবে।

পচা ঘা সারে
ঘা হয়েছে অথচ কিছুতেই সারছে না। এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেই জল ছেঁকে পচা ঘা ধুয়ে দিলে ২-৪ দিনের মধ্যে ঘায়ের পচানি চলে যাবে ও দ্রুত শুকাবে।

চুল ওঠা বন্ধ করে
চুল উঠতে উঠতে ঘন কেশ পাতলা হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে এক কাপ গরম পানিতে ৫ গ্রাম চিরতা ভিজিয়ে রেখে পরদিন সেই পানি ছেঁকে তা দিয়ে মাথা ধুয়ে ফেললে চুল ওঠা কমবে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
চিরতা নিয়মিতভাবে খেলে রক্তে চিনির পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে বা কমে। চিরতা দেহে অগ্ন্যাশয়ের ইনসুলিন উৎপাদনকে ত্বরান্বিত করে। এক্ষেত্রে আগের দিন রাতে শুকনো চিরতা ৪-৫ গ্রাম পরিমাণ এক গ্লাস গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন ওটা ছেঁকে সকালে খালি পেটে খেতে হবে।

রক্তশূন্যতা কমায়
চিরতা দেহে রক্তকোষ গঠন করে। তাই চিরতা সেবনে রক্তশূন্যতা কমে যায়। এমনকি ঋতুস্রাব বা মাসিকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হলে তাও কমাতে পারে। কোথাও কেটে গেলে, কাটা স্থানে চিরতার রস লাগিয়ে দিলে দ্রুত রক্ত পড়া বন্ধ হয়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ