স্বাদে টক তেঁতুলের চোখ ধাঁধানো পুষ্টিগুণ

তেঁতুলের নাম শুনতেই জিভে পানি এসে যায়। Fabaceae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত টক জাতীয় এই ফলটির বৈজ্ঞানিক নাম Tamarindus indica। তেঁতুল পছন্দ করে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া মুশকিল। যদিও গ্রামাঞ্চলের কেউ কেউ মনে করেন, তেঁতুল খেলে রক্ত পানি হয়ে যায়; সে সঙ্গে বুদ্ধিও কমে। এজন্য বাচ্চাদের তেঁতুল খেতে বারণ করা হয়।

গবেষকদের মতামত অনুযায়ী, বাস্তবে ঠিক উল্টো। ইউনানি, আয়ুর্বেদি, হোমিও এবং অ্যালোপ্যাথিক ওষুধের কাঁচামাল হিসেবে তেঁতুল সমাদৃত। এর পাকা ফল হৃদরোগের জন্য উপকারী। এছাড়াও তেঁতুল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং রক্ত পরিষ্কার করে। মস্তিষ্কে চিন্তা করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। কাঁচা তেঁতুল খেতে টক, পাকা ফল টক-মিষ্টির এক ভিন্ন স্বাদ।

পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে, প্রতি ১০০ গ্রাম ভক্ষণযোগ্য কাঁচা তেঁতুলে ক্যালসিয়াম আছে ২৪ মিলিগ্রাম এবং পাকা তেঁতুলে রয়েছে ১৭০ মিলিগ্রাম। আয়রনের পরিমাণ কাঁচাফলে ১ মিলিগ্রাম এবং পাকাফলে আছে ১০.৯ মিলিগ্রাম করে।

কাঁচা তেঁতুলে অন্য পুষ্টি উপাদানগুলো হলো- ১.১ গ্রাম আমিষ, ১৩.৯ গ্রাম শর্করা, ০.২ গ্রাম চর্বি, ০.০১ মিলিগ্রাম ভিটামিন-বি১, ০.০২ মিলিগ্রাম ভিটামিন-বি২, ৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ১.২ গ্রাম খনিজ লবণ এবং খাদ্যশক্তি আছে ৬২ কিলোক্যালরি।

পাকা তেঁতুলে পুষ্টির পরিমাণ অনেক বেশি। এর প্রতি ফলে ৩.১ গ্রাম আমিষ, ৬৪.৪ গ্রাম শর্করা, ০.১ গ্রাম চর্বি, ০.০৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন-বি২, ৩ মিলিগ্রাম ভিটামিন-সি, ০.১ মিলিগ্রাম ভিটামিন-ই, ১১৩ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ২৮ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৬২৮ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম, ৯২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১.৩ মিলিগ্রাম সিলিনিয়াম, ০.১২ মিলিগ্রাম দস্তা, ০.৮৬ মিলিগ্রাম তামা এবং খাদ্যশক্তি আছে ২৮৩ কিলোক্যালরি।

চলুন জেনে নিই তেঁতুলে অবিশ্বাস্য স্বাস্থ্য উপকারিতা-

হার্ট ঠিক রাখে
দেখা গেছে তেঁতুল খুবই হার্ট ফ্রেন্ডলি। এতে উপস্থিত ফ্ল্যাভরনয়েড ব্যাড কোলেস্টেরল কমায় এবং গুড কোলেস্টেরল বাড়ায়। এছাড়াও রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড (এক ধরনের ফ্যাট) জমতে দেয় না। এতে উপস্থিত উচ্চ পটাশিয়াম রক্তচাপ কম করতে সাহায্য করে।

হজম শক্তি বাড়ায়‚ কোষ্ঠকাঠিন্য তাড়ায়
পেট ব্যথা বা কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো সমস্যা থেকে সমাধান পেতে চাইলে তেঁতুলের সাহায্য নিন। তেঁতুলের মধ্যে টার্টারিক অ্যাসিড‚ ম্যালিক অ্যাসিড ও পটাশিয়াম রয়েছে, যা কোষ্ঠন্যকাঠিন্য দূর করে। আয়ুর্বেদে তেঁতুল পাতা ডায়রিয়া সারাতে ব্যবহার হয়। এছাড়া তেঁতুল গাছের ছাল ও শিকড় পেটের ব্যথা সারাতে ব্যবহার করা হয়।

ত্বক উজ্জ্বল করে
তেঁতুলে উপস্থিত হাইড্রক্সি অ্যাসিড ত্বকের এক্সফলিয়েশন করতেও সাহায্য করে। যার ফলে মরা কোষ উঠে যায় এবং ত্বক উজ্জ্বল দেখায়।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে
তেঁতুলের বীজ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম। এছাড়াও রক্তে চিনির মাত্রাও ঠিক রাখে। এতে উপস্থিত এক ধরনের এনজাইম রয়েছে, যা রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

ক্যান্সার রোধ করে
তেঁতুলে উচ্চ পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে, যা কিডনি ফেলিওর ও কিডনি ক্যান্সার রোধ করতে সাহায্য করে।

ওজন কমায়
তেঁতুলে উচ্চমাত্রায় ফাইবার আছে, আর একই সঙ্গে এটা সম্পূর্ণ ফ্যাট ফ্রি। রিসার্চ করে দেখা গেছে রোজ তেঁতুল খেলে ওজন কমে।

ক্ষত সারিয়ে তোলে
তেঁতুল গাছের পাতা ও ছাল অ্যান্টি সেপটিক এবং অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল‚ ফলে ক্ষত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।

লিভার সুরক্ষিত রাখে
তেঁতুল আমাদের লিভার বা যকৃতকেও ভালো রাখে। পরীক্ষা করে দেখা গেছে নিয়মিত তেঁতুল পাতা ব্যবহার করে উচ্চমাত্রায় মদ্যপানের ফলে ড্যামেজড লিভার অনেকটা সেরে উঠেছে।

সর্দি-কাশি সারাতে সাহায্য করে
তেঁতুল অ্যালার্জি প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। এছাড়া এতে উপস্থিত ভিটামিন সি শরীরের ইমিউনিটি বাড়ায়।

 

টাইমস/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ