‘আবরার হত্যাকাণ্ড: উচ্ছৃঙ্খলতার চরম বহি:প্রকাশ’

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ড ছাত্রদের উচ্ছৃঙ্খলতার চরম বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম।

বুধবার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।

মনিরুল ইসলাম বলেন, নির্মম ওই হত্যাকাণ্ডের জন্য ‍বুয়েট হল প্রশাসনের গাফিলতিও রয়েছে। তারা যদি সতর্ক হতো তবে উচ্ছৃঙ্খলতা এড়ানো যেত। এ রকম হত্যাকাণ্ড ঘটতো না। আবরার হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় করা তদন্তে এসবই উঠে এসেছে বলে জানান পুলিশের এই উর্ধতন কর্মকর্তা।

তিনি জানান, বুয়েটের ওই হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে সরাসরি মারপিটে অংশ নিয়েছিল ১১ জন। বাকী ১৪ জন ঘটনাস্থলে না থেকেও ভূমিকা রেখেছে। তারা হত্যায় মদদ দিয়েছে, নির্দেশনা দিয়েছে এবং পরিকল্পনা করেছে। ভিডিও ফুটেজ, প্রযুক্তিগত সহায়তা, হলের স্টাফ, নাইটগার্ড ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার হওয়া আসামীদের মধ্যে আদালতে ৮ জন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আবার অনেকে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে না চাইলেও তারা পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি ‍দিয়েছে। অর্থাৎ নিখুতভাবে এই মামলার চার্জশিট প্রস্তুত করে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

শিবির সন্দেহে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একক কোনো কারণে আবরার হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। হত্যাকারীরা বুয়েটের ছাত্র হলেও এরা র‌্যাগিং করত এবং উচ্ছৃঙ্খল হয়ে উঠেছিল। ছোট খাটো বিষয়ে কেউ দ্বিমত করলে, তাদের সালাম না দিলে, সমীহ করে না চললে, অকারণে হাসি ঠাট্টা করলে তারা অন্যান্য ছাত্রদের ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখত। নানা কারণে বহুদিন থেকে এরা উচ্ছৃঙ্খল চরম পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিল। তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটে আবরার হত্যার মধ্য দিয়ে। তারা কথিত শিক্ষা দেওয়ার নাম করে একজনের ওপর অত্যাচার করে। তারা মনে করে, একজনকে শায়েস্তা করতে পারলে বাকীরা এমনিতেই সোজা হয়ে চলবে। এজন্য অনেককে মাঝেমধ্যেই মারপিট করত।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০১১ নম্বর কক্ষে রাত ১০টার দিকে মারপিট শুরুর পর রাত আড়াইটার দিকে ডাক্তার গিয়ে আবরারকে মৃত ঘোষণা করে। তার আগে বাইরের কেউ জানত না।

বিশ্বজিতকে প্রকাশ্যে কোপানোর পরও আসামীদের শাস্তি হয়নি, আবরারের হত্যাকারীদের ক্ষেত্রে কি আদৌ শাস্তি হবে বলে মনে করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে মনিরুল বলেন, ‘বিশ্বজিতকে প্রকাশ্যে যারা কুপিয়েছে তাদের শাস্তি বহাল আছে। যারা সরাসরি জড়িত ছিল না তারা কেউ কেউ উচ্চ আদালতে গিয়ে শাস্তি কমিয়েছে। আবরারের বেলায় আশা করছি তেমনটি হবে না। কারণ ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও আগের চেয়ে তদন্তের দিক দিয়ে অনেক শক্তিশালী হয়েছে। নতুন নতুন প্রযুক্তিগত সহায়তা নিয়ে ঘটনা প্রমাণের চেষ্টা করা হয়েছে।’

আবরারকে কেন ডেকে নিয়ে গিয়েছিল, তদন্তে কি জানতে পেরেছেন? এর জবাবে মনিরুল ইসলাম জানান, তারা মনে করত, আবরারের আচরণগত সমস্যা ছিল, সালাম দিতো না, সব সময় তীর্যক মন্তব্য করত, হাসি ঠাট্টা করত, তার চলনে শিবির বা হিযবুত তাহরীর করে এমন সন্দেহে আবরারকে রাত ৮টার দিকে ডেকে নিয়ে যায় হত্যাকারীদের কয়েকজন। মূলত উচ্ছৃঙ্খলতার চরম মাত্রায় পৌঁছানোর কারণেই এরকম একটি মর্মান্তিক হত্যার ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে এ হত্যাকাণ্ডে বুধবার মোট ২৫ জনের নামে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এর মধ্যে ১৯ জন এজাহারের অন্তর্ভুক্ত আর অন্য ৬ জন এজাহার বহির্ভূত। ১৯ জনের মধ্যে ১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আর বাকী ৩ জন (জিসান, তানিম ও মোরশেদ) পলাতক রয়েছে। এজাহার বহির্ভূত ৬ জনের মধ্যে ৫ জন গ্রেপ্তার হয়েছে, বাকী একজন (মুজতবা রাফি) পলাতক রয়েছে। মামলায় ৩১ জনকে সাক্ষী করা হয়েছে।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবরার হত্যাকান্ডের পর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম যে, হত্যার সঙ্গে জড়িত সকলকে আইনের আওতায় নিয়ে আসব। সেই প্রতিশ্রুতির অংশ হিসেবে আজ আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সাক্ষীর সাক্ষ্য, বিভিন্ন আলামত প্রযুক্তিগত সাক্ষ্য ও অন্যান্য সাক্ষ্য প্রমাণের ভিত্তিতে এ চার্জশিট প্রস্তুত করা হয়েছে’। 

 

টাইমস/এমএস 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
বরখাস্ত হলেন থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা Jul 01, 2025
img
আমার বিশ্বাস রিয়ামনি আর এমন ভুল করবে না: হিরো আলম Jul 01, 2025
‘১৪০০ শহীদ আন্দোলনের সবচেয়ে বড় মাস্টারমাইন্ড’ Jul 01, 2025
img
৫ লাখ ‘ওয়ার্ক পারমিট ভিসা’ দেওয়ার ঘোষণা ইতালির Jul 01, 2025
img
খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রপতি করার দাবি জানালেন পিনাকী! Jul 01, 2025
img
মায়ামি ছাড়ছেন মেসি, গন্তব্য ইউরোপ! Jul 01, 2025
img
চট্টগ্রাম বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে সিদ্ধান্ত আগামীকাল বুধবার: নৌ উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
শাহজালাল বিমানবন্দরে বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা, স্ক্যানিংয়ে কড়াকড়ি Jul 01, 2025
আসছে জুলাই ঘোষণা: স্থগিত হতে পারে সংবিধান, সরকারে রথবদলের ইঙ্গিত Jul 01, 2025
img
চট্টগ্রামের সাবেক ডিআইজিসহ আরও ৩ পুলিশ কর্মকর্তা বরখাস্ত Jul 01, 2025
img
ইরাকের উত্তরাঞ্চলে কিরকুক বিমানবন্দরে রকেট হামলা Jul 01, 2025
img
অভিনয় থেকে দুই মাস দূরে থাকবেন জোভান Jul 01, 2025
img
নির্বাচনী বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা হবে না: অর্থ উপদেষ্টা Jul 01, 2025
img
শিগগিরই ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে যাচ্ছে ইরান: আব্বাস আরাঘচি Jul 01, 2025
‘আমরা একদলীয় দেশের বাসিন্দা’: ইলন মাস্ক Jul 01, 2025
img
উন্মুক্ত স্থানে ধূমপান সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করল ফ্রান্স Jul 01, 2025
img
সব আওয়ামী লীগারেরাই মেন্টালি সিক, তাদের থেরাপি ও রিহ্যাবে পাঠানোর পরামর্শ পিনাকির Jul 01, 2025
img
সবচেয়ে বেশি প্রযুক্তিনির্ভর হজ আয়োজন ২০২৫ সালে Jul 01, 2025
img
জুনে রেমিট্যান্সে রেকর্ড, ২৯ দিনেই এসেছে ২৭০ কোটি ডলার Jul 01, 2025
img
'সৌদি আরবই এখন আমার ঠিকানা' Jul 01, 2025