তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফেরাতে শুরু আপিল শুনানি

বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরাতে আপিল শুনানি শুরু হয়েছে। আজ মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকাল ৯টা ৪০ মিনিটে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করছেন আইনজীবী ড. শরীফ ভূঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান শুনানি করবেন।

এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গত বছর ২৭ আগস্ট থেকে অক্টোবরের মধ্যে আবেদন করেন বিভিন্ন ব্যক্তি। এসব আবেদনে প্রাথমিক শুনানির পর একটি আবেদনে আপিলের অনুমতি দেন।
ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছর ১৭ ডিসেম্বর পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু অংশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। পঞ্চদশ সংশোধনীর যেসব অংশ অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হয়, তার মধ্যে ত্রয়োদশ সংশোধনী অর্থাৎ তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করার অংশটিও আছে।

হাইকোর্টের এই রায়ের পর সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান স্বয়ংক্রিয়ভাবে পুনর্বহাল বা পুনঃস্থাপন হওয়ার কথা। কিন্তু তা হয়নি।

১৪ বছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে রায় দিয়েছিলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ। পরে এ রায় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়।
খায়রুল হকের বিরুদ্ধে রায় পরিবর্তনের অভিযোগ ওঠে। জুলাই অভ্যুত্থানে গত বছর শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৪ বছর আগের বিতর্কিত রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে গত বছর ২৭ আগস্ট আবেদন করেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ ব্যক্তি।

পরে ১৭ অক্টোবর আবেদন করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এর পাঁচ দিন পর ২৩ অক্টোবর আরেকটি আবেদন করেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এ ছাড়া আরেকটি আবেদন করেন।এরপর আরো দুটি আবেদন করা হয়।

রিভিউ আবেদনে আপিল করার অনুমতি দিয়ে আপিল শুনানি হবে, নাকি রিভিউ আবেদনেই চূড়ান্ত শুনানি করে আদালত সিদ্ধান্ত জানাবেন, এ নিয়ে দুই দিন শুনানির পর গত ২৭ আগস্ট প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন সাত বিচারপতির আপিল বেঞ্চ সিদ্ধান্ত দেন। ছয়টি আবেদনের মধ্যে একটি আবেদনে আপিলের অনুমতি দিয়ে চারটি আবেদন এর সঙ্গে যুক্ত করে দেন সর্বোচ্চ আদালত। একটি আবেদন কার্যতালিকা থেকে বাদ দেওয়া দেওয়া হয়।

 ১৯৯৪ সালে ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকারের অধীনে মাগুরা-২ আসনের উপনির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ ওঠার পর বিরোধী দলগুলো আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে নামে। রাজনৈতিক দলগুলোর আন্দোলনের চাপে ১৯৯৬ সালে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী আনে বিএনপি সরকার। ওই বছর ২৭ মার্চ সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির প্রবর্তন ঘটে। এরপর এই পদ্ধতির অধীনে ১৯৯৬ সালে সপ্তম, ২০০১ সালে অষ্টম এবং ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থাকে অগণতান্ত্রিক ও সংবিধানবহির্ভূত আখ্যা দিয়ে আইনজীবী এম. সলিমউল্যাহসহ তিন আইনজীবী হাইকোর্টে একটি রিট করেন। শুনানির পর তিন বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ ২০০৪ সালের ৪ আগস্ট রায় দেন। রায়ে বলা হয়, ত্রয়োদশ সংশোধনী সংবিধানসম্মত ও বৈধ। এই সংশোধনী সংবিধানের কোনো মৌলিক কাঠামোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেনি।

এরপর সংঘাতময় পরিস্থিতিতে ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে সেনাবাহিনী। জারি করা হয় জরুরি অবস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করা হয়। সেনাবাহিনীর সমর্থনে এই তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রায় দুই বছর ক্ষমতায় থাকার পর এই ব্যবস্থার দুর্বলতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এর পরও ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হয়। ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোট। ওই বছর রিট আবেদনকারীরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। ২০১০ সালে আপিলে শুনানি শুরু হয়। সর্বোচ্চ আদালত এ মামলায় অ্যামিকাস কিউরি (আদালতকে সহায়তাকারী) হিসেবে দেশের আটজন সংবিধান বিশেষজ্ঞের বক্তব্য শোনেন।

তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন। এমনকি সে সময়ের অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমও তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার পক্ষে মত দেন। প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকসহ আপিল বিভাগে তখন সাতজন বিচারপতি ছিলেন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে রায়ের জন্য দিন ঠিক হলে ছয় বিচারপতির তিনজনই অ্যামিকাস কিউরিদের পক্ষে একমত হন। অন্য তিন বিচারপতি ভিন্নমত তুলে ধরেন। এমন পরিস্থিতিতে প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ বি এম খায়রুল হকের হাতে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা ছিল। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে ২০১১ সালের ১০ মে রায় ঘোষণা করেন।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সিলেটে জামায়াত আমিরের গাড়িবহরে হামলা Oct 21, 2025
img
আইআরআই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছে বিএনপি Oct 21, 2025
img
রাজধানীতে ছাত্রলী‌গের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার Oct 21, 2025
img
এবার একীভূত হবে দুর্বল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও! Oct 21, 2025
img
বাড়ল এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া ভাতা, প্রজ্ঞাপন শিগগির Oct 21, 2025
img
সিরিজ জয়ের মিশনে টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিল বাংলাদেশ Oct 21, 2025
img
সিলেট নগরে রাস্তার পাশে ২৫ গজের মধ্যে গাড়ি রাখলেই দণ্ড Oct 21, 2025
img
সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল বাংলাদেশি যুবকের Oct 21, 2025
img
বেনাপোল বন্দরে আজ আমদানি-রপ্তানি বন্ধ Oct 21, 2025
img
হ্যাঁ বা না বলে ফাইল ছেড়ে দিন প্লিজ, প্রধান উপদেষ্টাকে সারজিসের অনুরোধ Oct 21, 2025
img
যেখানে আগুন লেগেছে সেটি কাস্টমস ও বিমানের আওতাধীন : বেবিচক চেয়ারম্যান Oct 21, 2025
img
মতিঝিলে মেট্রোরেল স্টেশনের পাশের ভবনে আগুন Oct 21, 2025
সহপাঠীদের সহযোগিতা চাইলেন রাকসুর সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক জোহা Oct 21, 2025
রাবিতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজের আহ্বান জানালেন এজিএস সাব্বির Oct 21, 2025
img
গরুর মাংস নিয়ে ট্রাম্পের পরিকল্পনায় ক্ষুব্ধ মার্কিনিরা Oct 21, 2025
img
জবি ছাত্রদল নেতা জুবায়েদ হত্যার সব আসামি গ্রেপ্তার Oct 21, 2025
img
লিভারপুলের কোচ হিসেবে ফিরবেন ক্লপ! Oct 21, 2025
img
ড্রেসিং রুমে ধর্মীয় চর্চার কারণেই অধিনায়কত্ব গেল রিজওয়ানের দাবি রশিদ লতিফের Oct 21, 2025
img
রেলের ঊর্ধ্বতনদের সঙ্গে বিকেলে বসছেন টিএলআররা Oct 21, 2025
img
রাজধানীতে আওয়ামী লীগের আরও ৬ নেতাকর্মী গ্রেপ্তার Oct 21, 2025