মানবতাবিরোধী অপরাধ

শেখ হাসিনা ও কামালসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে রায়ের তারিখ ধার্য হতে পারে আজ

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় স্বৈরশাসক শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার তারিখ আজ বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) ধার্য হতে পারে।

বুধবার (২২ অক্টোবর) বিকেলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।

তিনি বলেন, ‘মামলায় পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) এবং উপস্থিত রাজসাক্ষী (আসামি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ হয়েছে। প্রসিকিউশনের পক্ষে আমরা জবাব দেবো। তবে কিছু অংশ আমরা উপস্থাপন করে জবাব দিয়েছি। বৃহস্পতিবার চিফ প্রসিকিউটর ও অ্যাটর্নি জেনারেল সমাপনী বক্তব্য রাখবেন। এরপর আনুষ্ঠানিকভাবে এ মামলার রায়ের জন্য দিন ধার্য হবে।’

বিকেল সোয়া ৩টার দিকে আসামিপক্ষে যুক্তিতর্ক শেষ করেন স্টেট ডিফেন্স আইনজীবী মো. আমির হোসেন। টানা তিনদিনের যুক্তি উপস্থাপন শেষে নিজের মক্কেলদের নির্দোষ দাবি করে খালাসের আবেদন করেন তিনি।

দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সোয়া ৩টা পর্যন্ত ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে তার যুক্তিতর্ক চলে।

সাক্ষীদের জবানবন্দি নিয়ে আজ যুক্তি খণ্ডন করেন আমির হোসেন। বিশেষত রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, দৈনিক আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলামসহ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের সাক্ষ্য সামনে আনেন।

একইসঙ্গে তাদের দেওয়া সাক্ষ্য প্রত্যাখ্যান করেন। এমনকি অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে এ মামলার রাজসাক্ষী মামুন বাঁচতে চাইছেন বলেও উল্লেখ করেন। এছাড়া মাহমুদুর রহমান ভিন্ন মতাদর্শী হওয়ায় শেখ হাসিনাকে দেখতে পারেন না বলেই জবানবন্দি দিয়েছেন বলে মন্তব্য করেন। তার সাক্ষ্য এ মামলায় প্রভাব পড়বে না বলেও যুক্তি দেখিয়েছেন এই আইনজীবী। পরে যুক্তি উপস্থাপন করেন রাজসাক্ষী মামুনের আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।

ট্রাইব্যুনালে প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম, প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম, ফারুক আহাম্মদ, মঈনুল করিম, সুলতান মাহমুদসহ অন্যরা।

গত মঙ্গলবার দুপুরের পর দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তি উপস্থাপন করেন আমির হোসেন। ওই দিন সুপিরিয়র কমান্ড রেসপনসিবিলিটি নিয়ে বর্ণনা তুলে ধরেন তিনি। ২০ অক্টোবর পলাতক আসামিদের পক্ষে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত এই আইনজীবী। তিনি নিজের যুক্তিতর্কে শেখ হাসিনা ও কামালের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষে আনা অভিযোগসহ বিভিন্ন বক্তব্যের বিরোধিতা করেন। এছাড়া আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইন, আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামল, একাত্তরের পটভূমি, শাপলা চত্বরে হত্যাযজ্ঞ ও ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের কথা তুলে ধরেন।

এর আগে, ১৬ অক্টোবর টানা পাঁচদিনের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে প্রসিকিউশন। ওইদিন হাসিনা-কামালের চরম দণ্ড (মৃত্যুদণ্ড) চেয়ে ট্রাইব্যুনালে আবেদন জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। একইসঙ্গে রাজসাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের শাস্তির বিষয়টি আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর ছেড়ে দেন তিনি।

টানা পাঁচদিনের যুক্তিতর্কে একাত্তর-পরবর্তী আওয়ামী লীগের ইতিহাসসহ ২০০৯ থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত শেখ হাসিনা সরকারের শাসনামলের চিত্র তুলে ধরেন তিনি। গুম-খুন, হত্যাযজ্ঞের বর্ণনাও দেন তিনি। এছাড়া এ মামলায় গুরুত্বের প্রেক্ষিতে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়।

গত ৮ অক্টোবর মামলার মূল তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীরকে তৃতীয় দিনের মতো জেরা শেষ করেন শেখ হাসিনা ও কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। এরপর যুক্তিতর্কের জন্য দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল-১। এ মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।

এ মামলায় সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকেও আসামি করা হয়েছে। তবে নিজের দায় স্বীকার করে রাজসাক্ষী হয়ে ট্রাইব্যুনালে এরই মধ্যে সাক্ষ্য দিয়েছেন তিনি। গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনা, কামাল ও মামুনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।

এ মামলায় তাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ মোট আট হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার।

এর মধ্যে তথ্যসূত্র দুই হাজার ১৮ পৃষ্ঠার, জব্দতালিকা ও দালিলিক প্রমাণাদি চার হাজার পাঁচ পৃষ্ঠার ও শহীদদের তালিকার বিবরণ দুই হাজার ৭২৪ পৃষ্ঠার। সাক্ষী করা হয়েছে ৮১ জনকে। গত ১২ মে চিফ প্রসিকিউটরের কাছে এ মামলার প্রতিবেদন জমা দেয় ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।

এমআর 

Share this news on:

সর্বশেষ

তরুণী ভক্তদের চাপে বাড়ি থেকে লুকিয়ে বের হতেন হৃতিক Dec 08, 2025
দুই বছরের সম্পর্কের খোলামেলা স্বীকৃতি দিলেন আমির খান Dec 08, 2025
বাংলাদেশের বিপক্ষে নতুন ভেন্যুতে টেস্ট খেলবে অস্ট্রেলিয়া Dec 08, 2025
আদর্শ মাকে সম্মাননা দিল পালপাড়া সরকারি প্রাইমারি স্কুল Dec 08, 2025
সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি শিক্ষার্থীদের দাবি কী? Dec 08, 2025
রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে ইউক্রেনের ৭০ হাজার নারী সেনা Dec 08, 2025
img
বার্সেলোনা ছাড়ার গুঞ্জন উড়িয়ে দিলেন রাফিনিয়া Dec 08, 2025
img
কবে বিয়ের পিঁড়িতে বসছেন মধুমিতা? Dec 08, 2025
img
ভারতীয় পাসপোর্টকে বৈধ স্বীকৃতি দিচ্ছে না চীন, ভ্রমণে সতর্কতা জারি Dec 08, 2025
img
জাপানে ৭.৬ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পের পর সুনামির আঘাত Dec 08, 2025
img
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল, রাতে মেডিকেল বোর্ড বৈঠক Dec 08, 2025
img
বিপিএলে রাজশাহী দল নিয়ে সুখবর দিলেন হেড কোচ হান্নান সরকার Dec 08, 2025
img
রাতের তাপমাত্রা কমার ইঙ্গিত, বাড়ছে শীতের তীব্রতা Dec 08, 2025
img
'তেরে ইশক মেঁ'–র সাফল্যের পর গ্লোবাল মঞ্চে কৃতি Dec 08, 2025
img
দর্শকের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে বাঘি ফোর Dec 08, 2025
img
১৯৮৮ সালে আমার মার্কা ছিল সাইকেল: মির্জা ফখরুল Dec 08, 2025
img
আইসিসি ইভেন্টে রান না পাওয়া নিয়ে তানজিদ তামিমের মন্তব্য Dec 08, 2025
img
দীর্ঘ বিরতির পর আদিত্যকে নিয়ে ক্যামেরায় ফিরছেন মোহিত সুরি Dec 08, 2025
img
বিশ্বকাপ জয়ী হকি দলকে বিসিবির অভিনন্দন Dec 08, 2025
img
জাপানে ৭.৬ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প, সুনামি সতর্কতা Dec 08, 2025