মা ইলিশের প্রজনন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকাসহ ইলিশের সব অভয়াশ্রম এবং বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় সব ধরনের মাছ ধরার ওপর ২২ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দিবাগত রাতে শেষ হয়েছে।
এতে মাছ ধরার জাল-ট্রলার মেরামতসহ সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন ভোলার কর্মহীন থাকা ২ লক্ষাধিক জেলে। নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত মাছ পেয়ে তা বিক্রি করে বিগত দিনের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা করছেন জেলেরা।
ভোলা জেলা মৎস্য বিভাগের তথ্যমতে, গত ২১ দিনে ভোলা সদর, দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন, তজুমদ্দিন, চরফ্যাশন ও মনপুরাসহ জেলার ৭ উপজেলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীতে জেলা প্রশাসন, মৎস্য বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে ৪৯৪টি যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়েছে।
এই অভিযানে প্রায় দুই শতাধিক অসাধু জেলেকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ১১৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় তাদের কাছ থেকে ৩ টন ৫৭৯ কেজি ইলিশ, ৪৩ লাখ ৮২৪ মিটার কারেন্ট জাল ও ৯টি বোট জব্দ করা হয়েছে।
জব্দকৃত জাল আগুনে পুড়িয়ে বিনষ্ট করা হয়েছে। ইলিশ স্থানীয় মাদ্রাসায় বিতরণ করা হয়েছে এবং জব্দকৃত বোট নিলামে বিক্রি করেছে মৎস্য বিভাগ।
সরেজমিনে ভোলা সদর উপজেলার তুলাতুলি, ভোলার খাল, দৌলতখানের মেদুয়াসহ কয়েকটি নদী তীরবর্তী এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মা ইলিশের প্রজনন নিশ্চিতে নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার ওপর সরকার ঘোষিত ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা মধ্যরাতে শেষ হওয়ার খবরে জেলেরা তাদের মাছ ধরার জাল-ট্রলার নদী তীরে প্রস্তুত করে রেখেছেন। আবার কেউ কেউ শেষ মুহূর্তে নদীতে যাওয়ার জন্য জাল-ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। আড়তদাররা আড়ত ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার করেছেন।
জেলে মো. আব্বাস মাঝি, শাহে আলম, মো. বিল্লাল ও রফিজল মাঝি গণমাধ্যমকে বলেন, নদীতে মাছ ধরাই আমাদের একমাত্র পেশা। মাছ ধরার মাধ্যমেই আমাদের রুটিরুজির ব্যবস্থা হয়। এ বছরের শুরু থেকেই নদীতে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাইনি। আড়তদার, এনজিও এবং স্থানীয়দের থেকে দাদন নিয়ে জাল-ট্রলার তৈরি করেছি, কিন্তু দেনা শোধ করতে পারিনি। এর মধ্যে সরকার ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন, আমরা নিষেধাজ্ঞা মেনে নদী থেকে জাল-ট্রলার নিরাপদ স্থানে উঠিয়ে রেখেছি। এবার জাল-ট্রলার নদী তীরে এনেছি।
জেলে আব্দুল মন্নান, মো. মহিউদ্দিন ও কবির বলেন, ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে সরকার আমাদেরকে শুধু ২৫ কেজি করে চাল দিয়েছে, যা ৮-১০ দিনেই শেষ হয়েছে। বাকি দিনগুলো পরিবার নিয়ে কষ্টে কাটিয়েছি। তবুও সরকারি নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নদীতে মাছ ধরতে যাইনি। আশা করি, নদীতে গিয়ে এবার কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ ইলিশ মাছসহ অন্যান্য মাছ পাব। এতে বিগত দিনের ধারদেনা শোধ করে পরিবার নিয়ে ভালোভাবে দিন কাটাতে পারব।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও মৎস্যজীবী জেলে সমিতির ভোলা জেলা সাধারণ সম্পাদক মো. এরশাদ বলেন, ভোলার জেলেরা নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে মাছ ধরতে প্রস্তুত। নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে জেলেদের জন্য সরকারি সহায়তা ছিল অপর্যাপ্ত, জেলেরা অনেক কষ্টে দিন কাটিয়েছেন। জেলেরা নদীতে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত মাছ পাবে কিনা তা ২-৩ দিন পর বোঝা যাবে।
এদিকে জেলেরা নদীতে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত মাছ পাবেন বলে আশা ভোলা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনের। তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার শুরুতেই জেলেদের সরকারি প্রণোদনার চাল দেওয়া হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে জেলেরা নদীতে গিয়ে কাঙ্ক্ষিত মাছ পাবেন এবং বিগত দিনের ধারদেনা পরিশোধ করতে সক্ষম হবেন। মা ইলিশের প্রজনন নিশ্চিতের লক্ষ্যে ভোলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে রাত-দিন অভিযান চালিয়ে দুই শতাধিক অসাধু জেলেকে আটক করা হয়েছে। এ ছাড়া, বিপুল পরিমাণ জাল ও ইলিশ জব্দ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ৩ অক্টোবর দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে শুরু হওয়া ২২ দিনের এই নিষেধাজ্ঞা শেষ হলো শুক্রবার দিবাগত রাত ১২টায়। এই ২২ দিন ইলিশ শিকার, পরিবহন, মজুদ, ক্রয়-বিক্রয় ও বিনিময়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় সরকার। চলতি অর্থবছরে ভোলায় ইলিশের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। জেলায় সরকারিভাবে নিবন্ধিত জেলে রয়েছেন ১ লাখ ৭০ হাজার ২৮৩ জন এবং বেসরকারি হিসেবে ২ লক্ষাধিক।
পিএ/টিএ