সাবেক সংসদ সদস্য ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক গোলাম মাওলা রনি বলেছেন, ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার চলমান রাখা অপরিহার্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার, আলবদর ও আলশামসরা যে নির্মমতা, খুন-ধর্ষণ চালিয়েছে তার বিচার বাদ দিলে জাতি পুনরায় মর্যাদা ফিরে পাবে না।’
বুধবার (২৯ অক্টোবর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে গোলাম মাওলা রনি এসব কথা বলেন। গোলাম মাওলা রনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালীন বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের (আইসিটি) মাধ্যমে কিছু অপরাধের খণ্ডিত বিচার হয়েছে।
তবে জামায়াতসহ সংশ্লিষ্টরা ওই সময়ে অভিযোগ করে আসছেন যে কিছু মামলা পর্যাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই নেওয়া হয়েছে এবং বিচারের প্রক্রিয়াকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলেছিলেন।’ রনি দাবি করেন, ‘একাত্তরের বিচারে অসামঞ্জস্যতা থাকলে টেলিভিশনে সেই বিষয়ের বিরোধিতা করেছি। তবু একাত্তরের অপরাধকে অস্বীকার করা বা দমন করা সম্ভব নয় এগুলোর ক্ষমা নেই।’
তিনি আরো বলেন, ‘জামায়াত নেতারা রাজনৈতিক প্রতিফলন হিসেবে নিজেদের কর্মকাণ্ডকে ন্যায্যতা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাদের দাবি, পাকিস্তানের অখণ্ডতা রক্ষাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল।’ রনি বলেন, ‘কেবল রাজনৈতিক যুক্তি দিয়ে অসাম্য ও নির্যাতনের হিসাব মিটে যাবে না। একাত্তরের নির্মম অত্যাচারে লক্ষাধিক নারী মর্মান্তিক নির্যাতনের শিকার হন; অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষণের ফলে মহিলারা গর্ভবতী হন, মৃত্যুবরণ করেন বা রোগে আক্রান্ত হন। এসব ঘটনা বহির্বিশ্বে অস্বীকার করা যাবে না।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘জামায়াতের শুধু ক্ষমা চাওয়া কোনো সমাধান নয়। একাত্তরের অপরাধের পূর্ণাঙ্গ বিচার, প্রয়োজন হলে বহু বছর ধরে চলতেই হবে। ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থান ও তার পরবর্তী সময়ের যে দোষীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে তাদেরও আইনি পথে বিচার হওয়া প্রয়োজন।’ রনি মনে করেন, ১৯৭১ ও ২০২৪ এই দুই ঘটনার মধ্যে নীতিগত কোনো পার্থক্য নেই; উভয়ের সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে নতুন ধরনের রাজাকার বা দোসর বাহিনী গড়ে না ওঠে।
পাকিস্তানের সঙ্গে ওই সময়ে অর্থ প্রতারণা ও ক্ষতিপূরণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার সময় পাকিস্তান থেকে যে অর্থ ইউনিয়ন ভাগাভাগি হিসেবে পাওয়া উচিত ছিল তার বর্তমান মূল্য বর্তমানে অনেক গুণ বেড়ে গেছে এবং তা ফেরত দিতে হবে।
পাশাপাশি প্রায় ৩০-৩৫ লাখ বিহারির সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা ১৯৭১ সালে স্বাধীনতার বিরোধিতার কারণে বাংলায় সমস্যা সৃষ্টি করেছিল, তাদের ফেরত পাঠানো ও সমস্যার ন্যায্য সমাধান হওয়া প্রয়োজন।’
রনি বলেন, ‘জামায়াত রাজনীতি করতে পারে; নতুন প্রজন্ম রাজনীতি করুক। তবে পূর্বে যারা অপরাধ করেছেন তাদের প্রতিটি ঘটনা বিচারহীন রাখা হবে না। প্রয়োজনে মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত যে ব্যবস্থা থাকা দরকার, সেই বিচার চলুক; কেয়ামত পর্যন্তও এই বিচার চালিয়ে যাওয়া উচিত।’
এসএস/টিএ