থাইল্যান্ড ভ্রমণ : ব্যাংকক এবং 'রিভার ক্রুজ' (পর্ব-৫)

১৯.১১.২০১৯ তারিখ সকালে উঠে আগের দিনের মত বুফে সিস্টেমে ব্রেক ফাস্ট করলাম জেনিথ সুখোমভিত হোটেলে। এরপরই হোটেল ছাড়বার পালা। আম্মুর কনফারেন্স হোটেলে উঠার তাগিদ ছিল। তাই তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে জেনিথ সুখোমভিত হোটেল থেকে বিদায় নিলাম।

ট্যাক্সিতে উঠার দশ মিনিটের মধ্যে পৌঁছে গেলাম 'Grande Centre Point Ploenchit Hotel ' এ। এই ফাইভ স্টার হোটেলটি অসাধারণ ছিল। ফাইভ স্টারের জন্যই যে অসাধারণ বলছি বিষয়টি সেরকম নয়, হোটেলটির পরিবেশ আসলেই অত্যন্ত মনোরম ছিল।

আমাদের আগের হোটেলটি ফোর স্টার ছিল এবং সেটিও যথেষ্ট সুন্দর ছিল। তবে এই হোটেলের সৌন্দর্যের কাছে সেটি ম্লান হয়ে যায়। আমার কাছে মনে হচ্ছিলো আমি কোন রাজপ্রাসাদে অবস্থান করছি! হোটেলটি ছিল ৩০ তলা। আমরা যে স্যুটে উঠলাম তা ছিল ৫ তলায়।

স্যুটে ঢোকার পর আরও চমৎকৃত হলাম! এত সুন্দরও স্যুট হয়! সর্বাধুনিক সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা এ হোটেলে ছিল। স্যুটে ওঠার পর আম্মু কনফারেন্সে অংশগ্রহণের জন্য চলে গেলেন। বাবা বললেন, 'চলো বাইরে থেকে ঘুরে আসি, কিছু বিশেষ কাজও আছে।'
আমি রাজি হলাম না। আমি বললাম যে আমি কিছুক্ষণ একা এই স্যুটে নিজের মতো থাকতে চাই। বাবা চলে গেলের তার কাজে।

আমি মুগ্ধ হয়ে পুরো স্যুট ঘুরে ঘুরে দেখছিলাম। দুপুরবেলা বাবা এলেন আর বললেন যে সন্ধ্যায় 'রিভার ক্রুজ' ভ্রমণ। তবে এর সাথে সাথে মন খারাপ হল এই জন্য যে আম্মু যেতে পারবেন না। তার সেদিনের কনফারেন্স শেষে থাইল্যান্ডে অবস্থিত নেদারল্যান্ডস এর রাষ্ট্রদূতের বাসায় নিমন্ত্রণ ছিল।

আমি বুঝতে পারছিলাম যে রাষ্ট্রদূতের দেওয়া আমন্ত্রণ রক্ষা করাটা আম্মুর জন্য বেশি জরুরী এবং সম্মানেরও। তারপরও আমার মন চাইছিলো যে আম্মু আমাদের সাথে 'রিভার ক্রুজ' এ অংশগ্রহণ করুক। দুপুরে আমি আর বাবা একটা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্টে(হালাল) খাবার খেলাম। আমি খেলাম স্পেগেটি উইথ বীফ আর বাবা খেলেন বাঙালি খাবার।

এরপর আমরা চলে গেলাম আরেকটি রেস্টুরেন্ট 'মনিকাস কিচেনে'। আগের দিনের মত এখানেও 'রিভার ক্রুজের' প্যাকেজ ট্যুরের ব্যবস্থা করা হয়। তাই সেই রেস্তোরাঁয় গিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম মাইক্রোবাসের জন্য। সন্ধ্যার আগে আগে মাইক্রোবাস আসলো। আমাদের সাথে বেশ কয়েকজন ছিলেন। আমরা মাইক্রোবাসে উঠলাম। রাতের ঝলমলে শহর দেখতে দেখতে ড্রাইভার বিশাল ১৬ তলা বিশিষ্ট 'কার পার্কিং' এর ১৬ তলায় মাইক্রোবাসটি রাখলেন। এরপর একটা শপিংমলে তিনি আমাদের নিয়ে গেলেন।

তখন সন্ধ্যা ৭ টা বাজে। ড্রাইভার আমাদের দুটো টিকেট দিয়ে বললেন ৮ টার দিকে শপিংমলের পাশে অবস্থিত রিভার পোর্টে চলে যেতে। আমরা বেশ কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করলাম। ৮ টার সময় পোর্টে চলে গেলাম। এরপর দেখলাম বিশাল আকারের একটি জাহাজ দাঁড়িয়ে আছে যার নাম White Orchid River Cruise রাতের আঁধারে নদীর উপরে সাদা আর নীল রঙ এর সংমিশ্রণে জাহাজটিকে কি যে অপূর্ব সুন্দর লাগছিলো তা বলে বোঝানো যাবে না, সাথে ছিল পুরো জাহাজ জুড়ে নীল রঙ এর মরিচবাতি যা সত্যিই মন ছুঁয়ে যায়। যেনো স্বপ্নের আলোর পথে আমি উঠছি।

জাহাজটি ছিল তিনতলা বিশিষ্ট। আমরা তিনতলায় উঠলাম। উঠার সময় জাহাজের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কেবিন ক্রুরা আমাদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছিলেন। একদম কিনারের দিকে একটি টেবিলে আমি আর বাবা বসলাম। জাহাজ ছেড়ে দিলো। কি যে ভালো লাগছিলো রাতের শহরটি জাহাজে করে দেখতে! এর আগে আমার কখনও 'রিভার ক্রুজ' ভ্রমণের কোন অভিজ্ঞতা ছিল না।

নদীর দু'ধারেই আকাশচুম্বী অট্টালিকা আর আলো এবং মাঝখানে নদী। বাইরের অট্টালিকাগুলোর আলো, জাহাজের নীল আলো তার সাথে সাথে চাঁদের আলো সব মিলিয়ে এ ছিল এক অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি। জাহাজের ভিতরে লাইভ কন্সার্টের আয়োজনও ছিল। গান শুনতে শুনতে পরিবেশটা উপভোগ করছিলাম।

কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার নিয়ে যেতে বলা হলো। বুফে সিস্টেমের আয়োজন ছিল। অনেক খাবারের সমারোহ ছিল সেখানে। খাওয়া শেষ করে আবার সৌন্দর্য উপভোগে মনোনিবেশ করলাম। পাশ দিয়ে আরও অনেক জাহাজ যাচ্ছিলো। ব্যাংককের অনেক বিখ্যাত জায়গাও দেখলাম। নদীর উপর দিয়ে বেশ কিছু বড় বড় রাস্তাসহ ব্রিজ ছিল। যখনই আমাদের জাহাজটির ব্রিজ অতিক্রম করার সময় হচ্ছিলো তখনই মাইক্রোফোনে সতর্ক করা হচ্ছিলো কেউ যাতে না দাঁড়ায়,সবাই যাতে বসে থাকে।

পুরো ব্যাংকক শহরে ঘুরিয়ে দু'ঘণ্টা পর জাহাজটি আমাদের আবার সেই শপিংমলের পাশে অবস্থিত পোর্টে নামিয়ে দিল। আমাদের ড্রাইভার সেখানে অপেক্ষা করছিলেন। ফিরে এলাম হোটেলে। অসম্ভব সুন্দর একটি সন্ধ্যা কাটিয়ে ছিলাম আমরা।

থাইল্যান্ড ভ্রমণের পরবর্তী পর্ব খুব তাড়াতাড়িই উপস্থাপন করবো।

 

লেখক: শিক্ষার্থী, সংগীত বিভাগ
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়, ত্রিশাল, ময়মনসিংহ।

 

টাইমস/টিএইচ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
গুরুতর অভিযোগে গুগলের বিরুদ্ধে মামলা Sep 15, 2025
img
অন্তর্বর্তী সরকার সংবিধানের মৌলিক রদবদল করার ম্যান্ডেট রাখে না : জিল্লুর রহমান Sep 15, 2025
img
ভারতীয় ক্রিকেটারদের হাত না মেলানোর নেপথ্যে গম্ভীর Sep 15, 2025
img
কাতার একা নয়, ইসলামি বিশ্ব তাদের পাশে আছে: আরব লীগ প্রধান Sep 15, 2025
img
আসছে ‘হেরা ফেরি ৩’, ফেব্রুয়ারি-মার্চে শুরু শুটিং Sep 15, 2025
img
ইনজুরিতে সাকিব, করাতে হবে অস্ত্রোপচার Sep 15, 2025
img
যেখান থেকে মানুষের উত্থান হয়, ওখানেই পতন হয় : গোলাম মাওলা রনি Sep 15, 2025
img
ভ্যালেন্টাইনস ডেতে আসছে শাহিদ-ত্রিপ্তির ‘ও রোমিও’ Sep 15, 2025
img
লি‌বিয়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের জ‌ন্য দূতাবাসের বার্তা Sep 15, 2025
img
হ্যান্ডশেক না করায় ভারতকে ধুয়ে দিলেন শোয়েব আখতার Sep 15, 2025
img
জামায়াত আমিরের সঙ্গে শীর্ষ শিল্প মালিক প্রতিনিধিদের সাক্ষাৎ Sep 15, 2025
img
দাউদকান্দিতে অবৈধ চুন কারখানায় গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন , আটক ৮ Sep 15, 2025
img
১২ তরুণের হাতে ইয়্যুথ অ্যাওয়ার্ড তুলে দিলেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস Sep 15, 2025
img
শেখ হাসিনার মামলায় মাহমুদুর রহমানের সাক্ষ্য শুরু Sep 15, 2025
img
যুবসমাজকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারে না: প্রধান উপদেষ্টা Sep 15, 2025
img

এশিয়া কাপ

হংকংকে হারিয়ে সুপার ফোরে নজর শ্রীলঙ্কার Sep 15, 2025
img
নিউইয়র্কের রাস্তায় রণবীরের হৃদয় ভেঙেছিলেন হলিউডের অভিনেত্রী Sep 15, 2025
img
টিকটক বিক্রি বা বন্ধের সময়সীমা আবারও বাড়াতে পারেন ট্রাম্প Sep 15, 2025
img
চট্টগ্রাম বন্দরে জরিপহীন বালু উত্তোলনের উদ্যোগ Sep 15, 2025
img
প্রথম ঘণ্টায় ২০৯ কোটি টাকার সিকিউরিটিজ লেনদেন Sep 15, 2025