জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রস্তাব বিদ্যমান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক : বাসদ

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাব বিদ্যমান সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে মন্তব্য করেছে জুলাই সনদে স্বাক্ষর না করা দল বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদ (মার্কসবাদী)।

বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলের সমন্বয়ক মাসুদ রানা বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর একমত হওয়া কিংবা না হওয়া সিদ্ধান্তগুলোকে জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে ধরে নেওয়া ঠিক হবে না। জনগণের সার্বভৌম ইচ্ছার প্রকাশ বলতে হলে জনগণের ম্যান্ডেট নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। যে প্রক্রিয়ায় গণভোট আয়োজনের প্রস্তাব করা হচ্ছে, তাকে ম্যান্ডেট নেওয়া বলে না।

জনগণকে মত প্রকাশের স্বাধীনতা দিতেই হবে। তা না হলে, ভবিষ্যতে এটির বৈধতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।

বিবৃতিতে তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠনের লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক সংস্কারের লক্ষ্যে প্রণীত প্রস্তাবনাগুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতপার্থক্য আছে সেটি দূর করে ঐকমত্য সৃষ্টি করা। গণ-অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী হিসেবে আমাদের দল জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কর্তৃক গৃহীত বিশেষ এই উদ্যোগে সমর্থন জানায় এবং ভূমিকা রাখার চেষ্টা করে।

প্রায় ৬ মাস সময় ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সমাজের বিভিন্ন অংশের মানুষের সাথে আলাপ-আলোচনাকে সনদ বাস্তবায়নের প্রস্তাবনার মধ্য দিয়ে কমিশন এক কলমের খোঁচায় উড়িয়ে দিল। এটা আমরা প্রত্যাশা করিনি।

তিনি আরো বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতিতে ঐকমত্য কমিশনের কর্মকাণ্ড নিয়ে একটা অস্বচ্ছতা সৃষ্টি হয়েছে, যা গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্খাকে কোনোভাবেই ধারণ করে না। আমরা এই অগণতান্ত্রিক পথে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া সমর্থন করি না।

এই প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়িত হলে ভবিষ্যতে জুলাই সনদের বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং একটা সাংবিধানিক ও রাজনৈতিক বিপর্যয়ের দিকে আমরা ধাবিত হব।

বাসদ (মার্কসবাদী)’র সমন্বয়ক বলেন, দীর্ঘ আলোচনার যথাযথ প্রকাশ আমরা জুলাই সনদে ও প্রস্তাবিত বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় দেখলাম না। দ্বিতীয় পর্যায়ে প্রায় ২০টি পয়েন্ট নিয়ে ঐকমত্য কমিশনে আলোচনা হলো। কিন্তু পরবর্তীতে আরো ৬৪টি পয়েন্ট যুক্ত করে জুলাই সনদ প্রস্তুত করা হলো। ৮৪টি পয়েন্ট সম্বলিত এই সনদের বিভিন্ন স্থানে অনেকবার সর্বসম্মত কথাটা উল্লেখ করা হলেও এই ৮৪টি পয়েন্ট সর্বসম্মত সনদ নয়।

বিভিন্ন পয়েন্টে মতামত যারা দেয়নি তাদের একমত ধরলেও সর্বসম্মত প্রস্তাবের সংখ্যা ২৯টির বেশি নয়।

প্রধান উপদেষ্টা ঐকমত্য কমিশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বলেছিলেন, সব দল যেসব বিষয়ে একমত হবে, শুধু সেগুলোই ঐক্যমত্য হিসেবে বিবেচিত হবে। সেই হিসেবে যে সিদ্ধান্তগুলো সর্বসম্মত ছিল, সেগুলো নিয়ে সনদ ঘোষিত হলে একে সর্বসম্মত বলা যেত। কিন্তু পুরো সনদ নিজেই স্বাক্ষ্য দেয় যে এটা সর্বসম্মতভাবে প্রণীত হয়নি।

তিনি বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ‘জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫’ বাস্তবায়নে অবিলম্বে সরকারি আদেশ জারি করে একটি গণভোট আয়োজনের সুপারিশ করেছে। প্রস্তাবনা অনুসারে, সনদের ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবের মধ্যে ৪৮টি প্রস্তাবের ওপর গণভোট হবে। এই ৪৮টি প্রস্তাব একটি প্যাকেজের মধ্যে থাকবে। গণভোটে কেউ ‘হ্যাঁ’ ভোট দিলে ধরে নেওয়া হবে, সে ৪৮টি প্রস্তাবকেই সমর্থন করে, কেউ ‘না’ দিলে ধরে নেওয়া হবে, সে কোনটাকেই সমর্থন করে না। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক পরিবর্তন নিয়ে এ ধরনের মতামত নেওয়ার নজির কোথাও নেই। জনগণের মতামত নিতে হলে ৪৮টি পয়েন্টেই আলাদাভাবে তাদের মতামত নিতে হবে।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গণভোটে ‘হ্যাঁ’ বিজয়ী হলে বিভিন্ন পয়েন্টে বিভিন্ন দলের যে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে, তা আর কার্যকর থাকবে না। ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবনাই পাশ হয়েছে ধরে নেওয়া হবে। তাহলে এই ৬ মাসব্যাপী বিভিন্ন দলের আলোচনা, সমালোচনা, মতামত, প্রস্তাবনা, দ্বন্দ্ব ও সমঝোতার কী মূল্য থাকল? প্রায় প্রতিটি দলেরই বিভিন্ন বিষয়ে ‘নোট অব ডিসেন্ট’ আছে। সেইগুলো রেখে রাজনৈতিক দলগুলোই বা কীভাবে এই গণভোটে অংশগ্রহণ করবে? অর্থাৎ প্রায় সব রাজনৈতিক দলকে নিয়ে আলোচনা শুরু করা এই ঐকমত্য কমিশন এই সংস্কার প্রক্রিয়া থেকে দলগুলোকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

বাসদ নেতা মাসুদ রানা বলেন, পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ ২৭০ দিনের মধ্যে সংবিধান সংস্কার সম্পন্ন না করলে সংবিধান সংস্কার বিল পরিষদ কর্তৃক গৃহীত হয়েছে বলে গণ্য হবে এবং সেটি সংবিধান সংস্কার আইনরূপে কার্যকর হবে, বলে কমিশনের সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় সংবিধান সংস্কার একটি খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করবে। ভবিষ্যতে অগতান্ত্রিক শাসন কার্যকরের জন্য এই দৃষ্টান্তই ব্যবহৃত হওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

এছাড়া সনদে উল্লেখ করা হয়েছে, জুলাই সনদের বৈধতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে কোনো আদালতে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না। কিন্তু ‘নোট অব ডিসেন্ট’ থাকা প্রস্তাবগুলো অনুমোদিত ও কার্যকর হলে তা নিয়ে আদালতের শরণাপন্ন হওয়া স্বাভাবিক ও যৌক্তিক।

টিজে/টিএ 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
শব্দদূষণকারীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে হবে: রিজওয়ানা হাসান Dec 15, 2025
img

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

হলান্ডের জোড়া গোলে ক্রিস্টাল প্যালেসকে বড় ব্যবধানেই হারাল ম্যানচেস্টার সিটি Dec 15, 2025
img
আজ ওসমান হাদিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হবে সিঙ্গাপুর Dec 15, 2025
img
১৫ ডিসেম্বর: ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা Dec 15, 2025
img

বুন্ডেসলিগা

টেবিলের তলানির দলের বিপক্ষে কোনোমতে হার এড়াল বায়ার্ন মিউনিখ Dec 15, 2025
img
ভোটাধিকার প্রয়োগ করে প্রবাসীদের দেশ গড়ায় অবদান রাখার আহ্বান Dec 15, 2025
img
সিডনির ঘটনায় প্রশংসায় ভাসছেন মুসলিম ফল ব্যবসায়ী Dec 15, 2025
img
বৃহস্পতিবারের মধ্যে চূড়ান্ত হচ্ছে বিএনপির শরিকদের আসন Dec 15, 2025
img
ওসমান হাদিকে গুলির ঘটনায় মামলা Dec 15, 2025
img
তুরস্কে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত Dec 15, 2025
img
অস্ত্রসহ সাবেক রেলমন্ত্রীর সহচর গ্রেপ্তার Dec 15, 2025
img
প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল হাঙ্গেরি Dec 15, 2025
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ নিয়ে ন্যাটোপ্রধানের মন্তব্য দায়িত্বজ্ঞানহীন: মস্কো Dec 15, 2025
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে যা বললেন ইনকিলাব মঞ্চের জাবের Dec 15, 2025
img
মির্জা ফখরুল ১৬ বছর ঠিকমতো রাতে ঘুমাতে পারেননি : স্ত্রী রাহাত আরা Dec 15, 2025
হাদিকে নিয়ে যা বললেন গোলাম পরওয়ার! Dec 15, 2025
সিরিয়ায় সেনা নিহতের ঘটনায় কঠোর প্রতিশোধের হুমকি ট্রাম্পের Dec 15, 2025
খালেদা জিয়ার সুস্থতায় খিলক্ষেত থানা বিএনপির বিশেষ দোয়া! Dec 15, 2025
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভারতের হাইকমিশনাকে তলব Dec 15, 2025
img
মালদ্বীপ হাইকমিশনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত Dec 15, 2025