জেনে নিন হাঁচি থামানোর উপায়

শীতের মিঠেরোদ, কুয়াশার চাদর, উঠোনের কোণে মাটির চুলায় রান্না, চুলার পাশে বসে বসে হাতের তালু গরম করে নেয়া, চায়ের কাপের সাদাটে ধোঁয়া, হলুদ সর্ষের মাঠ- এসব ছবি আর ছবির পেছনের গল্প আমাদের কাছে খুব বেশি চেনা। তবে এ শুষ্ক আবহাওয়া ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য উপযোগী মৌসুম।

এই মৌসুমে মানুষ ঘনঘন সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত হন। যা আবার সহজে ভালো হতে চায় না। এছাড়া সর্দি-কাশির সঙ্গে থাকে হাঁচি। একবার শুরু হলে যেন থামতেই চায় না।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় হাঁচিকে বলা হয় “Achoo” অথবা “Sternutation”। আর ইংরেজিতে বলা হয় “Sneeze” যা ল্যাটিন শব্দ “Sterno” থেকে এসেছে, এর অর্থ হচ্ছে বিস্তৃত করা, প্রসারিত করা বা ছড়িয়ে দেয়া।

নাকের ভেতরের লোম পার হয়ে যখন কোনো অস্বস্তিকর ধূলা, ফুলের রেণু, ঝালের গুড়া বা অন্য কোনো উপাদান নাকের ভেতরে প্রবেশ করে তখন আমাদের হাঁচি হয়। এছাড়াও সর্দি-জ্বর, অ্যালার্জি ইত্যাদি কারণে বিরামহীন হাঁচি হতে পারে।

শরীর থেকে অস্বস্তিকর উপাদান কিংবা জীবাণু বের করে দেয়ার জৈবিক একটি উপায় এই হাঁচি। তবে অনবরত হাঁচি চলতে থাকলে ব্যাপারটা যেমন বিব্রতকর তেমনি ডেকে আনতে পারে নানান জটিলতাও।

 

চলুন জেনে নিই, হাঁচি থামানোর প্রাকৃতিক উপায়-

কালো জিরার ব্যবহার
কালো জিরা নিয়ে গুড়ো করুন। এরপর এই গুড়ো হাতের তালুতে করে নাকের সামনে নিয়ে তা নিঃশ্বাসের সঙ্গে ভেতরে টেনে নিন। এতে করে হাঁচি আর হবে না।

দস্তা
বিরামহীন হাঁচি হলে দস্তা মানে জিঙ্ক আপনার পরম বন্ধু। প্রচুর পরিমাণে দস্তা আছে এমন খাবার কিংবা ‘সাপ্লিমেন্ট’ যে কোনোটাই বেছে নিতে পারেন।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করায় দস্তা অতুলনীয়। এর প্রাকৃতিক উৎসগুলো বাদাম, শিম ও মটর শুঁটি-জাতীয় খাবারে আছে।

কালো এলাচ
সবার রান্নাঘরেই এলাচ আছে, যা হাঁচি বন্ধ করতে পারে। এলাচের কড়া গন্ধ এবং এতে থাকা ‘এসেন্সিয়াল অয়েল’ ‘মিউকাস’য়ের প্রবাহ রোধ করে এবং অস্বস্তি সৃষ্টিকারী উপাদান বের করে আনে। অ্যালার্জিজনীত হাঁচিতে এটি বিশেষ কার্যকর।

আমলকী
আমলকীর পুষ্টিগুণ সবারই জানা। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে, এতে থাকা শক্তিশালী ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ নাকের রাস্তা পরিষ্কার করে, ফলে হাঁচি থেমে যায়।

আদা ও তুলসী
আদা ও তুলসীর মিশ্রণ সর্দি-জ্বর এবং অ্যালার্জি থেকে আরাম দেয়ার একটি শক্তিশালী উপায়। এজন্য তিন-চারটি তুলসী পাতা ও ছোট এক টুকরা আদা পানিতে ফুটাতে হবে এবং সেই পানি পান করতে হবে।

রসুন
রসুনে রয়েছে এক বিশেষ সক্রিয় উপাদান ‘অ্যালিসিন’, যা বন্ধ নাক খুলে দিতে অত্যন্ত কার্যকর, পাশাপাশি বাড়াবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।

নাক চেপে ধরা
নাকের ডগা চেপে ধরুন এবং টেনে প্রসারিত করুন। তবে যেন সেটা ব্যথাদায়ক না হয়। এভাবে নাকের তরুণাস্থি প্রসারিত করলে হাঁচি থামবে।

নাক ঝাড়ুন
যখন আপনার মনে হবে যে হাঁচি আসছে তখন রুমাল বা টিস্যু নিয়ে নাক ঝাড়ুন। এতে আপনার সাইনাস্কে পরিষ্কার করে হাঁচি থামিয়ে দিবে।

উপরের ঠোঁটে হাল্কা চিমটি দিন
বৃদ্ধা ও তর্জনী আঙুল দিয়ে উপরের ঠোঁটে চিমটি দিয়ে উপরে নাকের দিকে টানুন।

জিহ্বা ব্যবহার করুন
জিহ্বা দিয়ে উপরের পাটির মাঝ বরাবর দুটি দাঁতের পেছনের দিকে জোরে চাপ দিন, যাতে করে মুখের ভেতরে চোয়ালের উপরেও চাপ পড়ে এবং এতে করে আপনার নাকের ভেতরে চুলকানো বন্ধ হয়ে যাবে।

কাতুকুতু দিন
যখন আপনার হাঁচি আসছে তখন জিহ্বার অগ্রভাগ দিয়ে মুখের ভেতরে উপরের দিকে তালুতে কাতুকুতু দিন। যতক্ষণ না পর্যন্ত আপনার হাঁচি দেবার সম্ভাবনা কমে যাচ্ছে, এই পদ্ধতি প্রয়োগ করতে থাকুন।

দুই ভ্রুর মাঝে ধরুন
এটা এমন একটা স্থান যেখানে চাপ সৃষ্টি করলে যেমন মাথাব্যথা কমে, তার সঙ্গে আবার হাঁচি হবার সম্ভাবনাও কমে যায়।

নাকের নিচে চুলকে দিন
মাথা সোজা রেখে আঙুল দিয়ে নাকের নিচে মাঝ বরাবর চুলকান। এতে করে হাঁচির সঙ্গে যেসব পেশি যুক্ত থাকে, তাদের কিছু সংখ্যক পেশি শান্ত হয়ে যাবে।

কানে হাল্কা চাপ দিন
আপনার যদি মনে হয় হাঁচি আসছে, তবে কানের লতি হাত দিয়ে ধীরে ধীরে নাড়ান। অনেক মানুষের সামনে হাঁচি থামাতে বা আড়াল করতে, এটা মনে হতে পারে যে আপনার কান নিয়ে খেলছেন।

রাগ করুন
আপনার দাঁত দৃঢ়ভাবে কামড়ে ধরুন এবং দাঁতের পেছনে জিহ্বা দিয়ে জোরেধাক্কা দিন। এতে করে হাঁচি দেবার উত্তেজনা কমে যাবে।

 

টাইমস/জিএস/টিএইচ

Share this news on:

সর্বশেষ