ট্রাম্প-শি'র বৈঠকের পর সামরিক যোগাযোগ স্থাপন করতে সম্মত চীন-যুক্তরাষ্ট্র

যুক্তরাষ্ট্র ও চীন দুই দেশের নেতাদের মধ্যে অনুষ্ঠিত 'ঐতিহাসিক' বৈঠকের পর সামরিক-থেকে-সামরিক চ্যানেল স্থাপন করতে সম্মত হয়েছে "যেকোনো সমস্যাকে অ-সংঘাতময় করে তুলতে এবং উত্তেজনা প্রশমিত করতে"। এই তথ্য জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ।

শনিবার (১লা নভেম্বর) 'এক্স এ দেওয়া এক বিবৃতিতে পিট হেগসেথ বলেন, এর আগের রাতে চীনা জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডং জুনের সঙ্গে তার ফোনালাপের পর তারা এই সিদ্ধান্ত নেন।

বেইজিং-এর পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। হেগসেথ জানান, ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং শি জিনপিংয়ের দক্ষিণ কোরিয়ায় বৈঠকের পর মালয়েশিয়ায় চীনা মন্ত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাৎ হয়েছিল।

তিনি বলেন, তারা দুজনেই'একমত যে শান্তি, স্থিতিবস্থা এবং সুসম্পর্ক আমাদের দুটি মহান ও শক্তিশালী দেশের জন্য সর্বোত্তম"। তিনি আরও যোগ করেন, "অ্যাডমিরাল ডং এবং আমি এই বিষয়েও সম্মত হয়েছি যে উদ্ভুত যেকোনো সমস্যাকে অ-সংঘাতময় করে তুলতে এবং উত্তেজনা প্রশমিত করতে আমাদের সামরিক-থেকে-সামরিক চ্যানেল স্থাপন করা উচিত।'

বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন ধরে দুই পরাশক্তির মধ্যে সরাসরি সামরিক যোগাযোগের পক্ষে কথা বলে আসছেন, তবে উত্তেজনা হ্রাসের সঙ্গে সঙ্গে এই ধরনের যোগাযোগ অনিয়মিত থেকেছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক থিংক ট্যাঙ্ক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ (CSIS) এর তথ্য অনুযায়ী, ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে (২০১৭-২০২১) ৯০টিরও বেশি যোগাযোগ চ্যানেলের বেশিরভাগই নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছিল। ২০২২ সালে, তৎকালীন মার্কিন হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভস-এর স্পিকার ন্যান্সি পেলোসির তাইওয়ান সফরের পর চীন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সঙ্গে কয়েকটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়। এর ফলে দক্ষিণ চীন সাগর এবং তাইওয়ান প্রণালীতে একাধিকবার দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মধ্যে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়।

২০২৩ সালের নভেম্বরে বাইডেন এবং শি জিনপিং-এর বৈঠকের পর উচ্চ-স্তরের সামরিক-থেকে-সামরিক যোগাযোগ পুনরায় শুরু করতে সম্মতি দেওয়া হয়েছিল, তবে CSIS মে মাসে জানায় যে এই বছরের জানুয়ারিতে ট্রাম্পের ক্ষমতায় ফিরে আসার পর সেই যোগাযোগ 'সীমিত' ছিল।

অক্টোবর ৩০ এ দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত বৈঠকে ট্রাম্প এবং শি জিনপিং উত্তেজনা কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেন। এর মধ্যে ট্রাম্প চীনা পণ্যের উপর শুল্কের হার ৫৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৭ শতাংশ করার ঘোষণা দেন। ট্রাম্প আরও জানান যে চীন রেয়ার আর্থ মেটালের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে সম্মত হয়েছে। তবে, টিকটক বা এনভিডিয়ার চিপস নিয়ে কোনো চুক্তি হয়নি।

ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে তিনি আগামী বছরের এপ্রিলে চীন সফর করবেন এবং শি জিনপিংও তার পরপরই যুক্তরাষ্ট্রে আসবেন। বৈঠকের পরদিন মালয়েশিয়ায় হেগসেথ চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী ডং-এর সাথে দেখা করেন। হেগসেথ জানান, তিনি দক্ষিণ চীন সাগর ও তাইওয়ানের আশেপাশে চীনের কার্যকলাপ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। অপরদিকে, চীনা জাতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানায়, ডং হেগসেথকে বলেছেন যে তাইওয়ানের সঙ্গে একত্রীকরণ একটি "অদম্য ঐতিহাসিক প্রবণতা" এবং যুক্তরাষ্ট্রকে এই বিষয়ে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করেন।

সূত্র: আল আজিরা

এমকে/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অভিষেকের আগেই বরখাস্ত ইতালির অধিনায়ক Dec 18, 2025
img
গান জনপ্রিয় হওয়ায় 'ধুরন্ধর' দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন বাহরিন র‍্যাপার Dec 18, 2025
img
কেউ বাঁধা দিয়ে নির্বাচন আটকে রাখতে পারবে না: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা Dec 18, 2025
img
ধর্মেন্দ্রর শেষ সিনেমার রিলিজ পিছনোর কারণ জানালেন অমিতাভ! Dec 18, 2025
img
তৃণা-ইন্দ্রজিতের সিরিয়ালকে পিছনে ফেলে প্রথমস্থানে ‘পরিণীতা’ Dec 18, 2025
img
নীতীশ কুমারের ক্ষমা চাওয়া উচিত', হিজাবকাণ্ডে গর্জে উঠলেন জাভেদ আখতার Dec 18, 2025
img
ডিসেম্বরের প্রথম ১৭ দিনেই রেমিট্যান্স ছাড়াল ২ বিলিয়ন ডলার Dec 18, 2025
img
জান্নাতারা রুমীর মৃত্যুতে এনসিপির শোক প্রকাশ Dec 18, 2025
img
এনসিপি ও শহিদ পরিবারের সদস্যদের ওপর বিভিন্নভাবে হুমকি আসছে: সামান্তা Dec 18, 2025
img
আইনি জটিলতার মাঝেই নতুন রেস্তরাঁ খুলছেন শিল্পা শেঠি Dec 18, 2025
img
এআই সঙ্গীকে বিয়ে করলেন জাপানি তরুণী Dec 18, 2025
img
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ২৪ ঘণ্টায় প্রাণ গেল ১ জনের, হাসপাতালে ভর্তি আরও ২৪০ Dec 18, 2025
img
রাজধানীর হাতিরঝিলে ককটেল বিস্ফোরণ Dec 18, 2025
img
২৪ ঘণ্টায় ২৬ জন আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেপ্তার Dec 18, 2025
img
যুক্তরাষ্ট্রে এক ফ্রেমে মৌসুমী-শাবনূর! Dec 18, 2025
img
তাইওয়ানে ৫.১ মাত্রার ভূমিকম্প Dec 18, 2025
img
স্লোগানে নাম ব্যবহারের ঘটনায় প্রতিক্রিয়া জানালেন লুৎফুজ্জামান বাবর Dec 18, 2025
ফেনীতে গভীর রাতে গ্রামীণ ব্যাংকে আগুন Dec 18, 2025
img
মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন মির্জা ফখরুল Dec 18, 2025
img
হাদির চিকিৎসা তদারকি করতে সিঙ্গাপুরে পাঠানো হলো পররাষ্ট্র কর্মকর্তাকে Dec 18, 2025