বাস্তববাদী ইশতেহার আর ভিন্নধর্মী প্রচারণায় ভোটারদের মন জয় করেছেন মামদানি

বাস্তববাদী ইশতেহার ও ভিন্নধর্মী প্রচারণা দিয়ে ভোটারদের মন জয় করেছেন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র প্রার্থী জোহরান মামদানি। তার ফলও পেয়েছেন হাতেনাতে। নিউইয়র্কের প্রথম মুসলিম ও দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন তিনি।

মাত্র এক বছর আগেও যে মানুষটিকে যুক্তরাষ্ট্রের খুব বেশি মানুষ চিনতেন না, এখন মামদানিই বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমের খবরের শিরোনাম। তার অবিশ্বাস্য উত্থান ঠেকাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও, কিন্তু তাতেও কাজ হয়নি। জনতার রায়েই নিউইয়র্কের শাসনভার এখন মামদানির হাতে।

কিন্তু তিনি কীভাবে করলেন এই অসাধ্য সাধন? কীভাবে জয় করলেন ভোটারদের মন?

৩৪ বছর বয়সী মামদানির এই জয় শুধু রাজনৈতিক সাফল্য নয়, বরং মার্কিন রাজনীতিতে এক প্রজন্মগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত। নির্বাচনে তার প্রচারণা ছিল বাস্তবধর্মী, বিশ্বাসযোগ্য ও সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে যুক্ত। সোশ্যাল মিডিয়ার ভাইরাল কনটেন্ট, শক্তিশালী মাঠপর্যায়ের প্রচার, আর নানা সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক সব মিলিয়ে লাখ লাখ ভোটার তার দিকে আকৃষ্ট হয়েছে।

মামদানি তার নির্বাচনী ইশতেহারকে নাগরিক জীবনের ব্যয় ও সুবিধার সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত করেছেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন:
ভাড়া স্থগিত করা এবং সাশ্রয়ী আবাসন নির্মাণ, শহরের সবার জন্য সহজলভ্য ও কম খরচে বাস সেবা চালু করা, প্রি-স্কুল এবং শিশুপরিচর্যা সেবাকে সবার জন্য ন্যূনতম স্তরের বিনামূল্য করা, ধনী ও বড় কোম্পানির ওপর কর বাড়িয়ে শহরের বাজেট বাড়ানো।

এই বাস্তবসম্মত এবং সরল বার্তাই ভোটারদের কাছে বোধগম্য ও বিশ্বাসযোগ্য হয়েছে।

মামদানির সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল সোশ্যাল মিডিয়া, বিশেষ করে টিকটক। এখানেই তিনি হয়ে উঠেছেন 'ইন্টারনেটের প্রিয় মেয়র'। ইংরেজির পাশাপাশি বাংলা, হিন্দি ও স্প্যানিশ ভাষায় নিয়মিত পোস্ট করেছেন, যেখানে তিনি কথা বলেছেন বাড়িভাড়া কমানো, ফ্রি বাস সার্ভিস, আর সবার জন্য শিশু পরিচর্যা সেবা চালুর মতো বাস্তব সমস্যা নিয়ে।

এই পোস্টগুলোতে দেখা গেছে তাকে খুব স্বাভাবিকভাবে কখনো সাবওয়েতে খেতে খেতে, কখনো ম্যানহাটনের রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে, আবার কখনো কনি আইল্যান্ডে পানিতে ঝাঁপ দিতে। এই সহজ, অনাড়ম্বর লাইফস্টাইল তার প্রতি অনেক তরুণ ভোটারকে আকৃষ্ট করেছে।

একটি বিতর্কে অ্যান্ড্রু কুয়োমোর কেলেঙ্কারি নিয়ে মামদানির মন্তব্য ভাইরাল হয়, যা এক কোটিরও বেশি মানুষ দেখেছেন। এতে বহু তরুণ টিকটক ব্যবহারকারী তার সমর্থনে প্রচারণায় যোগ দেন।

ডিজিটালের পাশাপাশি মামদানির মাঠের প্রচারণাও ছিল ব্যতিক্রমী। তিনি এক সপ্তাহান্তে একা পুরো ম্যানহাটন হেঁটে ঘুরেছেন। সেই ভিডিও অনলাইনে লাখ লাখ মানুষ দেখেছে। এতে ভোটারদের কাছে তিনি 'সহজে পৌঁছানো যায়' এমন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত হন।

তার দল ও স্বেচ্ছাসেবকেরা ১০ লাখেরও বেশি বাড়িতে কড়া নেড়েছেন। তারা এমন এলাকাতেও গেছেন, যেখানে আগে ট্রাম্পপন্থিরা শক্ত অবস্থানে ছিল। মামদানি নিজে মসজিদে গিয়ে মুসলিম ভোটারদের সঙ্গে কথা বলেছেন এবং ভোট নিবন্ধন অভিযানে অংশ নিয়েছেন। এর ফলে কুইন্স ও ব্রক্সে নতুন ভোটারের সংখ্যা অনেক বেড়েছে।

পলিটিকোর মতে, মামদানির জয় সম্ভব হয়েছে দুটি কারণে নিজের সমর্থকদের সক্রিয় করা এবং নতুন ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ানো।

তিনি ব্রুকলিন ও কুইন্সের শিক্ষিত ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছ শ্বেতাঙ্গ ভোটারদের ভোট দিতে উৎসাহিত করতে পেরেছেন। একই সঙ্গে, এশীয় এবং মুসলিম ভোটারদের কাছে পৌঁছেছেন।

হিস্পানিক ভোটারদের জন্য স্প্যানিশ ভাষায় বিজ্ঞাপন চালিয়েছেন এবং প্রায় দুই হাজার স্প্যানিশভাষী স্বেচ্ছাসেবক মাঠে কাজ করেছেন। এতে জ্যাকসন হাইটস ও সানসেট পার্কে তার সমর্থন আরও শক্ত হয়েছে। এমনকি কুয়োমোর প্রভাবশালী ঘাঁটি সাউথইস্ট কুইন্স ও সেন্ট্রাল ব্রুকলিনের মধ্যবিত্ত কৃষ্ণাঙ্গ ভোটারদের মধ্যেও তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে পেরেছেন।

ইএ/এসএন

Share this news on:

সর্বশেষ

img
আতিফ আসলামের স্থগিত হওয়া কনসার্ট নিয়ে এলো সুখবর Dec 21, 2025
img
বেগুনি রঙের পোশাকে নজর কাড়লেন চিত্রনায়িকা বুবলী Dec 21, 2025
img
দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে হুমকি Dec 21, 2025
img
ফিফার সেরা একাদশে রাফিনিয়া না থাকায় ক্ষুব্ধ ফ্লিক Dec 21, 2025
img
চট্টগ্রামের অন্যতম শীর্ষ সন্ত্রাসী বুইশ্যা আটক Dec 21, 2025
img
হাদির সমাধিস্থল নিয়ে ছড়িয়ে পড়া ছবিটি বানোয়াট-উদ্দেশ্যপ্রণোদিত : ডিএমপি Dec 21, 2025
img
বানারীপাড়ায় কেন্দ্রীয় আ. লীগ নেতা ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম গ্রেপ্তার Dec 21, 2025
img
শহীদ ওসমান হাদির কবর জিয়ারত করলেন জকসুর শিবির প্যানেল Dec 21, 2025
img
টেস্টের ইতিহাসে প্রথমবার দুই ইনিংসেই জোড়া সেঞ্চুরির রেকর্ড Dec 21, 2025
img
অ্যাভাটারে গান গেয়ে মাইলি সাইরাসের হাতে উঠছে আন্তর্জাতিক সম্মাননা Dec 21, 2025
img
৩ বাহিনীর প্রধানের সঙ্গে বৈঠকে সিইসি Dec 21, 2025
img
৫ বছরের মধ্যে সবচেয়ে লম্বা সময় গোলহীন ভিনিসিয়ুস Dec 21, 2025
img
সারা দেশে তাপমাত্রা কমবে ৩ ডিগ্রি, বাড়বে শীতের তীব্রতা Dec 21, 2025
img

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ

রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে ৯ জনের টটেনহ্যামকে ২-১ গোলে হারাল লিভারপুল Dec 21, 2025
img
ছায়ানটে হামলার ঘটনায় সাড়ে ৩০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা Dec 21, 2025
img
ফের ইরানে হামলার পরিকল্পনা করছে ইসরায়েল Dec 21, 2025
img
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ম্যাক্রোঁর সঙ্গে আলোচনা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন পুতিন Dec 21, 2025
img
জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপে আদি মহাবিশ্বের দানবীয় নক্ষত্রের সন্ধান Dec 21, 2025
img
আজ ২১ ডিসেম্বর: নাটোর হানাদার মুক্ত দিবস Dec 21, 2025
img
আজ শেষ হচ্ছে জুনিয়র বৃত্তি পরীক্ষার প্রবেশপত্র বিতরণ Dec 21, 2025