পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরকাজল ইউনিয়নের চরশিবায় বিএনপি ও গণ অধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে। এতে নারীসহ উভয়পক্ষের অন্তত ৩১ জন আহত হয়েছেন। আহতদের গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে দক্ষিণ কপালবেড়া খলিফা বাড়ির সামনের চৌরাস্তায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় উভয়পক্ষ একে অপরকে দোষারোপ করছেন।
আহতদের মধ্যে রয়েছেন চরশিবা ওয়ার্ড যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াস রাঢ়ী, সদস্য সবুজ রাঢ়ী, নূরনবী রাঢ়ী, হাসান রাঢ়ী, কুদ্দুস ব্যাপারী, ইয়াকুব রাঢ়ী, ওমর রাঢ়ী, রাহান রাঢ়ী ও সলেমান রাঢ়ী। তারা সবাই বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অন্যদিকে গণ অধিকার পরিষদের আহতদের মধ্যে রয়েছেন যুব অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. সোহেল খলিফা।
আজমির খলিফা, শাহাবুল খলিফা, আমেনা বেগম, নাঈম খলিফা ও নবীন খলিফা। এরা গণ অধিকারের কর্মী-সমর্থক। এদিকে দুপক্ষের অন্যান্য আহতরা স্থানীয়ভাবে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে বাড়ি চলে যান।
স্থানীয় সূত্র জানায়, চরশিবা সাংগঠনিক ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কমিটি গঠন উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কপালবেড়া বাজারে গণ অধিকারের সভা ছিল।
সভায় বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে অংশ নেন। অন্যদিকে ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস উপলক্ষে গলাচিপায় বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনের আগমনে রাতে শুভেচ্ছা মিছিল করে চরশিবা সাংগঠনিক ইউনিয়ন বিএনপি।
সভা শেষ করে গণ অধিকার নেতাকর্মীরা ফিরছিলেন। অন্যদিকে মিছিল শেষে বিএনপির নেতাকর্মীরাও বাড়ি ফিরছিলেন। পথে দক্ষিণ কাপালবেড়া চৌরাস্তা বাজারে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সভায় লোক উপস্থিত হওয়া নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে দুই দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
আহত চর শিবা সাংগঠনিক ইউনিয়নের যুবদলের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক মো. ইলিয়াস রাঢ়ী বলেন, ‘আজ শুক্রবার হাসান মামুন ভাইয়ের প্রোগ্রাম উপলক্ষে রাতে আমরা কপালবেড়া বাজারে শুভেচ্ছা মিছিল করেছি। মিছিল শেষে বাড়ি ফেরার সময় গণ অধিকার পরিষদের কর্মীরা আমাদের লোকজনের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা তাদের বলেছি, ৭ নভেম্বরের প্রগ্রামে হাসান মামুন ভাই যে নির্দেশনা দেবেন, আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করব। কিন্তু তারা বলে, হাসান মামুন নমিনেশন পাবে না, গণ অধিকারের নুরুল হক নুরকে নমিনেশন দেওয়া হয়েছে। এই কথা বলেই তারা আমাদের লোকজনের ওপর হামলা চালায়।’
আহত আজমীরের মা আমেনা বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে মোটরসাইকেল চালক। কিছুদিন আগে বিএনপির সভায় গাড়ি নিয়ে যেতে বলছিল সে যায় নাই। কিন্তু আজ গণ অধিকার পরিষদের সভায় যায়। সভা শেষ করে বাসায় ফেরার পথে চৌরাস্তায় বিএনপির লোকজন তাকে ধরে মারধর করে। আমার বাসার সামনেই ঘটনা ঘটে। আমি ছেলেকে বাঁচাতে দৌড়ে গেলে আমাকেও মারধর করে।’
আজমীরের বাবা শাহাবুল খলিফা বলেন, ‘আমরা গণ অধিকার পরিষদ করি। এর আগে চরবিশ্বাসে বিএনপি ও গণ অধিকার পরিষদের মারামারির ঘটনার পর চরশিবায় পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে তারা। আগে থেকেই ক্ষোভ ছিল তাদের এবং আজকে গণ অধিকারের সভায় লোকজন যাওয়ার কারণে মারধর করে।’
যুবঅধিকার নেতা সোহেল খলিফা বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হলে বিএনপির লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে হামলা করে। আমরা প্রতিহত করার চেষ্টা করি এ সময় উভয়ের মধ্যে মারামারিতে বেশ কয়েকজন আহত হয়।’
স্থানীয়, দলীয় সূত্রে আরো জানা গেছে, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ৩ নভেম্বর ২৩৭টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেন। তবে পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা–দশমিনা) আসনে প্রার্থী ঘোষণা স্থগিত রাখে দলটি। এ নিয়ে সাধারণ মানুষ, বিএনপি ও গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তীব্র বাকযুদ্ধ শুরু হয়। পৌর শহর ও বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় প্রতীকে হাসান মামুনের মনোনয়ন চেয়ে দফায় দফায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। তারা দলীয় প্রার্থী বাইরে বিকল্প কোন প্রার্থী মেনে নিতে নারাজ। এরই ধারাবাহিকতায় উপজেলার চর শিবা সাংগঠনিক ইউনিয়নের চর কপালবেড়া নামক স্থানে জিওপি ও বিএনপির কর্মীদের মধ্যে বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে দুই দলের মধ্যে সংঘর্ষ সৃষ্টি হয়। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংঘর্ষের খবর ছড়িয়ে পড়ে।
নুরুল হক নুরের ভাই ও ঢাকা মহানগর উত্তর যুব অধিকার পরিষদের সহসভাপতি আমিনুল ইসলাম নুর বলেন, আমি এলাকায় ছিলাম না। তবে বিষয়টি হলো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় চর কপালবেড়ায় ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে গণঅধিকারের একটি সভা ছিল। অন্যদিকে ৭ নভেম্বর উপলক্ষে বিএনপির লোকজন মিছিল করে। মিছিল শেষে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর তারা হামলা করেছে। এতে আমাদের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।
হাসান মামুন নমিনেশন না পাওয়ার কারণে বিএনপির লোকজন উশৃংখলতা শুরু করছে। এলাকায় একটা ভয়ভীতি ও ত্রাসের রাজনীতি করতে চায় যাতে গণঅধিকারে কেউ যোগ না দেয়।’
এদিকে, ঘটনার পর রাত ১২ টার দিকে আহতদের দেখতে গলাচিপা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুন। এসময় উভয় দলের আহতদের তিনি চিকিৎসার খকজ খবর নেন। তিনি সকলকে ধৈর্য ও শান্তি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ জানান।
বিএনপি দলীয় সূত্র জানায়, শুক্রবারে বিএনপির প্রগ্রামে অংশ নিতে হাসান মামুন ঢাকা থেকে রাতে গলাচিপা আসেন। মারামারির খবর পেয়ে তিনি আহতদের চিকিৎসার খোঁজখবর নিতে হাসপাতালে যান।
হাসান মামুন বলেন, ‘আমরা ঘটনাটি সম্পর্কে শুনেছি, তবে এখনো বিস্তারিত জানতে পারিনি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও স্থানীয় রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এখানে রয়েছেন। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। আমরাও প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করছি।
আজ শুক্রবার (৭ নভেম্বর) আমাদের দলের একটি র্যালি রয়েছে, সে কারণেই নেতাকর্মীরা সংগঠিত হচ্ছিলেন। সেই প্রগ্রাম ব্যাহত করার উদ্দেশ্যে হয়তো এ ধরনের তৎপরতা চালাতে পারে। আমি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে অনুরোধ করব, সঠিকভাবে তদন্ত করে সত্য উদঘাটন করুন এবং জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ গড়ে উঠেছে এই পরিবেশ রক্ষায় সকল পক্ষকে শান্তি বজায় রাখার জন্য অনুরোধ করব।’
গলাচিপা থানার ওসি মো. আশাদুর রহমান জানান, দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুই পরিবারের সদস্যরা দুই রাজনৈতিক দলের সমর্থক। তাদের পূর্বে প্রভাব বিস্তার নিয়ে পারিবারিক বিরোধ আছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে নিয়ে সংঘর্ষ হতে পারে। সংঘর্ষে দুই পক্ষই আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এখনো কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমআর/টিকে