চোখের নিচে কালো দাগ: কারণ ও প্রতিকার

চোখের নিচে কালো দাগ আমাদের কাছে অতি পরিচিত একটি ব্যাপার। নারী-পুরুষ উভয়ের চোখেই এটি দেখা যায়। চোখের নিচে ঝুলে যাওয়া পুত্তলিসহ এই কালো দাগের কারণে আপনাকে অনেক বেশি বয়স্ক দেখাতে পারে। অনেক সময় এই দাগ আর থলে থেকে মুক্তি পাওয়াও অনেক কঠিন হয়ে দাড়ায়।

সাধারণত বয়স্ক লোক, সাদা চামড়া নয় এমন জনগোষ্ঠী এবং যাদের জিনগত এই প্রবণতা রয়েছে তাদের মধ্যে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়।

চলুন জেনে নিই, চোখের নিচে কালো দাগের কারণসমূহ-

অপর্যাপ্ত ঘুম ও দেরিতে ঘুমানো
অপর্যাপ্ত ঘুম, চরম অবসন্নতা বা স্বাভাবিক শোবার সময় থেকে কয়েক ঘণ্টা বেশি জেগে থাকার অভ্যাসের কারণে আপনার চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে। অপর্যাপ্ত ঘুম আপনার ত্বককে নিস্তেজ ও ফ্যাকাসে করে তোলে, এতে করে আপনার ত্বকের নীচের কালো টিস্যু ও রক্তনালীগুলি দৃশ্যমান হয়ে পড়ে।

এছাড়াও ঘুমের অভাবে আপনার চোখের নিচে এক প্রকার তরল পদার্থ জমা হতে পারে, যাকে চোখের নিচের থলে বলা হয়।

বয়সের প্রভাব
চোখের নিচের কালো দাগের আরও একটি কারণ বয়স বেড়ে যাওয়া। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বক আরও পাতলা হতে থাকে। বয়সের সঙ্গে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় চর্বি ও কোলাজেনের পরিমাণ হ্রাস পেতে থাকে। ফলস্বরূপ ত্বকের নীচের অন্ধকার রক্তনালীগুলি আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে এবং চোখের নিচের অঞ্চলটি কালো হয়ে যায়।

চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ
টেলিভিশন বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখের উপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। এই অতিরিক্ত ধকলের কারণে আপনার চোখের চারপাশের রক্তনালীগুলি বড় হয়ে যেতে পারে। ফলস্বরূপ, আপনার চোখের চারপাশের ত্বক কালো হয়ে যায়।

অ্যালার্জি
অ্যালার্জির ও চোখে শুষ্কতার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে চোখের নিচে কালো দাগ পড়তে পারে। অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়ায় ত্বককে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া থেকে রক্ষার করতে আপনার দেহ হিস্টামিন নিঃসরণ ঘটায়।

এর ফলে চোখে চুলকানি, চোখ লাল হওয়া প্রভৃতি অস্বস্তিকর লক্ষণ দেখা দেয়। এছাড়াও হিস্টামিন আপনার রক্তকণিকা সমূহকে প্রশস্ত করে দেয় এবং তা আপনার ত্বকের নিচে আরও দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।

অ্যালার্জির কারণে সৃষ্ট চুলকানির ফলে চোখের চারপাশে ত্বক ঘষা বা চুলকানোর ইচ্ছা জেগে ওঠে। যা করলে অবস্থার আরও অবনতি হতে পারে। জ্বলুনি, ফোলাভাব ও রক্তনালীগুলি ভেঙে যেতে পারে। ফলে চোখের নিচে কালো দাগ তৈরি হবে।

ডিহাইড্রেশন
ডিহাইড্রেশন বা পানিশূণ্যতা চোখের নিচে কালো দাগ পড়ার একটি অন্যতম কারণ। শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানির সরবরাহ না থাকলে চোখের নীচের ত্বক নিস্তেজ হতে শুরু করে এবং চোখ ভেতরের দিকে ডেবে যায়।

রোদ
অতিরিক্ত সময় রোদে পুড়লে আপনার শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণ মেলানিনের সৃষ্টি হয়। এটি রঞ্জক, যা আমাদের ত্বককে রঙিন করে তোলে। খুব বেশি রোদে পুড়লে তা থেকে চোখের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের রঞ্জকতা বৃদ্ধি পায়। যা চোখের নিচের অংশে কালো দাগের মতো মনে হয়।

জিনগত কারণ
জিনগত কারণেও অনেক সময় চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে। অর্থাৎ, পারিবারিক ইতিহাসও চোখের নিচের কালো দাগের জন্য দায়ী হতে পারে। শৈশবে শুরুর দিকে এটি দেখা দিলে তা উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বৈশিষ্ট্য হবার সম্ভাবনা বেশি। যা বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। অন্যান্য কারণ যেমন- থাইরয়েড রোগের পূর্বাভাস হিসেবেও চোখের কালো দাগ সৃষ্টি হয়।

চোখের নিচের কালো দাগ উপরে আলোচিত কারণগুলির উপর নির্ভর করে। তাই প্রথমে কেন এটি হচ্ছে, তা নির্দিষ্ট করে তার প্রতিকার করতে হবে। তবে এর কিছু ঘরোয়া সমাধানও রয়েছে।

এবার চলুন জেনে নিই, চোখের নিচের কালো দাগ দূর করার কিছু ঘরোয়া সমাধান-

বরফ
ঠাণ্ডা জাতীয় কিছু, যেমন- বরফ দিয়ে আলতো করে মাসাজ করলে ঠাণ্ডায় কোষগুলি সংকোচনের ফলে ফোলাভাব কমাতে পারে। এটি প্রসারিত রক্তনালীগুলিকে সঙ্কুচিত করতে সহায়তা করবে। ফলে কালো দাগ এবং ফোলাভাব দূর হবে।

একটি পরিষ্কার কাপড়ে কয়েকটি বরফ টুকরো মুড়ে আপনার চোখে লাগান। কাপড় গরম হয়ে গেলে বা বরফ গলে গেলে এই প্রক্রিয়াটির পুনরাবৃত্তি করুন। এভাবে ২০ মিনিট করতে পারেন।

পর্যাপ্ত ঘুম
পর্যাপ্ত ঘুম চোখের নিচের কালো দাগ দূর করতে সহায়তা করে। কারণ, অনেক সময় ঘুমের অভাবে চোখের নিচে এই দাগ পড়ে থাকে। নিচের কালো দাগ দূর করতে প্রতিদিন সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে।

টি-ব্যাগ থেরাপি
টি-ব্যাগ ভিজিয়ে চোখের উপর দিয়ে রাখুন। আপনার চোখে ঠাণ্ডা টি-ব্যাগ প্রয়োগ করলে চোখের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। চায়ে ক্যাফেইন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা রক্ত সঞ্চালনকে বাড়িয়ে দেয়। এটি রক্তনালী সঙ্কুচিত করতে এবং ত্বকের নীচে জমে যাওয়া তরল পদার্থ হ্রাস করতে সহায়তা করে।

দুটি কালো বা সবুজ টি-ব্যাগ গরম পানিতে পাঁচ মিনিটের জন্য ভিজিয়ে রাখুন। তারপর ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য ফ্রিজে ঠাণ্ডা করে নিন। ঠাণ্ডা হয়ে গেলে চোখ বন্ধ করে চোখের উপর ১৫ থেকে ২০ মিনিটের জন্য টি-ব্যাগগুলি রেখে দিন। অপসারণের পরে ঠাণ্ডা পানিতে চোখ ধুয়ে ফেলুন। তথ্যসূত্র: হেলথলাইন.কম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on: