ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে জামের বীজ

জাম এমন একটি ফল, যা বাংলাদেশে খুবই পরিচিত। আপনি একটু লক্ষ্য করলেই হয়ত আপনার বাড়ির আঙ্গিনা বা পাড়াতে জাম গাছ পেয়ে যাবেন। জামের মৌসুমে পথে ঘাটে, বাজারে, ট্রেন-বাসে বিক্রি হয় অত্যন্ত জনপ্রিয় জাম মাখা।

জাম ফল শুধু খেতেই সুস্বাদু তাই নয়, বরং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যও এটি সমান পরিচিত। জামের বীজও ফেলনা নয়, স্বাস্থ্য উপকার আর ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় অনন্য সব উপাদানে সমৃদ্ধ এই বীজ।

জাম একটি চিরসবুজ গ্রীষ্মমন্ডলীয় গাছ। যা ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশের স্থানীয় উদ্ভিদ। জামের বীজে জাম্বোসিন ও জাম্বোলিন থাকে। উক্ত উপাদান দুটি রক্তে চিনির নিঃসরণ কমিয়ে দেয়। এর চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে জামের বীজ ইনসুলিন উৎপাদন বাড়িয়ে তুলতে সহায়তা করে, যা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের পক্ষে খুবই সহায়ক হতে পারে।

জাম বা কালো জাম বা ভারতীয় ব্লুবেরি সেরা আয়ুর্বেদিক পরিপূরক হিসাবে বিবেচিত হয়। এই অতিপরিচিত ফলের আশ্চর্যজনক পুষ্টিকর প্রোফাইল রয়েছে। যা হলো-

  1. জামে ক্যালোরি কম থাকে এবং এটি ফাইটোকেমিক্যালস ও ভিটামিন-সি এর প্রাচুর্যপূর্ণ উৎস।
  2. জামকে বলা হয় মূত্রবর্ধক, যা হৃদরোগ, হাঁপানি, বাত, পেট ফাঁপা ও আমাশয়ের চিকিৎসার জন্য আয়ুর্বেদ চর্চায় ব্যবহৃত হয়।
  3. জামের মূত্রবর্ধক প্রভাব কিডনি থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করতে সহায়তা করে।
  4. ফলটি ফাইবারের সমৃদ্ধ উৎস, হজম শক্তি বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। বমি বমিভাব প্রতিরোধের জন্যও জাম উপকারী।

এবার চলুন জেনে নিই, জামের বীজ কীভাবে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মানুষের জন্য উপকারী-

  • জামের বীজে থাকা জাম্বোলিন ও জাম্বোসিন প্রাকৃতিক উপাদান দুটির এমন ওষুধি গুণ রয়েছে, যা যে কোনো রোগ থেকে দ্রুত সেরে উঠতে সহায়তা করতে পারে। এই ফাইটোকেমিক্যালগুলি চিনির নিঃসরণ কমিয়ে আনে এবং ইনসুলিন উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করে। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এই দুটি কাজ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
  • জামের বীজে ক্ষারক থাকে, যা স্টার্চকে শক্তিতে রূপান্তরিত করে এবং ডায়াবেটিসের লক্ষণগুলি হ্রাস করতে সাহায্য করে। ক্রমাগত তৃষ্ণার্ত লাগা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া প্রভৃতি রোধ হয়।
  • জামের বীজ গুঁড়া করে খেলে তা রক্তে শর্করার মাত্রা হ্রাস করতে সহায়তা করে। জামের বীজে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে, যা হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়। এটি স্বাস্থ্যকর পাচনতন্ত্র বজায় রাখতে এবং ডায়াবেটিসের সঙ্গে যুক্ত ঝুঁকি ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হ্রাস করতে সহায়তা করে।
  • ডায়াবেটিসে আক্রান্ত পুরুষরা প্রায়শই ইরেক্টাইল ডিসফাংশন এবং লো সেক্স ড্রাইভ অনুভব করেন। নিয়মিত জামের বীজ সেবন করলে তা আপনার লিবিডো বা সেক্স হরমোনকে প্রাকৃতিকভাবে বৃদ্ধি করতে সহায়তা করবে।
  • আপনি জাম কাঁচা খেতে পারেন বা শুকানোর পরে এর বীজ গ্রহণ করতে পারেন। শুকনো জামের বীজ গুঁড়ো করে গরম দুধ ও পানিতে মিশিয়ে খাওয়া যায়। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য এই পানীয়টি খাবারের আগে খাওয়া যেতে পারে।

জামের বীজের আরও কিছু ব্যবহার-

  • জামের বীজ গুঁড়ো করে মধু সঙ্গে মিশিয়ে ফেসপ্যাক হিসাবে ত্বকে প্রয়োগ করা যেতে পারে। এটি আপনার মুখে লাগান এবং সারারাত রেখে দিন। এই ফেসপ্যাকটি আপনার মুখের ব্রণ, কালো দাগ ও পোড়া ভাব দূর করবে।
  • জাম একটি পটাসিয়াম সমৃদ্ধ ফল, যা হৃদরোগের জন্য ভালো। ১০০ গ্রাম জামে ৭৯ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম থাকতে পারে। ফলটি ধমনীতে যে কোনো ধরনের বাধা বা ব্লোকেজ রোধ করতে পারে, ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস পায়। পটাসিয়াম উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য ভালো, কারণ এটি সোডিয়ামের প্রভাব হ্রাস করে।
  • জামে ক্যালরি কম থাকে, তাই ওজন হ্রাস করার ডায়েটে কার্যকরভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়। এই ফলটি প্রচুর পরিমাণে ফাইবারযুক্ত, যা হজমে উন্নতি ঘটায়। এই সমস্ত বৈশিষ্ট্য আপনাকে স্বাস্থ্যকরভাবে ওজন হ্রাস করতে সহায়তা করবে।
  • দাঁত ও মাড়ি শক্তিশালীকরণের জন্য আপনি দাঁতের মাজন হিসাবে জামের শুকনো এবং গুঁড়ো পাতা ব্যবহার করতে পারেন। জামের পাতায় অ্যান্টিব্যাকটিরিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা গলার সমস্যা হ্রাস করতে পারে এবং দুর্গন্ধ দূর করতে সক্ষম। তথ্যসূত্র: এনডিটিভি.কম

 

টাইমস/এনজে/জিএস

Share this news on:

সর্বশেষ