যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন সংকটের অবসান, সিনেটে বিল পাস

যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে দীর্ঘতম সরকারি অচলাবস্থা বা শাটডাউনের অবসান ঘটাতে চুক্তিতে পৌঁছেছেন সিনেটররা। মূলত সিনেটে এমন একটি চুক্তি হয়েছে যা ৪০ দিনব্যাপী দীর্ঘ শাটডাউনের অবসান ঘটাতে পারবে বলে জানিয়েছে বিবিসির মার্কিন সংবাদ অংশীদার সিবিএস।

তবে এই চুক্তি কার্যকর হওয়ার আগে প্রতিনিধি পরিষদের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। এর আগে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সিনেটররা আলোচনায় বসলেও শনিবার দিনভর বৈঠক শেষে কোনও অগ্রগতি হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় রোববার রাতে এ নিয়ে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান সিনেটরদের মধ্যে সমঝোতা বৈঠকও অনুষ্ঠিত হয়। এরপরই সিদ্ধান্ত হয় ভোটের। এই চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে সরকারি সেবাগুলো সম্পূর্ণভাবে পুনরায় চালু হওয়ার পথ খুলে দিতে পারে।

তবে ভোট প্রদানের মাধ্যমে শাটডাউনের অচল অবস্থা কাটার ইঙ্গিত মিললেও এ নিয়ে এখনও বেশি কিছু বাঁধা রয়ে গেছে। কেননা এই চুক্তি পুরোপুরি কার্যকর হতে কতদিন সময় লাগবে এবং এ চুক্তি টেকসই হবে কী-না - তা এখনও স্পষ্ট নয়।

চুক্তিতে কী আছে? নেতৃত্বে কারা?
গত ৪০ দিন ধরে এই অচলাবস্থা চলছে। যার ফলে ফেডারেল কর্মীরা বেতন পাচ্ছেন না, বিমান সংস্থাগুলো ফ্লাইট বাতিল করছে এবং লাখ লাখ আমেরিকানদের খাদ্য সহায়তা পেতেও দেরি হচ্ছে।

সবশেষ সিনেটে অধিবেশন শুরু থেকেই জটিল হয়ে ওঠে যখন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ডেমোক্র্যাটদের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। ডেমোক্র্যাটদের দাবি ছিল মেয়াদোত্তীর্ণ স্বাস্থ্যবীমায় ভর্তুকির মেয়াদ এক বছর বাড়ানো।

রোববার সিনেটে চুক্তির পর সেই চুক্তিতে কী আছে সেটি নিয়েও নানা আলোচনা হচ্ছে। একটি সূত্রের বরাত দিয়ে সিবিএস জানিয়েছে, এই চুক্তির আওতায় শাটডাউনের সময় যে সব কর্মীকে ছাঁটাইয়ের নোটিশ দেওয়া হয়েছিল, তা প্রত্যাহার করা হবে।

এছাড়া অন্তর্বর্তীকালীন অর্থায়নের মেয়াদও জানুয়ারি পর্যন্ত বাড়ানোর কথা রয়েছে চুক্তিতে। চুক্তিতে ডেমোক্র্যাটদের দাবিকৃত স্বাস্থ্যবীমা, ট্যাক্স ক্রেডিট বিষয়েও ভোটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এই ভোট ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহের শেষ নাগাদ অনুষ্ঠিত হবে বলে বলা হয়েছে চুক্তিতে।

অন্য একটি সূত্রে বরাত দিয়ে বিবিসির পার্টনার প্রতিষ্ঠান সিবিএস জানিয়েছে, মেইনের সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং এবং নিউ হ্যাম্পশায়ারের সিনেটর জীন সাহিন ও মেগি হাসান এই চুক্তির নেতৃত্ব দিচ্ছেন।

তারা সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা জন থুন এবং হোয়াইট হাউসের সঙ্গে সমঝোতার ভিত্তিতে এই চুক্তিতে পৌঁছেছেন।

অনুমোদন হলে কি সংকট কাটবে?
ওয়াশিংটনের স্থানীয় সময় রাত আটটা থেকে প্রথম আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়াগত ভোট শুরু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি সময়মতো শুরু হয়নি। চুক্তিটি সিনেটে অনুমোদিত হলেই যে চলমান শাটডাউন বা অচল অবস্থা কাটবে তা কিন্তু নয়। কারণ এটি হবে কেবল প্রথম ধাপ।

চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে পাস করার সময়সূচী এবং এ নিয়ে ধোঁয়াশা রয়েই গেছে। কারণ এই চুক্তি নিয়ে যারা বিরোধিতা করছে তারা চাইলেই এই প্রক্রিয়াটির গতি ধীর করতে পারেন। এরপর সেটি শেষ হলে অনুমোদিত চুক্তি পুনরায় প্রতিনিধি পরিষদে ফিরে যাবে আরেক দফা ভোটের জন্য।

শাটডাউন কাটাতে মানে সরকারি কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে মোট ভোটের প্রয়োজন ৬০টি। জানা গেছে যে, তারা সেই সংখ্যা পূরণের মতো সমর্থন পেয়েছে। শেষ খবর পর্যন্ত সিনেটররা ৫৩-৪৭ ভোটে এগিয়ে ছিল।

এর কারণ হলো, অন্তত সাতজন ডেমোক্র্যাট রিপাবলিকানদের এই প্রস্তাবিত চুক্তিকে সমর্থন করছেন। তবে কিছু রিপাবলিকান সিনেটর এ চুক্তির বিপক্ষে তাদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন।

তাদেরই একজন চাক শুমার। তিনি নিশ্চিত করেছেন যে, তার কিছু সহকর্মী রিপাবলিকান সংখ্যাগরিষ্ঠদের সঙ্গে যে চুক্তিতে সম্মত হয়েছেন, তিনি সেই চুক্তির পক্ষে নন।

কারণ হিসেবে তিনি বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে রিপাবলিকানদের তৈরি স্বাস্থ্যসেবা সংকটের মধ্যে আছে।”

ডেমোক্র্যাটরা বারবার এই সংকট শেষ করার জন্য লড়াই করেছে। এজন্য রিপাবলিকানদের কাছে সংস্কার প্রস্তাব দেওয়া হলেও কিন্তু তারা এর পক্ষে ছিল না।

শাটডাউন কাটাতে ভোট কেন গুরুত্বপূর্ণ
গত পহেলা অক্টোবর ছিল ফেডারেল সরকারের তহবিল বরাদ্দের শেষ দিন। ওইদিন অর্থবিলে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটরা অর্থবিল পাস করার বিষয় একমত হতে না পারায় তৈরি হয় সংকট।

এরপর শুরু হয় সংকট। যুক্তরাষ্ট্রে শাটডাউন মানে দেশটির সরকারি সেবা সাময়িকভাবে স্থগিত থাকে। এমনিতেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ১৪ লাখ ফেডারেল কর্মচারী বেতনবিহীন ছুটিতে আছেন বা বেতন ছাড়া কাজ করছেন।

এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করেন যুক্তরাষ্ট্রের এই সরকারি শাটডাউন শিগগিরই শেষ হবে। রোববার সংক্ষিপ্তভাবে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “এ নিয়ে আমরা খুব শিগগিরই বিস্তারিত জানাবো”।

সরকারি শাটডাউন নিয়ে চলা এই দ্বন্দ্বে ডেমোক্র্যাটদের প্রধান দাবি ছিল, লাখ লাখ আমেরিকান নাগরিকের স্বাস্থ্যসেবা সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধি নিশ্চিত করা। 

টিজে/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
ওসমান হাদি হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিলেন অটোরিকশা চালক Dec 26, 2025
img
১২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন হবে কি না, সে সংশয় আর নেই: শফিকুল আলম Dec 26, 2025
img
অফিশিয়াল ফেসবুক পেইজ হারালেন আসিফ মাহমুদ Dec 26, 2025
img
আজ থেকে বিপিএল ২০২৬ শুরু, একনজরে পূর্ণাঙ্গ ম্যাচ সূচি Dec 26, 2025
img
বড় পদক্ষেপ নিলেন কিম জং উন Dec 26, 2025
img
নতুন বছরের শুরুতে আসছে ইমনের সিনেমা ‘ময়নার চর’ Dec 26, 2025
img
সমাবেশের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত গাছ আবার লাগানোর ঘোষণা বিএনপির Dec 26, 2025
img
সারাদেশের ৭টি জেলার উপর দিয়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ Dec 26, 2025
img
“আপনার নেতৃত্বে এ দেশে শান্তি ফিরুক” বললেন অভিনেতা খায়রুল বাসার Dec 26, 2025
img
গাজীপুরের কোনাবাড়ীতে আগুন, ২টি ঝুটের গুদাম পুড়ে ছাই Dec 26, 2025
img
৩০০ ফুট থেকে বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করছে ঢাকা উত্তর বিএনপি Dec 26, 2025
img
রাঙামাটিতে কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণের সময়ে পর্যটকবাহী বোট ডুবি Dec 26, 2025
img
রোনালদোর প্রাপ্য এখনও বাকি, মেসির উদাহরণ টেনে মন্তব্য ফরাসি কিংবদন্তির Dec 26, 2025
img
ঘন কুয়াশায় ঢাকায় নামতে না পেরে কলকাতায় ৫ ফ্লাইটের অবতরণ Dec 26, 2025
img
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ‘হাঁস’ প্রতীক চাইবেন রুমিন ফারহানা Dec 26, 2025
img
হাদি হত্যার বিচার দাবিতে দেশব্যাপী বিক্ষোভ আজ Dec 26, 2025
img
মেঘনায় দুই লঞ্চের সংঘর্ষে নিহত সংখ্যা বেড়ে ৮ Dec 26, 2025
img
কারিনা কাপুর আমার স্ত্রী ছিলেন বলে দাবি ‘মুফতি’ কাভির Dec 26, 2025
img
বর্তমান পরিস্থিতিতে বিএনপি ও তারেক রহমান দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ : জাহেদ উর রহমান Dec 26, 2025
img
‘টাকার অভাবে’ নির্বাচন করতে পারছে না ইউক্রেন, দাবি জেলেনস্কির উপদেষ্টার Dec 26, 2025