ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের প্রচারে শব্দের মাত্রা রাখতে হবে ৬০ ডেসিবেলে- রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালায় এমন শর্ত দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন অধ্যাদেশ জারির পর সোমবার (১০ নভেম্বর) গেজেট আকারে এ আচরণবিধি জারি করে ইসি।
নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও ২০০৮ সালের আচরণবিধির সঙ্গে সমন্বয় রেখে বেশ কিছু নতুন বিষয় যুক্ত করে এবার নতুন আচরণবিধি প্রণয়ন করা হয়।
এতে বলা হয়েছে, নির্বাচনী প্রচারের সময় প্রার্থীকে শব্দের মাত্রা ৬০ ডেসিবেলে রাখতে হবে। আচরণবিধি মেনে চলার ব্যাপারে প্রার্থী ও দলের কাছ থেকে অঙ্গীকারনামাও দিতে হবে।
আচরণবিধির ‘গুরুতর’ অপরাধের ক্ষেত্রে আরপিওতে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে। আগে আচরণবিধিতে আরপিও অনুচ্ছেদটি ছিল না, এবার যুক্ত করা হয়েছে। নির্বাচনী অপরাধে আরপিও ৯১ ধারা অনুযায়ী প্রার্থিতা বাতিল করে থাকে ইসি। এ বিষয়টি আচরণ বিধিমালায় স্পষ্ট করা হয়েছে। গণমাধ্যমের সংলাপ ও সব প্রার্থীকে একমঞ্চে ইশতেহার ঘোষণার সুযোগ রাখা হয়েছে। রিটার্নিং অফিসার সংশ্লিষ্ট আসনে সব প্রার্থীকে নিয়ে এক দিনে তাদের ইশতেহার বা ঘোষণাপত্রগুলো পাঠ করার ব্যবস্থা করবেন। প্রথমবারের মতো আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভোটিং পদ্ধতি চালু করা হয়েছে এবার। দেশের ভেতরে তিন ধরনের ব্যক্তি ও প্রবাসী বাংলাদেশি ভোটাররা পোস্টাল ব্যালটে ভোট দিতে পারবেন।
ভোটের প্রচারে ড্রোন, পোস্টার ব্যবহার এবং বিদেশে প্রচারে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর আচরণ বিধিমালা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এতে আরও বলা হয়েছে, ২০টির বেশি বিলবোর্ড ব্যবহার করা যাবে না। একমঞ্চে ইশতেহার ঘোষণা ও আচরণবিধি মানতে প্রার্থী ও দলের অঙ্গীকারনামা দিতে হবে।
প্রচারে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী ব্যবহারে জোর দেয়া হয়েছে; প্রচারসামগ্রীতে পলিথিন, রেকসিনের ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনে সর্বোচ্চ ছয় মাসের কারাদণ্ড ও দেড় লাখ টাকা জরিমানা এবং দলের জন্য দেড় লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে তদন্তসাপেক্ষে প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও রয়েছে ইসির। এ ছাড়া একমঞ্চে প্রার্থীদের ইশতেহার ঘোষণা, আচরণবিধি মানায় দল ও প্রার্থীকে অঙ্গীকারনামা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রাখা হয়েছে।
সামাজিকমাধ্যম ব্যবহার করে নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণা করতে অ্যাকাউন্ট আইডি ও ইমেইল আইডিসহ অন্যান্য শনাক্তকরণ তথ্যাদি প্রচারণা শুরুর আগে রিটার্নিং অফিসারের কাছে দাখিল করতে হবে। অসৎ উদ্দেশ্যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করা যাবে না।
আচরণবিধিতে আরও রয়েছে, কোনো দল বা প্রার্থী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিদেশে জনসভা, পথসভা বা কোনো প্রচারণা করতে পারবে না। ভোটার স্লিপ বিতরণে প্রার্থীর নাম, ছবি, পদের নাম ও প্রতীক উল্লেখ করা যাবে না।
সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির তালিকায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদেরও যোগ করা হয়েছে। ফলে তারা কোনো প্রার্থীর হয়ে প্রচারে নামতে পারবেন না। আচরণবিধি জারির মধ্যে দিয়ে নির্বাচনি আইনের সব ধরনের সংস্কার কাজ শেষ করেছে ইসি।
আরপি/টিকে