বাগেরহাটের সংসদীয় আসন পুনর্বহাল নিয়ে আদালতের রায়ের পর নিজেদের দাবি তুলে ধরতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের (সিইসি) সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন জেলার বিএনপি ও জামায়াতের কয়েকজন প্রতিনিধি।
মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে আসেন তারা। বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য শেখ ওয়াদিজ্জুমান দিপু, বিএনপির জেলা উপদেষ্টা ও তাঁতী দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মনিরুজ্জামান মনির, জামায়াতের মনজুরুল ইসলাম রাহাত-সহ ডজন খানেক প্রতিনিধি এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
বাগেরহাটের চারটি সংসদীয় আসন থেকে কমিয়ে তিনটি করে নির্বাচন কমিশন (ইসি) যে গেজেট জারি করেছিল, সোমবার (১০ নভেম্বর) হাইকোর্ট তা অবৈধ ঘোষণা করেন। মঙ্গলবার বাগেরহাটের এই প্রতিনিধি দল নির্বাচন ভবনে এসে প্রথমে ইসি সচিব আখতার আহমেদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এরপর তারা সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতে যান।
দেখা করে এসে শেখ ওয়াদিজ্জুমান দিপু নির্বাচন ভবনে সাংবাদিকদের বলেন, রায়ের কপি আসেনি। আমরা তার আগেই ইসি সচিব ও সিইসির সঙ্গে দেখা করেছি। আমরা বাগেরহাটের সব জনগণের আর্তি তাদেরকে জানিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আইনি-বেআইনি যে প্রক্রিয়ায় হোক, ইসি যে কাজটি করেছে তা দেশের সর্বোচ্চ আদালতে অবৈধ ও বেআইনি ঘোষিত হয়েছে। আমরা ইসিকে অনুরোধ জানাব, আপনারা আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাবেন।
তিনি কমিশনকে এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করার অনুরোধ জানান, যাতে ওই অঞ্চলের জনগণের প্রতি নতুন করে চাপ সৃষ্টি হয়।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩০ জুলাই নির্বাচন কমিশন বাগেরহাটের চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে তিনটি করার প্রস্তাব দেয়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে হরতাল-অবরোধসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। চারটি আসন বহাল রাখার দাবিতে কমিশনের শুনানিও হয়। নির্বাচন কমিশন তাদের সিদ্ধান্তে অটল থাকে এবং চূড়ান্ত গেজেটে চারটি আসন থেকে একটি কমিয়ে বাগেরহাটকে তিন আসন দেয়। একইসঙ্গে গাজীপুরের আসন ৫টি থেকে বেড়ে ৬টি করা হয়।
সীমানা নিয়ে আন্দোলনের মুখে ইসি জানায়, কমিশন সর্বোচ্চ সতর্কতা, নিরপেক্ষতা এবং যৌক্তিক দাবি-আপত্তি বিবেচনায় নিয়ে সীমানা নির্ধারণ করেছে। সীমানার চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে আদালতে কোনো অভিযোগ দেওয়ার সুযোগ নেই।
এরপরে নির্বাচন কমিশনের গেজেট চ্যালেঞ্জ করে বাগেরহাটে চারটি সংসদীয় আসন বহালের আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে দুটি রিট করা হয়। বাংলাদেশ সরকার, প্রধান নির্বাচন কমিশনার, নির্বাচন কমিশন সচিব ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে এই রিটে বিবাদী করা হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট রুল জারি করে। রুলে জানতে চাওয়া হয়, কেন চারটি সংসদীয় আসন বহাল করতে নির্দেশনা দেওয়া হবে না এবং কেন নির্বাচন কমিশনের গেজেট অবৈধ হবে না। নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের রুলের জবাব দিতে বলা হয়।
সবশেষ সোমবার (১০ নভেম্বর) বিচারপতি শশাঙ্ক শেখর সরকার ও বিচারপতি ফয়সাল হাসান আরিফের হাইকোর্ট বেঞ্চ আগের চারটি আসন বহাল রাখার নির্দেশ দিয়েছে। আদালত একইসঙ্গে বাগেরহাটের আসন চারটি থেকে কমিয়ে তিনটি করে নির্বাচন কমিশন যে গেজেট জারি করেছিল, তা অবৈধ ঘোষণা করে।
আরপি/টিকে