সংবিধান সংশোধন নিয়ে পাকিস্তানে অস্থিরতা, পদত্যাগ আরেক বিচারপতির

পাকিস্তানের পার্লামেন্টে পাস হওয়া বিতর্কিত ২৭তম সাংবিধানিক সংশোধনীর জেরে বিচারবিভাগে ব্যাপক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। সংশোধনী পাসের পরপরই সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতির পদত্যাগের ঘটনায় আলোড়ন তৈরি হয়। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার (১৫ নভেম্বর) নতুন করে পদত্যাগ করলেন লাহোর হাইকোর্টের বিচারপতি শামস মাহমুদ মির্জা। বিতর্কিত সংশোধনীর পর দেশটির কোনো হাইকোর্ট থেকে পদত্যাগ করা তিনিই প্রথম বিচারপতি।

পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, বিচারপতি মির্জা তার পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করেছেন যে সর্বশেষ সাংবিধানিক পরিবর্তনের পর ‘বিবেকের তাড়নায় দায়িত্ব পালন করা আর সম্ভব নয়’। ২০১৪ সালে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া মির্জার অবসর নেওয়ার কথা ছিল ২০২৮ সালে।

বিচারপতি শামস মাহমুদ মির্জা ছিলেন প্রয়াত বিচারপতি জিয়া মাহমুদ মির্জার পুত্র। জিয়া মাহমুদ মির্জা ছিলেন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং ১৯৯৬ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভুট্টোকে বরখাস্ত করার বিরুদ্ধে ভিন্নমত প্রদানকারী একমাত্র বিচারপতি।

২৭তম সংশোধনীকে ঘিরে আইনজীবী মহলেও তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। লাহোর হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন এক বিবৃতিতে সংশোধনীকে ‘উচ্চ আদালতকে খণ্ড-বিখণ্ড করার উদ্যোগ’ এবং ‘সংবিধানকে কার্যত সমাহিত করার প্রচেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছে। তারা বিচারপতিদের সম্মান রক্ষায় প্রয়োজন হলে পদত্যাগের আহ্বানও জানিয়েছে। পাশাপাশি সোমবার পূর্ণদিবস ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

ইতোমধ্যে সুপ্রিম কোর্টের দুই সিনিয়র বিচারপতি মনসুর আলী শাহ ও আতহার মিনাল্লাহ সংশোধনীকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর গুরুতর হুমকি আখ্যা দিয়ে পদত্যাগ করেছেন। এদিকে ইসলামাবাদ হাইকোর্টের দুই বিচারপতি মোহসিন আখতার কায়ানি ও সামান রাফাত ইমতিয়াজও ইঙ্গিত দিয়েছেন যে আগামী মাস থেকে তারা আদালতে নিয়মিত উপস্থিত নাও থাকতে পারেন।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন সংশোধনী পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থায় দুটি বড় পরিবর্তন নিয়ে এসেছে-বিচারপতিদের বদলি এবং সাংবিধানিক মামলার বিচার কাঠামো। সবচেয়ে বিতর্কিত ধারা হলো ফেডারেল কনস্টিটিউশনাল কোর্ট (এফসিসি) গঠন, যা গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক মামলার চূড়ান্ত রায় দেবে এবং যার সিদ্ধান্ত সুপ্রিম কোর্টসহ সব আদালতের জন্য বাধ্যতামূলক হবে। এভাবে সুপ্রিম কোর্টকে কার্যত কেবল নাগরিক মামলার সর্বোচ্চ আদালত হিসেবে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে।

আইসিজে এই সংশোধনীকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর ‘স্পষ্ট আক্রমণ’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। সব মিলিয়ে পাকিস্তানের বিচারব্যবস্থা এখন এক নজিরবিহীন সংকটের মুখোমুখি, যার ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
‘হ্যাপি ২০৩০’ লিখে ট্রলের শিকার বাদশা Dec 31, 2025
img
নতুন বছরে দেশ সুবিচারের পথে আরও এগিয়ে যাবে: গোলাম পরওয়ার Dec 31, 2025
img
নববর্ষের অঙ্গীকার হবে-অবাধ, সুষ্ঠু নির্বাচনে জবাবদিহিমূলক সরকার গঠন: তারেক রহমান Dec 31, 2025
img
চীনে খালেদা জিয়ার গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত Dec 31, 2025
img
দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছাড়াল ৩৩ বিলিয়ন ডলার Dec 31, 2025
img
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে আপসহীন যোদ্ধা ছিলেন মাহমুদুল হাসান: তারেক রহমান Dec 31, 2025
img
দুঃসংবাদ দিয়ে বছর শেষ হলো এমবাপ্পের! Dec 31, 2025
img
গোপনে মেয়ের বিয়ে দিলেন পাকিস্তানের সেনাপ্রধান Dec 31, 2025
img
১৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধের উদ্যোগ নিল ফ্রান্স Dec 31, 2025
img
৫০তম ছবিতে সমাজসেবকের ভূমিকায় নতুন চ্যালেঞ্জে দেব Dec 31, 2025
img
মির্জা ফখরুলের জন্য মনটা কাল থেকে খুব বিষণ্ন হয়ে আছে: প্রেস সচিব Dec 31, 2025
img
লিখে নিন, এবার পশ্চিমবঙ্গে আমাদেরই সরকার: অমিত শাহ Dec 31, 2025
মন প্রশান্ত করার উপায় | ইসলামিক টিপস Dec 31, 2025
img
বিতর্কের মুখে শচীন টেন্ডুলকারের কন্যা সারা! Dec 31, 2025
img
তারেক রহমানের সঙ্গে শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ Dec 31, 2025
img
জার্মানিতে ব্যাংক ডাকাতি, লুট প্রায় ১৩০০ কোটি টাকা Dec 31, 2025
img
নিউইয়র্কের পরিত্যক্ত সাবওয়ে স্টেশনে শপথ গ্রহণ করবেন মামদানি Dec 31, 2025
img
ধর্মেন্দ্রের স্মৃতিতে আবেগে ভেঙে পড়লেন অমিতাভ বচ্চন Dec 31, 2025
img
'ফ্যাসিবাদের দোসর' সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ভিসি এখনো বহাল তবিয়তে ! আন্দোলনে নামবে শিক্ষার্থীরা Dec 31, 2025
img
২৫ লাখ টাকার মালিক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, স্বামী-স্ত্রীর মিলে আছে ২২ লাখ টাকার গহনা Dec 31, 2025