২ বন্দর নিয়ে চুক্তি

কী শর্ত তা ড. ইউনূস ও আশিক চৌধুরী ছাড়া আর কেউ জানেন কি না সন্দেহ : মাসুদ কামাল

লালদিয়া ও পানগাঁও বন্দরের দায়িত্ব দুই বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে কী শর্তে দেওয়া হয়েছে তা ড. ইউনূস ও আশিক চৌধুরী ছাড়া আর কেউ জানেন কি না সন্দেহ বলে মন্তব্য করেছেন জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল। তিনি বলেন, এই যে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতেছে একটা অনির্বাচিত সরকার, এটা কি গ্রহণযোগ্য মনে হয়? এই চুক্তিগুলো লাভজনক কি, লাভজনক না- কোনো প্রমাণ হয়নি। বাংলাদেশের কোনো এক্সপার্ট এটা দেখেছে, এটা নিয়ে কেউ আলোচনা করেছে, টার্মিনাল বিষয়গুলো যারা ভালো বোঝেন- তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, এমন কোনো কথা কেউ জানে না, কেউ শুনে নাই এবং কী শর্তে হয়েছে এটা আশিক চৌধুরী এবং ড. ইউনূস ছাড়া আর কেউ জানে কি না সন্দেহ।

বুধবার (১৯ নভেম্বর) ‘কথা’ নামের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি।

মাসুদ কামাল বলেন, আমরা হাসিনা সরকারকে বলতাম, তারা ভারতের দাসে পরিণত হয়েছে। ভারতকে অনেককিছু দিয়ে দিতেন এবং সরকার প্রধান নিজেও বলেছেন যে ভারত যা চায়নি আমরা তাও দিয়ে দিয়েছি। এটা বলার মাধ্যমে আমরা কি সম্মানিত হয়েছি? আমাদের এক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথাও বলেছিলেন যে ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মতো। ওটা কিন্তু ঠিক ছিল।

এ কারণে যে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে সব কিন্তু কখনোই প্রকাশ করা যায় না। ওরকম ভারতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কখনোই সবকিছু প্রকাশ করা যেত না। কিছু কিছু গোপন ছিল। কী ছিল এটাও আমরা জানি না।

তবে যতটুকু গোপন ছিল তার চেয়ে কয়েক গুণ বাড়িয়ে যে প্রচার করা হতো এটা আমি নিশ্চিত। কারা প্রচার করত? যারা বিরোধী পক্ষ ছিল তারা।

তিনি বলেন, এমনকি এই সরকারের একজন উপদেষ্টাও কিন্তু মহা সগৌরবে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে বলেছিলেন যে ভারতের সঙ্গে আমাদের অনেকগুলো গোপন চুক্তি ছিল যার মধ্যে ১০টি আমরা বাতিল করে দিয়েছি। এর মধ্যে পরে দেখা গেল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বললেন, যে ১০টি উনি বাতিল করেছেন বলে দাবি করছেন ওই ধরনের কোনো চুক্তি ভারতের সঙ্গে আমাদের নাই। এটা বলার পর ওই উপদেষ্টা, যিনি প্রথম দাবি করেছেন বাতিল করেছেন, উনি হয়ত লজ্জা পাননি অথবা উনার ভাব এরকম যে বললে বলুক, আমি লজ্জা পাবো না।

যদি কেউ সিদ্ধান্ত নেয়, সে লজ্জা পাবে না। আপনি কীভাবে তাকে লজ্জা দিবেন? পারবেন না তো, ভাই। কাজেই ওই চেষ্টা করবেন না। ওটা ভুলে যান।

এ রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, আগের সরকারের ভারতের সঙ্গে একটা অনুগত সম্পর্ক ছিল এবং আগের সরকার প্রধান বলতেন যে এরা (আমেরিকা) এই দেশটাকে নানাভাবে করায়ত্ত করতে চায়। তারা এখানে তাদের ঘাঁটি করতে চায়। অমুক তমুক করতে চায়। এই সরকার আসার পর সেই ঘটনাগুলোর আমরা যেন কিছু কিছু প্রতিফলন, কিছু কিছু নমুনা দেখতে পাচ্ছি। সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা হয়। না, তারা রুটিন ওয়ার্কে এসেছে, মহড়া করতে আসছে। আমেরিকা মহড়া করার জন্য এতদূর থেকে আসে এখানে, আসুক, আমাদের কিছু বলার নাই।

তবে এটাও দেখেছি, সেটা নিয়ে আবার অনেকে উদ্বেগও প্রকাশ করেছে, পলিটিক্যাল পার্টিগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, কিন্তু আমাদের এখানে যেটা হয় কোন একটা বিষয় নিয়ে আলোচনা উঠলে দুই-একদিন পরে সবাই ক্লান্ত হয়ে যায়। আবার নতুন আরেকটি ইস্যু চলে আসে এবং নতুন ইস্যুর ফাঁকে সরকার তাদের মতলবি কাজগুলো করে ফেলে। একটা উদাহরণ দিয়ে বলি, ১৭ নভেম্বর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে রায় হলো। সেই রায় উপলক্ষে সারা দেশে ব্যাপক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাস্তায় নামানো হলো। ঠিক সেই একইদিনে এই সরকার দুটো চুক্তি করেছে বিদেশি দুটো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।

দুটো বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে লালদিয়া ও পানগাঁও বন্দরের দায়িত্বে তারা নিয়োগ করেছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে এগুলোর দায়িত্ব দিয়ে দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামের লালদিয়ার যে কন্টেইনার টার্মিনালে সেখানে ডেনমার্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান এপিএম টার্মিনালসকে তারা দায়িত্ব দিয়েছে।

কতদিনের জন্য দিয়েছে? ৩০ বছরের জন্য দিয়েছে। একটা সরকার এসেছে ম্যান্ডেট ছাড়া, সরকার কিন্তু কারো ভোটে আসেনি। এদের মেয়াদ ৩০ মাসও না। এদের মেয়াদ ১৮ মাসের মতো। চলে যাবে আশা করা যাচ্ছে যদি নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হয়। তারা একটা চুক্তি করে গেছে ৩০ বছরের জন্য। এই চুক্তি করা তাদের এখতিয়ার আছে কি নাই- একবারও ভাবেনি। তাদের তাড়াহুড়া করে করতে হবেঅ। পানগাঁওয়ের টার্মিনালটা দিয়েছে ২২ বছরের জন্য সুইজারল্যান্ডভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মেডলগকে। তাদেরকে দিয়েছে ২২ বছর।

এত দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করতেছে একটা অনির্বাচিত সরকার, এটা কি গ্রহণযোগ্য মনে হয়? এই চুক্তিগুলো লাভজনক কি, লাভজনক না- কোনো প্রমাণ হয়নি। বাংলাদেশের কোনো এক্সপার্ট এটা দেখেছে, এটা নিয়ে কেউ আলোচনা করেছে, টার্মিনাল বিষয়গুলো যারা ভালো বোঝেন- তাদের সঙ্গে কথা হয়েছে, এমন কোনো কথা কেউ জানে না, কেউ শুনে নাই এবং কী শর্তে হয়েছে এটা ড. ইউনূস এবং আশিক চৌধুরী ছাড়া আর কেউ জানে কি না সন্দেহ।

এমআর 

Share this news on:

সর্বশেষ

img
হাসিনার বিরুদ্ধে আরও ৩ মামলা ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন Nov 20, 2025
img
বড়দিনে কোন রহস্যভেদে নামছেন কোয়েল? Nov 20, 2025
img
২৫২ কোটির মাদক মামলায় ওরিকে তলব মুম্বই পুলিশের Nov 20, 2025
img
নকলের চাপে নয়, নিজের মতো হয়ে থাকার পরামর্শ শ্রদ্ধার Nov 20, 2025
img
বাংলাদেশের ম্যাচসহ আজকের খেলার সূচি Nov 20, 2025
img
ইতিহাসের এই দিনে আলোচিত যত ঘটনা Nov 20, 2025
img
সাফল্য নয়, পরিশ্রমই মানুষকে এগিয়ে রাখে: অক্ষয় কুমার Nov 20, 2025
img
স্বর্ণ কিনবেন? জেনে নিন আজ দেশে কত দামে বিক্রি হচ্ছে স্বর্ণ Nov 20, 2025
img
নিরাপত্তার অভাববোধ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনে প্রতিবন্ধক : দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য Nov 20, 2025
img
নির্বাচনে ভোটের জন্য সৎ ও নিরপেক্ষ ওসি খুঁজছে পুলিশ সদর দপ্তর Nov 20, 2025
img
অন্যের উপর নির্ভরতা নয়, আস্থা রাখুন নিজের উপর: বিজয় Nov 20, 2025
img
জাপান চালু করছে বিশ্বের বৃহত্তম পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র Nov 20, 2025
img
মালয়েশিয়ায় প্রাচীন মসজিদ সংরক্ষণের উদ্যোগ Nov 20, 2025
img
আত্মত্যাগ নয়, নিজের স্বপ্নকে গুরুত্ব দিতে বললেন অভিনেত্রী কোয়েল মল্লিক Nov 20, 2025
img
জীতু-দিতিপ্রিয়ার মাঝে তৃতীয় ব্যক্তি রণজয়? Nov 20, 2025
img
নিউইয়র্কে এলে গ্রেপ্তার হবেন নেতানিয়াহু, ঘোষণা মামদানির Nov 20, 2025
img
দুর্নীতিবাজদের বর্জন করুন, জনগণের ভরসা হতে চাই : শাকিল উজ্জামান Nov 20, 2025
img
শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলকে ধ্বংস করে দিয়েছে: দুলু Nov 20, 2025
img
দুবাইয়ে জাঁকজমকপূর্ণভাবে প্রদর্শিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক এয়ার শো Nov 20, 2025
img
'মায়ের অবিচল শক্তিই আমাকে জীবনে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে' Nov 20, 2025