রাজধানী ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রামেও কেঁপে ওঠেছিল ভূমিকম্পে। অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজসহ প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ থাকায় অধিকাংশ মানুষই অবস্থান করেছিলেন বাসা-বাড়িতে। ভূমিকম্প আতঙ্কে লোকজন ঘর ছেড়ে বাইরে বেড়িয়ে আসেন। মুসলমানদের মুখে আযান এবং হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় উলুধ্বনি শোনা যায়।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিসের নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে জানা গেছে, শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রামের কোথাও দুর্ঘটনার কোনো খবর পাওয়া যায়নি।
শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে রিখটার স্কেলে এই ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৭। এর ২৬ সেকেন্ড স্থায়িত্বের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল নরসিংদীর মাধবদীতে, ভূপৃষ্ঠের ১০ কিলোমিটার গভীরে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ভূমিকম্প ছিল ৫ দশমিক ৭ তবে মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) মাত্রা দেখিয়েছে ৫ দশমিক ৫।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কর্ণফুলী নদীর পশ্চিম তীর সংলগ্ন অধিকাংশ বৃহদাকার স্থাপনাই গড়ে উঠেছে বেলে মাটির ওপর যেখানে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর, শাহ আমানত বিমানবন্দর, ইস্টার্ন রিফাইনারিসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা রয়েছে। ভূমিকম্পের সময় সেখানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। কোনো পেট্রোকেমিক্যাল স্থাপনায় আগুন লাগলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। নগরীর বিভিন্ন অপ্রশস্ত সড়কের দুই পাশে গড়ে ওঠা অনেক ভবনে অগ্নিদুর্ঘটনা মোকাবিলা করাও কঠিন কাজ।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, চট্টগ্রাম ভূমিকম্পের বড় ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউরেশিয়ান প্লেট পাশে থাকায় চট্টগ্রাম এবং কক্সবাজার জেলা ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। বড় ভূমিকম্প বা সুনামির সময় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত, বাংলাদেশ-মায়ানমার সীমান্ত এবং ভারত-মায়নমার সীমান্তে তিনটি প্লেট রয়েছে বলে জানান দেশের খ্যাতিমান এই প্রকৌশলী।
ড. জাহাঙ্গীর আরো বলেন, চট্টগ্রাম নগরের ৭৫ ভাগ ভবন ৭ দশমিক ৫ থেকে ৮ দশমিক ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
কিছু ভবন পুরোপুরি ধ্বসে যাবে। কিছু নির্মাণত্রুটির কারণে আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হবে। কিছু ভবন নির্মাণ যথাযথ হলেও তার পাশের ত্রুটিপূর্ণ ভবনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ হবে। তবে তিনি অর্ধশত বছরের বেশি পুরো চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ভবনের মতো অনেক পুরাতন ভবন ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্থ হবে না বলে জানান।
চট্টগ্রাম নগরের ১ হাজার ৩৩টি স্কুলের মধ্যে ৭৪০টি ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে আছে উল্লেখ করে অনেক স্কুলভবনই টেকসই নয় বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ। কারণ বিভিন্ন ভবনের নিচের তলায় গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গায়ও স্কুল করা হয়েছে। এসব স্কুলকে টেকসই করার উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি স্কুল-কলেজে টেকসই আসবাবপত্র তৈরির ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। যাতে ভূমিকম্পের সময় শিক্ষার্থীরা সেখানে আশ্রয় নিতে পারে। পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমিকম্পের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে সেখানে কাঠ-বাঁশ দিয়ে বাড়ি তৈরি করার পরামর্শ দেন তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রামে ভূমিকম্পে বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি।
তবে ২০১৬ সালের ১৩ এপ্রিল সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্পে নগরে ১২টি ভবন হেলে পড়েছিল। এর আগে ১৯৯৭ সালের ২১ নভেম্বর ৬ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পে নগরে পাঁচতলা ভবন ধসে হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল।
আরপি/টিকে