জনগণের চাহিদা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নের স্বার্থে একটি জাতীয় নার্স কমিশন গঠন করা জরুরি। স্বাস্থ্যসেবায় নার্সদের ভূমিকা নিশ্চিত করতে এই কমিশন প্রয়োজন। জনগণের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা এবং স্বাস্থ্যসেবার বিদ্যমান সমস্যা সমাধানের একমাত্র কার্যকর পথ হলো জাতীয় নার্স কমিশন প্রতিষ্ঠা। ফলে জাতীয় নার্স কমিশন হতেই হবে বলে মন্তব্য করেছেন ফরহাদ মজহার।
শনিবার (২২ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) ও বাংলাদেশ মিডওয়াইফারি সোসাইটি (বিএমএস) আয়োজিত মহাসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
ফরহাদ মজহার বলেন, ‘জনগণ এবং স্বাস্থ্যসেবার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন নার্সরা। ফলে তাদের কখনোই হীন ভাবার সুযোগ নেই। ডাক্তার প্রয়োজন তারা বিশেষজ্ঞ; ডাক্তার ছাড়া চিকিৎসা চলে না। তবে ডাক্তার মানেই পুরো চিকিৎসা নয়, ডাক্তার মানেই স্বাস্থ্য নয়। সমাজে যে ভুল ধারণা আছে, তা পরিবর্তন করতে হবে।’
ডাক্তারদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে যেভাবে অপ্রয়োজনীয় সিজার করানো হয় এবং অতিরিক্ত খরচ চাপানো হয়। এটা বন্ধ করতে নার্সদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু চিকিৎসা ক্ষেত্রে সেই সেবা আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারিনি। তাই জনগণ ভোগান্তিতে পড়ছে।’
নার্সদের উদ্দেশে মজহার বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, নার্সরাই বাংলাদেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় বড় পরিবর্তন আনতে পারেন। তাই তাদের আন্দোলনকে গণআন্দোলনের রূপ দিতে হবে, অর্থাৎ জনগণের স্বার্থে কেন্দ্র করে আন্দোলন চালাতে হবে। যদি নার্সদের এই ন্যায্য দাবি শোনা না হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আরও বড় আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। কারণ, নার্সদের এই আন্দোলন শুধু পেশাগত আন্দোলন নয়, এটি জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তোলার আন্দোলন। আমরা একটি জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাই, আর সেই লক্ষ্যেই স্বাধীন নার্সিং কমিশন গঠনের দাবি করছি।’
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘দীর্ঘ ১৪ মাস ধরে স্বাস্থ্য উপদেষ্টার আশ্বাস বাস্তবায়ন না হওয়ায় মহাসমাবেশ করেছেন তারা। ৪৮ বছরের ঐতিহ্যমণ্ডিত স্বতন্ত্র নার্সিং প্রশাসন ভেঙে অন্য অধিদপ্তরের সঙ্গে একীভূত করার প্রচেষ্টা নার্সিং খাতকে বিপর্যস্ত করবে এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দেশে ৩ জন চিকিৎসকের বিপরীতে মাত্র ১ জন নার্স, যা বৈশ্বিক মানের সম্পূর্ণ বিপরীত। বিশ্বব্যাপী নার্সদের চাহিদা অপরিবর্তিত; তাই দক্ষ নার্স তৈরি ও সঠিক ব্যবস্থাপনা জরুরি।’
সমাবেশে নার্স-মিডওয়াইফরা ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন। ১. স্বতন্ত্র নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর ভিন্ন অধিদপ্তরের সঙ্গে একীভূত করার উদ্যোগ বন্ধ করা এবং জাতীয় নার্সিং কমিশন গঠন। ২. অধিদপ্তর প্রস্তাবিত নিয়োগবিধি, অর্গানোগ্রাম, স্ট্যান্ডার্ড সেটআপ ও ক্যারিয়ার প্যাথ দ্রুত অনুমোদন ও বাস্তবায়ন। ৩. নবম থেকে চতুর্থ গ্রেড পর্যন্ত উচ্চতর পদে ভূতাপেক্ষ প্রমোশন ও সুপারনিউমেরারি পদোন্নতি। ৪. নার্সিং সুপারভাইজার ও নার্সিং ইন্সট্রাক্টর পদ ১০ম গ্রেড থেকে ৯ম গ্রেডে উন্নীতকরণ। ৫. ডিপ্লোমা নার্স-মিডওয়াইফদের সনদ স্নাতক (পাস) সমমান ঘোষণা এবং সব গ্র্যাজুয়েট নার্সের জন্য প্রফেশনাল বিসিএস চালু। ৬. বেসরকারি স্বাস্থ্য ও নার্সিং-মিডওয়াইফারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়োগবিধি ও বেতন কাঠামো প্রণয়ন এবং ভুয়া, অপ্রশিক্ষিত নার্স-মিডওয়াইফদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা। ৭. ঝুঁকিভাতা এবং পূর্ববর্তী সরকারের চাপিয়ে দেওয়া নতুন নার্সিং ইউনিফর্ম বাতিল। ৮. শয্যা-রোগী-চিকিৎসক অনুপাতে নার্স-মিডওয়াইফদের পর্যাপ্ত পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ। তাদের ন্যায্য দাবি দ্রুত বাস্তবায়িত হলে দেশের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় ব্যাপক উন্নয়ন আসবে।
আরপি/টিকে