প্রধান বিচারপতি

বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, বিচার বিভাগ ব্যর্থ হলে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র ব্যর্থ হয়ে যায়। তখন সংবিধানও নির্বাক হয়ে যায়। আর এ কারণেই মানুষের প্রত্যাশা ধ্বংস হয়। গতকাল রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, জুলাই বিপ্লব সংবিধানকে উৎখাত করতে নয়, বরং এর সঙ্গে সম্পর্ককে বিশুদ্ধ করতে উদ্দীপ্ত হয়েছিল। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি, জনসাড়া, এ তিন গুণ জনমানসে প্রধান সুর হয়ে উঠেছিল।

তিনি বলেন, জুলাই বিপ্লব বাংলাদেশকে তার সাংবিধানিক জীবনের ব্যাকরণ পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য করেছে। এই বিপ্লব রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গকে মনে করিয়ে দিয়েছে যে, আইনের শাসন কোনো আমলাতান্ত্রিক রীতিনীতি বা উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া অলংকার নয়।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, বিশ্বজুড়ে সংকট ও অস্থিরতার সময় বিচার বিভাগকে সবচেয়ে বড় পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। বিচার বিভাগের সংস্কার শুধু সৌন্দর্যবর্ধন নয়, বরং এটি রাষ্ট্রের ন্যায় ও গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখার সংগ্রাম। বাংলাদেশ যখন পুনরায় রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন বিচার বিভাগকে নীতিগতভাবে স্থির থাকতে হবে, তবে বিশ্বের পরিবর্তনশীল বাস্তবতার প্রতিও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।

প্রধান বিচারপতি তার রোডম্যাপের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, সেপ্টেম্বর ২০২৪ সালের সংস্কার রোডম্যাপটি আবির্ভূত হয়েছিল, সাংবিধানিক স্বাভাবিকতার জন্য জাতীয় আকাঙ্ক্ষাকে কাঠামো দেওয়ার একটি প্রচেষ্টা।

বিচারিক সংস্কার রোডম্যাপ বিচারবিভাগকে নতুন প্রাতিষ্ঠানিক দিশা দিয়েছে। দেশব্যাপী রোডশো, সেমিনার ও পরামর্শসভায় বিচারক, আইনজীবী ও আদালত কর্মচারীদের মধ্যে সংস্কারের প্রতি মালিকানাবোধ তৈরি হয়েছে।

আধুনিক বিচার বিভাগীয় সংস্কারের আলোচনায় মাসদার হোসেন মামলাকে এড়িয়ে যাওয়া যায় না মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতি বলেন, সেই ঐতিহাসিক রায় বিচার বিভাগের সাংবিধানিক স্বায়ত্তশাসনকে চিহ্নিত করেছে এবং রাষ্ট্রের তিন স্তম্ভের একটিতে পরিণত হওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পেশাদার কাঠামোর ভিত্তি গড়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘গত এক বছরে আমরা এই বিচারব্যবস্থাকে সক্রিয় করতে চেয়েছি- সার্ভিস কাঠামোয় প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার, ক্যারিয়ার পথের স্বাভাবিকীকরণ এবং সুপ্রিম কোর্ট সেক্রেটারিয়েট অর্ডিন্যান্স প্রণয়নের ভিত্তি স্থাপনের মাধ্যমে। এগুলো শুধুই আমলাতান্ত্রিক পুনর্বিন্যাস নয়, এগুলো সাংবিধানিক পুনর্নির্মাণ; যার লক্ষ্য ভারসাম্য, স্বাধীনতা ও প্রশাসনিক শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, তবুও এখানে এক ধরনের বৈপরীত্য আছে, যখন আদালত বিদ্যমান সংবিধানকে রূপান্তরকালীন ন্যায়বিচারের নোঙর হিসেবে পুনর্ব্যক্ত করছে; তখন জনগণ- যাদের হাতে নিহিত মৌলিক ক্ষমতা; একসময় হয়তো সেই সংবিধানকেই পুনর্গঠন করার সিদ্ধান্ত নিতে পারে। বিচার বিভাগকে এই সত্যকে হুমকি নয়, বরং এক গভীর গণতান্ত্রিক বাস্তবতা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
২০২৬ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ইতালির বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ! Nov 23, 2025
img
নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দেখতে পাচ্ছি না : নাহিদ ইসলাম Nov 23, 2025
img
সাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপ, আরও ঘনীভূত হওয়ার আভাস Nov 23, 2025
img
রুনা লায়লার ‘মাস্ত কালান্দার’ নিয়ে আফজাল হোসেনের মুগ্ধতা Nov 23, 2025
img
ভেনেজুয়েলাগামী ফ্লাইট বাতিল করলো ৩ দেশের এয়ারলাইন্স Nov 23, 2025
img
জানুয়ারিতে মুক্তি পাচ্ছে শালিনীর নতুন কসমিক কমেডি 'রাহু কেতু' Nov 23, 2025
img
‘গুস্তাখ ইশক’ মুক্তির আগে নারী অধিকার নিয়ে ফাতিমার বার্তা Nov 23, 2025
img
বন্যায় বির্পযস্ত থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চাল, রেল যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ Nov 23, 2025
img
নেটফ্লিক্সের পরবর্তী বিশ্বঝড় হতে পারে ‘স্কুইড গেম: আমেরিকা’ Nov 23, 2025
img
হল ছাড়তে শুরু করেছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা Nov 23, 2025
img
চবি ছাত্রদলের ৩ নেতাকে শোকজ Nov 23, 2025
img
টাইপকাস্ট হতে চান না বলিউডের অভিনেত্রী তৃপ্তি দিমরি Nov 23, 2025
img
পার্লামেন্ট পুনর্বহালের দাবি নেপালের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রীর Nov 23, 2025
img
নেদারল্যান্ডসের এয়ারপোর্টে অজানা ড্রোনের কারণে বিমান চলাচল স্থগিত Nov 23, 2025
img
আমার মুখ নাকি প্রেমে ব্যর্থ একটা মানুষের মতো : ধানুশ Nov 23, 2025
img
শুটিং করতে গিয়ে ফাতিমার খিঁচুনি, উদ্বিগ্ন বিজয় Nov 23, 2025
img
নির্বাচনী হলফনামায় বিদেশি সম্পদের বিবরণীও দিতে হবে: দুদক চেয়ারম্যান Nov 23, 2025
img
পেরুর সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেতসি চাভেসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা Nov 23, 2025
img
২ দিনে টেস্ট জিতে অস্ট্রেলিয়ার ক্ষতি ২৪ কোটি টাকা! Nov 23, 2025
img
‘চিরদিনই তুমি যে আমার’- এর সেটে ফিরলেন জিতু কমল Nov 23, 2025