সশরীরে নয়, গুমের মামলায় ভার্চুয়ালি হাজিরা দিতে চান সেনা কর্মকর্তারা

আওয়ামী লীগের টানা ক্ষমতায় থাকতে টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশন (টিএফআই) ও জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) বিরোধী মতাদর্শের লোকদের তুলে নিয়ে গুম-নির্যাতনের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক দুই মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সাবেক-বর্তমান সেনা কর্মকর্তাদের শুনানির দিন ধার্য রয়েছে আজ। এ দুই মামলায় গ্রেপ্তার রয়েছেন ১৩ সেনা কর্মকর্তা। তবে পরবর্তী শুনানিতে সশরীরে না এসে তাদের ভার্চুয়ালি হাজিরার আবেদন করেছেন আইনজীবীরা।

রোববার (২৩ নভেম্বর) সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে কয়েকজন আসামির পক্ষে এ সংক্রান্ত আবেদন করেন আইনজীবী মাইদুল ইসলাম পলক। বিষয়টি তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন।

এদিন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ দুই মামলায় শুনানি হবে। সেনা কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ফেরত সংক্রান্ত প্রতিবেদন ও পলাতক আসামিদের পক্ষে স্টেট ডিফেন্স নিয়োগ দেওয়া হতে পারে।

গ্রেপ্তার ১৩ সেনা কর্মকর্তা হলেন- র‍্যাবের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখার সাবেক পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. সারওয়ার বিন কাশেম, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।

এদিকে, সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে আনা উপলক্ষ্যে সকাল থেকেই বাড়ানো হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা। ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ ঘিরে নিরাপত্তায় রয়েছেন পুলিশ, বিজিবি-র্যাব সদস্যরা। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত বলেও জানিয়েছেন দায়িত্বরতরা।

গত ২০ নভেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের এ দুই মামলার শুনানি দিন ধার্য ছিল। তবে প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজকের দিন ঠিক করা হয়। ২৬ অক্টোবর ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন।

এর আগে, ২২ অক্টোবর সেনা হেফাজতে থাকা ১৩ কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। শুনানি শেষে তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল। একইসঙ্গে পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য সাতদিনের মধ্যে দুটি জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। যার এরই মধ্যে প্রকাশিত হয়েছে।

গত ৮ অক্টোবর পৃথক দুই মামলায় মোট ৩০ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। পরে অভিযোগ আমলে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন ট্রাইব্যুনাল। র‌্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশনের (টিএফআই) গোপন সেলে বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৭ জনকে আসামি করা হয়।

অন্যরা হলেন- শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষাবিষয়ক সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক আইজিপি বেনজির আহমেদ, র্যাবের সাবেক ডিজি এম খুরশিদ হোসেন, র্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদ, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, র্যাব কর্মকর্তা কেএম আজাদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কামরুল হাসান, মাহবুব আলম, আবদুল্লাহ আল মোমেন, সারোয়ার বিন কাশেম, খায়রুল ইসলাম, মশিউর রহমান জুয়েল ও সাইফুল ইসলাম সুমন। এর মধ্যে গ্রেপ্তার রয়েছেন ১০ সেনা কর্মকর্তা।

এছাড়া জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি) বা আয়নাঘরে গুমের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের আরেক মামলায় ১৩ জনকে আসামি করা হয়। এ মামলায়ও শেখ হাসিনা-তারিক আহমেদ সিদ্দিকের নাম রয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন- ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) লে. জেনারেল (অব) মোহাম্মদ আকবর হোসেন, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব) সাইফুল আবেদিন, লে. জেনারেল (অব) মো. সাইফুল আলম, সাবেক ডিজি লে. জেনারেল তাবরেজ শামস চৌধুরী, সাবেক ডিজি মেজর জেনারেল (অব) হামিদুল হক, মেজর জেনারেল তৌহিদুল ইসলাম, মেজর জেনারেল সরওয়ার হোসেন, মেজর জেনারেল কবির আহাম্মদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভীর মাজহার সিদ্দিকী ও লে. কর্নেল (অব) মখসুরুল হক। এ মামলায় তিনজন কারাগারে থাকলেও বাকিরা পলাতক রয়েছেন।

কেএন/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
চট্টগ্রামে ভুয়া বন্ধকদাতা সাজিয়ে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ Nov 23, 2025
img
বাবরি মসজিদ নির্মাণ ঘোষণা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক বিতর্ক Nov 23, 2025
img
২৪-এ যারা লড়াই করেছে তাদের সংসদে যাওয়া উচিত : নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী Nov 23, 2025
img
গুমের মামলায় শেখ হাসিনার পক্ষে পান্নাকে আইনজীবী নিয়োগ Nov 23, 2025
img
তুমুল প্রশংসায় মনোজ বাজপেয়ী অভিনীত ‘ফ্যামিলি ম্যান থ্রি’ ওয়েব সিরিজ Nov 23, 2025
img
সুষ্ঠু নির্বাচনে সরকারকে সহযোগিতা করবে সেনাবাহিনী: সেনাপ্রধান Nov 23, 2025
img
দুই মামলায় সেনাকর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের শুনানি ৩ ও ৭ ডিসেম্বর Nov 23, 2025
img
বিএনপি প্রার্থীর সমাবেশে খালেদা জিয়াকে ‘জননেত্রী শেখ হাসিনা’ বলে সম্বোধন Nov 23, 2025
img
সারা দেশে আগামী ৫ দিন যেমন থাকবে আবহাওয়া Nov 23, 2025
img
২০২৬ টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ইতালির বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ! Nov 23, 2025
img
নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দেখতে পাচ্ছি না : নাহিদ ইসলাম Nov 23, 2025
img
সাগরে সৃষ্ট সুস্পষ্ট লঘুচাপ, আরও ঘনীভূত হওয়ার আভাস Nov 23, 2025
img
রুনা লায়লার ‘মাস্ত কালান্দার’ নিয়ে আফজাল হোসেনের মুগ্ধতা Nov 23, 2025
img
ভেনেজুয়েলাগামী ফ্লাইট বাতিল করলো ৩ দেশের এয়ারলাইন্স Nov 23, 2025
img
জানুয়ারিতে মুক্তি পাচ্ছে শালিনীর নতুন কসমিক কমেডি 'রাহু কেতু' Nov 23, 2025
img
‘গুস্তাখ ইশক’ মুক্তির আগে নারী অধিকার নিয়ে ফাতিমার বার্তা Nov 23, 2025
img
বন্যায় বির্পযস্ত থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চাল, রেল যোগাযোগ সাময়িকভাবে বন্ধ Nov 23, 2025
img
নেটফ্লিক্সের পরবর্তী বিশ্বঝড় হতে পারে ‘স্কুইড গেম: আমেরিকা’ Nov 23, 2025
img
হল ছাড়তে শুরু করেছেন ঢাবি শিক্ষার্থীরা Nov 23, 2025
img
চবি ছাত্রদলের ৩ নেতাকে শোকজ Nov 23, 2025