আজ অরিজিৎ সিং একটা নাম নয়, একটা ব্র্যান্ড। তিনি একটা গোটা ইন্ডাস্ট্রি।
লন্ডন, সিডনি, দুবাই — তার একটা শো-এর জন্য মানুষ লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করতে রাজি। তিনি বিশ্বের দরবারে ভারতের নাম উজ্জ্বল করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, সুরের কোনো ভাষা হয় না, কোনো সীমানা হয় না। কিন্তু এই সব কিছুর পরেও, আসল মানুষটা কে?
আসল মানুষটা হলো সেই সোমু। যিনি সফল হওয়ার পর সবাই মুম্বাইয়ের পশ এলাকায় বাড়ি কিনেও, অরিজিৎ সিং ফিরে গেছেন তাঁর শিকড়ে, তাঁর জিয়াগঞ্জে। কেন?
কারণ অরিজিৎ বুঝে গিয়েছিলেন, মুম্বাইয়ের এই গ্ল্যামার, এই বিতর্ক, এই সাফল্য — সবটাই ক্ষণস্থায়ী। আসল শান্তি লুকিয়ে আছে তাঁর ছোটবেলার চেনা গলিতে। তিনি হয়তো পৃথিবীর সবচেয়ে বড় উদাহরণ যিনি দেখালেন, কীভাবে সাফল্যের শীর্ষে থেকেও মাটির কাছাকাছি থাকা যায়।
অরিজিৎ এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন — তাঁর এই দর্শন শুধু কথায় নয়, কাজেও প্রতিফলিত হয়। তিনি তাঁর আয়ের একটা বড় অংশ খরচ করেন তাঁর এলাকার উন্নয়নে। Let There Be Light নামে তাঁর একটি এনজিও আছে, যেটা জিয়াগঞ্জের মানুষের জন্য কাজ করে। তার আয়ের একটা বিশাল অংশ তিনি খরচ করেন তার গ্রামের মানুষের জন্য। জিয়াগঞ্জে একটা আস্ত স্কুল খুলেছেন, যেখানে গরিব ছেলেমেয়েরা বিনামূল্যে পড়াশোনা করে।তাঁর স্বপ্ন, তাঁর শহরে একটা বিশ্বমানের হাসপাতাল তৈরি করা।
আজ অরিজিৎ সিং শুধু একজন গায়ক নন, তিনি একটা দর্শন। তিনি সেই মানুষ, যিনি দেখিয়েছেন রিয়েলিটি শো-তে হেরে গিয়েও জীবন জেতা যায়। তিনি দেখিয়েছেন, সবচেয়ে ক্ষমতাশালী মানুষটির সঙ্গে বিবাদ করেও ইন্ডাস্ট্রির রাজা হওয়া যায়। এবং তিনি দেখিয়েছেন, কোটি কোটি টাকা আয় করেও স্কুটারে চড়ে বাজার করা যায়। ছেলের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে স্কুলের ফর্ম তোলা যায়।
তিনি এমন একজন মেগাস্টার, যার কোনো এয়ারপোর্ট লুক নেই। যার কোনো পিআর টিম নেই। যার কোনো তারকাসুলভ দেখনদারি নেই। তিনি সেই শিল্পী, যিনি কোটি টাকার কনসার্টেও একটা হাওয়াই চটি পরে স্টেজে উঠে পড়তে পারেন। অরিজিৎ সিংয়ের গল্প একটা সার্কেল। যে জিয়াগঞ্জ থেকে তিনি শুরু করেছিলেন, গোটা দুনিয়া ঘুরে তিনি সেই জিয়াগঞ্জেই ফিরে এসেছেন।
ইএ/টিএ