রুপালি পর্দায় একসময় দাপট ছিল না প্রভাবশালী নায়কদের। তারও বহু আগেই দর্শকের মন জয়ের সিংহভাগ দখল করে নিয়েছিল আরেক দল নায়ক যারা প্রেমে হার মানতে জানত, চোখের জলে ভাসতে জানত, আর ভালোবাসাকে নিজের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আঁকড়ে রাখত। এই সময়টাকে অনেকেই বলেন আবেগময় প্রেমিকদের সোনালি যুগ। যে যুগের নায়করা প্রেমকে দেখিয়েছেন যন্ত্রণার রঙে, ত্যাগের মাধুর্যে আর অপেক্ষার দীর্ঘশ্বাসে।
শাহরুখ খানের মতো শিল্পীরা তখন প্রেমের ভাষা নতুন করে লিখেছিলেন। দেবদাসে তার ভাঙা হৃদয়ের যন্ত্রণা, বেদনার নেশায় ডুবে থাকা প্রেমিকের রূপ কিংবা বিরহের জ্বালায় ক্লান্ত মানুষটি আজও দর্শকের স্মৃতিতে টিকে আছে। ভীর জারায় প্রেমকে সীমান্তের রুদ্ধদ্বারে দাঁড় করিয়ে অপেক্ষার অনন্ত শক্তি দেখিয়েছিলেন তিনি। আর রব নে বনা দি জোড়িতে নীরব, লুকোনো ভালোবাসার শক্তি তুলে ধরেছিলেন নতুন এক উপায়ে।
এই ধারার আরেক বড় নাম অজয় দেবগন। হম দিল দে চুকে সানম ছবিতে তিনি দেখিয়েছিলেন ঠিক কতটা ত্যাগী হতে পারে একজন প্রেমিক। ভালোবাসা হারিয়েও যে মানুষটিকে ভালোবাসেন, তাকে প্রকৃত সুখের পথে ঠেলে দিতে পিছপা হননি তিনি। এ এক অন্য রকম মহত্ব, যা তাকে সেই সময়ের অন্যতম অসাধারণ প্রেমিক চরিত্রে পরিণত করে।
ভারতের দক্ষিণী তারকা ধনুশ তৈরি করেছিলেন অন্য এক আবেগময় জগত। রাঞ্জনা ছবিতে তার একতরফা ভালোবাসা, অপ্রাপ্তির জ্বালা আর অব্যাহত চেষ্টা তাকে পর্দার অন্যতম বেদনার্ত প্রেমিকে রূপ দিয়েছে। প্রেমে তার অন্ধ সমর্পণ দর্শকদের ব্যথিত করেছে, আবার মুগ্ধও করেছে।
রণবীর সিং অভিনীত লুটেরা যেন এক নিঃশব্দ ভালোবাসার চিঠি। সেখানে তিনি ছিলেন ভেঙে যাওয়া এক মন, যে সব হারিয়েও ভালোবাসার স্মৃতি আঁকড়ে বাঁচাতে চেয়েছে। তার চরিত্রের নীরবতা, স্থিরতা ও ব্যথাতুর ভালোবাসা তাকে যুক্ত করেছে সেই সোনালি যুগের আবেগঘন প্রেমিকদের তালিকায়।
এইসব চরিত্র, এইসব মানুষ, এইসব গল্প দেখিয়েছিল ভালোবাসা সবসময় উজ্জ্বল নয়। কখনও তা কাঁটার মতো বিঁধে থাকে, কখনও তা অপেক্ষার দীর্ঘ ছায়া হয়ে জীবনের পাশে পড়ে থাকে। কিন্তু তাদের আবেগে ছিল সত্যিকারের মায়া, আর ছিল ভালোবাসাকে শেষ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখার সৎ চেষ্টা।
আরপি/টিকে