প্রতিদিন কতটুকু পানি পান করবেন

প্রতিদিন কী পরিমাণ পানি পান করা উচিত? প্রশ্নটা খুব সহজ হলেও এর উত্তরটা কিন্তু সহজ নয়। কারণ পানি পান করার ব্যাপারে বিভিন্ন গবেষণা থেকে ভিন্ন ভিন্ন পরামর্শ দেয়া হয়েছে। তবে আপনি দৈনিক কী পরিমাণ পানি করবেন তা অনেকগুলো উপাদানের উপর নির্ভরশীল। যেমন- আপনার স্বাস্থ্য, কর্ম, জীবনযাপনের ধরণ, পরিবেশ ইত্যাদি। সুতরাং প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ফর্মুলা।

পানি আমাদের দেহের প্রধান রাসায়নিক উপাদান। দেহের ওজনের ৬০ ভাগই পানি। তাই সঠিকভাবে কাজ করার জন্য দেহের কোষ, কলা ও অঙ্গ প্রত্যেকের পর্যাপ্ত পানি প্রয়োজন। কিন্তু শ্বাস-প্রশ্বাস, মলমূত্র ত্যাগ, অন্ত্রের আন্দোলন ইত্যাদি নানা কারণে দেহ থেকে পানি অপসারিত হয়। ফলে খাদ্যগ্রহণ এবং পানীয় পান করার মাধ্যমে এই অপসারিত পানির ঘাটতি পূরণ করতে হয়।

তাই গড়ে কী পরিমাণ পানি পান করলে এই ঘাটতি পূরণ হবে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ সাইন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড মেডিসিনের মতে, প্রতিদিন গড়ে পুরুষের ক্ষেত্রে ৩.৭ লিটার এবং নারীদের ক্ষেত্রে ২.৭ লিটার পানি প্রয়োজন।

এ পানীয় এর ২০ ভাগ আসবে খাদ্য থেকে আসবে। আর অবশিষ্ট পানি সরাসরি পান করা উচিত। গ্লাসের হিসেবে প্রতিদিন আট গ্লাস পানি করা প্রয়োজন। যেখানে প্রতি গ্লাস এক আউন্স পানির সমপরিমাণ।

তবে কারো কারো ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি কিংবা কম পানির প্রয়োজন হতে পারে। এটা বেশকিছু উপাদানের উপর নির্ভর করবে। যেমন-

অনুশীলন: যদি আপনি ব্যায়াম করেন এবং শরীর থেকে প্রচুর ঘাম ঝরে, তবে অতিরিক্ত পানি পান করতে হবে। এক ঘণ্টা বা তার বেশি সময় ধরে অনুশীলন করলে স্পোর্টস ড্রিংক পান করতে পারেন, যা রক্তে খনিজ সরবরাহ করবে।

পরিবেশ: আপনার পরিবেশ যদি গরম ও আর্দ্র থাকে এবং শরীর থেকে প্রচুর ঘাম বের হয়, তবে অতিরিক্ত পানি পান করা উচিত। আবার আপনি যদি উঁচু পাহাড়ী অঞ্চলে বাস করেন, তবে আপনার জলবিয়োজন বেশি হতে পারে। এক্ষেত্রে আপনাকে অতিরিক্ত পানি পান করতে হবে।

সার্বিক স্বাস্থ্য: জ্বর, বমি কিংবা ডায়রিয়া ইত্যাদি রোগ হলে দেহ থেকে প্রচুর পরিমাণে তরল পদার্থ বের হয়ে যায়। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত পানি পান করুন কিংবা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাবার স্যালাইন বা এজাতীয় দ্রবণের পানীয় পান করুন। এছাড়া মূত্রথলির সংক্রমণ, মূত্রাধারে পাথর ইত্যাদি সমস্যার ক্ষেত্রেও স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত পানি পান করা উচিত।

গর্ভধারণ ও দুগ্ধপান: যারা গর্ভবতী কিংবা শিশুকে দুধ পান করান, তাদের ক্ষেত্রে পানির ঘাটতি পূরণে অতিরিক্ত পানি পান করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে গর্ভবতী নারীদের দৈনিক ২.৪ লিটার এবং শিশুকে দুধ পান করান এমন নারীদের দৈনিক ৩.১ লিটার পানি পান করা প্রয়োজন।

দেহে যথেষ্ট পানি রয়েছে তা বুঝতে দুটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে-
১. আপনারা কম তৃষ্ণা লাগে।
২. আপনার প্রস্রাব বর্ণহীন কিংবা হালকা হলুদ।

এই দুটি বিষয়ের ক্ষেত্রে বলা যায় আপনার দেহে পানির ঘাটতি নেই। আর এর বিপরীত ক্ষেত্রে বুঝতে হবে পানির ঘাটতি রয়েছে।

যেভাবে পানির ঘাটতি প্রতিরোধ করবেন-
১. প্রতিবার খাবারের সময় এবং দুটি খাবারের মাঝখানে একগ্লাস পানি অথবা ক্যালোরিমুক্ত বা নিম্ন-ক্যালোরির পানীয় পান করতে হবে।
২. ব্যায়াম করার পূর্বে, চলাকালে এবং শেষে সবসময় পানি পান করুন।
৩. ক্ষুধা লাগলে পানি করুন। কারণ অনেক সময় পানির অভাব থেকেও ক্ষুধা লাগতে পারে।
৪. যারা নিয়মিত খেলাধুলা করেন, তাদের সবসময় অতিরিক্ত পানি পান করা উচিত।

 

টাইমস/এএইচ/জিএস

Share this news on: