সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল বলেছেন, ‘সাম্প্রতিক ছাত্রসংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামী ও তাদের নেতৃত্ব যেভাবে ধর্মীয় অনুভূতি, রাজনৈতিক ক্ষমতা এবং প্রশাসনকে নিজেদের প্রভাবের আওতায় আনার বক্তব্য ছড়াচ্ছেন, তা শুধু উদ্বেগজনকই নয় বরং রাজনীতিকে ভয়ংকর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। প্লিজ, রাজনীতির সঙ্গে ধর্ম মেশাবেন না।’
রবিবার (২৩ নভেম্বর) নিজের ইউটিউব চ্যানেলে মাসুদ কামাল এসব কথা বলেন।
মাসুদ কামাল বলেন, ‘ডাকসু, জাকসু, চাকসুসহ বিভিন্ন ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্রশিবির যে সাফল্য অর্জন করেছে, তারপর তাদের মাদার অর্গানাইজেশন জামায়াতে ইসলামী এবং সংগঠনের নেতাদের কথাবার্তা ও আচরণে এক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে।
একইভাবে এসব ছাত্রসংসদে নির্বাচিত ছাত্রশিবিরের প্রতিনিধিদের কথাবার্তা ও আচার-আচরণেও আমি নতুন ধরনের একটি পরিবর্তন খেয়াল করছি।’
তিনি আরো বলেন, ‘সারা দেশে জামায়াত যে ধরনের রাজনীতি করছে এই ছাত্রসংসদ নির্বাচনে তার কিছুটা প্রতিফলন দেখা গেছে। প্রশ্ন উঠেছিল—এই নির্বাচনের ফল কি জাতীয় রাজনীতিতে কোনো প্রভাব ফেলবে? আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। কিন্তু জামায়াতের নেতৃবৃন্দ সম্ভবত ধরে নিয়েছেন যে প্রভাব পড়বে।
তারা মনে করছেন, যেহেতু ছাত্রসংসদ নির্বাচনে তারা ভূমিধস বিজয় পেয়েছেন। সারা দেশে জামায়াত একই ধরনের ভূমিধস বিজয় পাবে।’ মাসুদ কামাল বলেন, “আমার ধারণা, জামায়াতের নেতারা বেশ আস্থাশীল। তাদের কথাবার্তা ও আচার-আচরণে অনেকের মধ্যেই সেই আত্মবিশ্বাসের প্রকাশ দেখা গেছে। চট্টগ্রাম জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেছেন, ‘যে সুযোগ এসেছে, তা আর সহজে আসবে না’।”
মাসুদ কামাল বলেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে আমরা দেখে আসছি বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত দুই দল—বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করেই ঘুরপাক খাচ্ছে। কিছু সময়ের জন্য জাতীয় পার্টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল কিন্তু পরে হারিয়ে গেছে।’
শাহজাহান চৌধুরী বলেছেন—‘যে সুযোগ এসেছে, তা আর সহজে আসবে না।’ এই বক্তব্যের সমালোচনা করে মাসুদ কামাল বলেন, “আপনি যদি সত্যিকারের জনসমর্থন অর্জন করেন এবং ভালোভাবে কাজ করেন, তাহলে সুযোগ আরো ভালোভাবে আসতে পারে।
কিন্তু যদি আপনার ধারণা হয়—একবার কৌশলে ক্ষমতায় যেতে পারলেই আর কাউকে কাছে আসতে দেবেন না, এমন ব্যবস্থা করবেন, যাতে জনগণের কাছে ভোট চাইতে আর যেতে না হয়, তাহলে অবশ্যই আপনি বলতে পারেন যে ‘এ সুযোগ আর আসবে না।’ কিন্তু বাস্তবে সুযোগ না আসার তেমন কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।”
শাহজাহান চৌধুরী আরেকটি বক্তব্য দিয়েছেন সেখানে তিনি বলেছেন, ‘নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে হয় না; যার যার নির্বাচনী এলাকায় প্রশাসনের যারা আছেন, তাদের সবাইকে আমাদের আন্ডারে আনতে হবে। আমাদের কথায় উঠবে, আমাদের কথায় বসবে, আমাদের কথায় গ্রেপ্তার করবে, আমাদের কথায় মামলা করবে।’
এ বক্তব্য প্রসঙ্গে মাসুদ কামাল বলেন, “একটি রাজনৈতিক দলের নেতা এমন ভয়ংকর কথা কিভাবে বলতে পারেন, তা চিন্তা করাও কঠিন। যারা দাবি করেন তারা সৎ মানুষের শাসন প্রতিষ্ঠা করবেন, জনগণের অধিকার নিশ্চিত করবেন, আদর্শিক রাজনীতির কথা বলেন—সেই দলের একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা এবং বর্তমান এমপি প্রার্থীই যখন বলেন যে ‘নির্বাচন শুধু জনগণ দিয়ে হয় না, প্রশাসনকে আমাদের আন্ডারে আনতেই হবে’, তখন বিষয়টি গভীর উদ্বেগের জন্ম দেয়।তাহলে কি জামায়াতের বাইরের চেহারা আলাদা, আর ভেতরে সবাই শাহজাহান চৌধুরীর মতো মানসিকতা ধারণ করেন?”
মাসুদ কামাল বলেন, ‘জামায়াতের কেউ কেউ বলে তারা ইসলামের শাসন, শরিয়াহ শাসন চায়। তবে এ নিয়ে তাদের নেতাদের বক্তব্যও অস্পষ্ট। এমনকি জামায়াতের অনেক নেতা বলে বেড়াচ্ছেন জামায়াতকে ভোট দিলে জান্নাতে যাওয়ার টিকিট নিশ্চিত।’
শাহজাহান চৌধুরী আরো বলেছেন, ‘আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীকে ক্ষমতায় নেবেন।’ জবাবে মাসুদ কামাল বলেন, ‘তিনি কিভাবে জানলেন আল্লাহ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন? ধরুন, জামায়াত ক্ষমতায় যেতে পারল না তাহলে যারা তার কথা বিশ্বাস করেছিল তারা কী ভাববে? তারা কি ধরে নেবে যে আল্লাহর সিদ্ধান্তও বাস্তবায়িত হয়নি? এতে তিনি ধর্মীয় বিশ্বাসকে কোথায় দাঁড় করালেন? এ ধরনের মন্তব্য কি কোনোভাবেই যুক্তিযুক্ত। আগামীতে মানুষ কি তার কথা বিশ্বাস করবে? তার দলের কথাই বা মানুষ কিভাবে বিশ্বাস করবে? প্লিজ, রাজনীতির সঙ্গে ধর্ম মেশাবেন না।’
আইকে/টিএ