ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী খাদিজাতুল কুবরা। তিনি এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ (জকসু) নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে ছাত্রদল সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। তিনি মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
স্ট্যাটাসে খাদিজা লেখেন, ‘যতদিন পর্যন্ত আমি রাজনীতিতে আসিনি, ততদিন পর্যন্ত আমি ভালো ছিলাম।
আর এখন এক মাসেই আমার এত দোষ, আমি খারাপ হয়ে গেলাম? এসেছিলাম পরিবর্তন করতে। কিন্তু এসব নোংরামির কারণে বুঝতে পারছি কেন মেয়েরা এই সেক্টরে আসে না বা আসতে চায় না।’
তিনি আরো লেখেন, ‘অনলাইনে ফেক আইডি, স্লাট শেমিং, বট আইডি, ব্যাশিং -সবকিছুই বুঝলাম। মেনে নিলাম।
কিন্তু সাংবাদিকরা? একেকজন কল দিয়ে এত মিথ্যা অপবাদ, উল্টাপাল্টা প্রশ্ন আর মানসিক প্রেসার নিতে পারছি না। সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে একজন কল দিলে যখন কথায় পারে না, পাশ থেকে আরেকজন শিখিয়ে দিচ্ছে।সাংবাদিক হয়েছেন লিবারেল থাকুন। কেনো একটা নির্দিষ্ট দলের চাটামি করেন?’
১৫ মাস কারাগারে থেকেও এত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হইনি, যতটা গত কিছু দিনে হয়েছে উল্লেখ করে তিনি লিখেন, ‘আমি কারো সঙ্গে কখনো খারাপ কিছু করিনি।
আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা আমাকে নিয়ে নোংরামি করিয়েন না, প্লিজ! এসব লোকদের ব্যাপারে স্টেপ নেওয়ার কি কেউ নেই।’
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিন্যান্স বিভাগের ২০২০-২০২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ নূর নবী অস্থি ক্যান্সারের (অস্টিওসারকোমা) বিরুদ্ধে লড়াই করছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে তার বাম পা কেটে ফেলা হলেও তিনি পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিদিন তিনি সাভার থেকে প্রায় ৫৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে সপ্তম সেমেস্টারের ক্লাসও সম্পন্ন করেছেন। সম্প্রতি তার চিকিৎসার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি চ্যারিটি কনসার্ট আয়োজন করা হয়।
কনসার্টে খাদিজাতুল কুবরা ঘোষণা দেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, ক্যান্সার আক্রান্ত নূর নবীর জন্য বিভিন্ন জায়গা থেকে আমি ৫০ হাজার টাকা ফান্ড রেইজ করেছি। আপনারা সবাই আমাকে দোয়ায় রাখবেন, যাতে ভবিষ্যতেও আপনাদের পাশে থাকতে পারি।’ তবে মূলত এই অনুদান নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়েছেন জিএস প্রার্থী খাদিজা, কারণ কনসার্টের অনুমতিপত্রে নির্বাচনী কমিশনের শর্ত ছিল, ‘কনসার্টের মঞ্চে কোনো স্বতন্ত্র/প্যানেলের প্রার্থী উপস্থিত থাকতে পারবেন না।’

ওই স্ট্যাটাসের মন্তব্যের ঘরে তিনি আরো লিখেন, ‘‘আবারও ক্লিয়ার করছি, আমি ঢালাওভাবে সকল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে এ কথাগুলো বলিনি। নির্দিষ্ট একটি দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে যারা কাজ করছেন, আমাকে বিভিন্নভাবে ‘চাপে’ রাখা বা দমানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন শুধু তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছি। সবদিক থেকে ব্যর্থ হয়ে এবার সাংবাদিক নামধারী কিছু লোক সাংবাদিক পরিচয়ে আমাকে ফোনকল করে উদ্ভট প্রশ্ন করছেন, যাতে আমি মুখ ফসকে কিছু একটা বলি। তাদের উদ্দেশ্যে আমি আবারও বলছি, আমি মজলুম। আমি সবসময় নির্যাতিতদের পক্ষে আছি আর আমৃত্যু অসহায়-বঞ্চিতদের পাশে থেকে কাজ করে যাব। এতে যদি আমার মৃত্যুও হয় আমি পিছপা হবো না। কথা দিলাম। এ যাত্রায় আপনারা যারা সাংবাদিকতার ইথিক্স মেনে কাজ করেন তারা আমার জন্য দোয়া করবেন। সকলের কাছে দোয়া চাই। আল্লাহ আমাদের সকলের সকল ভালো কাজ কবুল করে নেক। আরো বেশি বেশি ভালো কাজ করার তৌফিক দান করুক। আমিন।’’
পিএ/এসএন