রাজধানীর কড়াইল বস্তির জায়গায় কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের পরিকল্পনা সরকারের নেই বলে জানিয়েছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।
মঙ্গলবার (২৫ নভেম্বর) কড়াইল বস্তিতে ভয়াবহ আগুনের পর আইটি খাতের বিশিষ্ট উদ্যোক্তা সৈয়দ আলমাস কবীরের একটি বক্তব্য নিয়ে প্রকাশিত সংবাদ ভাইরাল হয়। সেখানে আলমাস কবীর কড়াইল বস্তিতে হাইটেক পার্ক নির্মাণ প্রসঙ্গে বক্তব্য দেন।
আগুনের একদিন পর আলমাস কবীরের ওই বক্তব্য নিয়ে জবাব দেন ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব। ফেসবুকে তিনি লিখেছেন, কড়াইল বস্তিতে হাইটেক পার্ক নির্মাণ সংক্রান্ত একটি অনভিপ্রেত প্রস্তাব আমাদের নজরে এসেছে। হাজার হাজার মানুষ যখন অসহায় ও গৃহহীন, তখন এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য প্রদান থেকে বিরত থাকতে সফটওয়্যার খাতের বেসরকারি উদ্যোক্তাদের আহ্বান জানাই। আলমাস কবীর আগেও এ ধরনের প্রস্তাবনা মৌখিক ও লিখিতভাবে দিয়ে আসছেন। সঙ্গতকারণেই সরকার উনার প্রস্তাবনা আমলে নেয়নি।
বর্তমানে কড়াইল বস্তির জায়গায় যে-কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা সরকারের নেই। ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব আরো লিখেছেন, এ প্রেক্ষিতে কিছু কথা শেয়ার করা দরকার বলে মনে করছি।
কড়াইল বস্তির প্রায় ৪৩ একর জায়গা বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের। হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ কখনোই এই জায়গা বুঝে পায়নি। অতীতে জায়গাটির মালিকানা ছিল টিএন্ডটি (বর্তমান বিটিসিএল)। এখানে আদালতের মামলা রয়েছে, মামলা নিষ্পত্তি হয়নি বলে আইসিটি সেখানে এমনি দখলে যাবার চেষ্টাও করেনি।
আপনারা জানেন, কারওয়ান বাজারে জনতা টাওয়ারে একটি সফটওয়্যার পার্ক ছিল যেখানে শ' খানেক আইটি কোম্পানি ফ্লোর স্পেস ভাড়া নিয়েছিল, মূলত আইটি অফিস চালাচ্ছিল (রাজনৈতিক বিবেচনার বাইরের কিছু কোম্পানিও ছিল)। কিন্তু ভবনটির অবস্থা এতই ঝুঁকিপূর্ণ ছিল যে এর জরুরি মেরামতের দরকার পড়ে, এতে করে সফটওয়্যার কম্পানিগুলোকে আপাতত সরিয়ে মেরামত কাজ শুরু করতে হয়েছে। তখন সফটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রির জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিকল্প খোঁজার উদ্যোগ নেই।
আমরা কারওয়ান বাজারে সফটওয়্যার পার্ক তৈরির জন্য নতুন একটি ভবন নির্মাণ করছি। গত বছরের শেষের দিকে এ জায়গার বনানী কর্নারের যে অংশে কোনো স্লাম (বস্তি) নাই, তার ছোট অংশে একটি সফটওয়্যার পার্ক ভবন নির্মাণের একটি কথা উঠেছিল। এর প্রেক্ষিতে আমরা কয়েকজন মানবাধিকার কর্মীর সঙ্গে আলাপ করি। ওনাদের পরামর্শ মতে কড়াইল বস্তিতে যে-কোনো ধরনের অবকাঠামো নির্মাণের পরিকল্পনা থেকে আইসিটি বিভাগ বিরত থাকে।
আমরা সুস্পষ্টভাবে জানাতে চাই, বর্তমানে কড়াইল বস্তিতে যে-কোনো ধরনের স্থাপনা নির্মাণের কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই। বরং আমরা গণপূর্ত এবং রাজউককে আলাদা আলাদাভাবে চিঠি পাঠিয়েছি যাতে সফটওয়্যার পার্ক নির্মাণের জন্য ঢাকার আগারগাঁও। পূর্বাচল কিংবা অন্যান্য এলাকায় জমি প্রদান করা হয়। সে মতে বাংলাদেশ হাইটেক পার্কে আগারগাঁও একটি প্লট বরাদ্দ নিয়ে এখন পেপারওয়ার্ক আগাচ্ছে। এ প্লটে সফটওয়্যার পার্ক, হাইটেক পার্ক এর হেড অফিসসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের জন্য সবুজ পাতা একটি প্রকল্প উঠানো হচ্ছে।
অর্থাৎ কড়াইল বস্তিতে অবকাঠামো সম্প্রসারণ এর যে কোনো পরিকল্পনা আমাদের নেই, চলমান কোনো প্রকল্পও নাই, এমনকি সবুজ পাতায়ও কোনো প্রস্তাবনা নাই। সরকারের পরিকল্পনার সঙ্গে আদৌ সংশ্লিষ্ট নয়, এমন বক্তব্য প্রদানে বেসরকারি উদ্যোক্তাদের সচেতন ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানাই।
বিশেষভাবে হাজার হাজার মানুষ যখন আগুনে বিপর্যস্ত হয়ে নিরাপত্তাহীন অসহায় পরিস্থিতিতে রয়েছে, তখন হাইটেক পার্ক স্থাপনের আজগুবি বিষয় সামনে এনে সরকারকে বিব্রতকরার এমন অপচেষ্টার নিন্দা জানাই।
আইকে/টিএ