নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ২০১৯ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) নির্বাচনে জিএস পদে নির্বাচিত হওয়া গোলাম রাব্বানীর এমফিল প্রোগ্রামে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হয়েছে। ফলে তার এমফিল ভর্তি বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল।
বুধবার (২৬ নভেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আগে গত ৪ সেপ্টেম্বর সিন্ডিকেট সভায় জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তির অভিযোগ প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হওয়ায় তার এমফিল ভর্তি সাময়িকভাবে বাতিল করা হয় এবং বিষয়টি একাডেমিক কাউন্সিলে উপস্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়।
সেই সিদ্ধান্তের আলোকে বুধবার (২৬ নভেম্বর) একাডেমিক কাউন্সিলে বিষয়টি উত্থাপিত হলে তার ভর্তি বাতিলের সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দিন আহমেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গোলাম রাব্বানীর এমফিল প্রোগ্রামে ভর্তির প্রক্রিয়া যথাযথ অনুসরণ হয়নি বলে এমন একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সাময়িকভাবে তার এমফিল প্রোগ্রামের ভর্তির বাতিল করে। একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সেই বিষয়টি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়েছে।
এদিকে ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনের সময় এই এমফিল প্রোগ্রামের ভর্তি উল্লেখ করেই গোলাম রাব্বানী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন এবং জিএস পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে বৈধ ছাত্রত্ব না থাকার কারণে ডাকসু নির্বাচনে গোলাম রাব্বানীর প্রার্থিতা বৈধ ছিল না। তাই তদন্ত কমিটি গোলাম রাব্বানীর জিএস নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিকে অবৈধ ঘোষণার জন্য জোর সুপারিশ করে।
বুধবারের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় গোলাম রাব্বানীর জিএস পদে নির্বাচিত হওয়ার বিষয়টিকে অবৈধ ঘোষণার করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে সাইফুদ্দিন আহমেদ বলেন, একাডেমি কাউন্সিল এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার রাখে না। একাডেমিক কাউন্সিল শুধু একাডেমিক সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। তবে যেহেতু তার ছাত্রত্ব বাতিল করা হয়েছে, তাই জিএস পদ অবৈধ ঘোষণার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আইনজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
এদিকে, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে জিএস প্রার্থী রাশেদ খাঁন এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক মো. সানাউল্লাহ হক গত ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে একটি আবেদন করেন। তাতে অবৈধ উপায়ে ভর্তি হয়ে ডাকসু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সব সদস্যের ডাকসুর সদস্যপদ বাতিলপূর্বক ভুক্তভোগী প্রার্থীদের মূল্যায়নে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ এবং ২০১৯ সালের ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে সংঘটিত নৃশংস হামলার ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের বিচারের দাবি জানানো হয়।
বুধবার সন্ধ্যায় এক ফেসবুক পোস্টে রাশেদ খাঁন লেখেন, আলহামদুলিল্লাহ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের গোলাম রাব্বানীর এমফিলের ছাত্রত্ব চূড়ান্তভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত। ছাত্রত্ব বাতিল হওয়ায় ঢাবি তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী, তার ডাকসু পদও অবৈধ। ২০১৯ সাল থেকে আমার সংগ্রাম চালু ছিল। ২০২৫ সালে এসে ন্যায়বিচার পেলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
এসএস/টিএ