জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্ম পরিষদের সদস্য ও চট্টগ্রাম-১৫ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান চৌধুরীর কিছু বক্তব্য দেশে আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। তার এসব বক্তব্য নিয়ে কথা বলেছেন সিনিয়র সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাসুদ কামাল। এ সময় শাহজাহান চৌধুরীর কথাগুলো কী ঔদ্ধত্য, না কি অজ্ঞতা? না কি মূর্খতা?- এমন প্রশ্ন তোলেন মাসুদ কামাল।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) ‘কথা’ নামের নিজের ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত এক ভিডিওতে এসব কথা বলেন তিনি। মাসুদ কামাল বলেন, জামায়াতের নেতা শাহজাহান চৌধুরী আবার আলোচনায় এসেছেন। তবে এবারে আলোচনাটা পরের কোনো ঘটনা নিয়ে নয়, বরং আগে যে ঘটনা নিয়ে আলোচনায় এসেছিলেন, তারও আগের একটা ঘটনা আজকে প্রকাশিত হয়েছে। সেই একই কারণ যে উনি বক্তৃতা দিতে গিয়ে এমন সব কথা বলেছেন যে কথাগুলো স্বাভাবিকভাবে খুব একটা প্রশংসনীয় নয়। বিতর্কিত বলতেই পারেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে আপত্তিকর বলতে পারেন।
আগে যেটা প্রকাশিত হয়েছিল, এর আগে সেখানে উনি কি বলেছিলেন? জামায়াতে ইসলামীর সেই সমাবেশে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানও ছিলেন। এটা দু-দিন আগের ঘটনা। সেখানে উনি (শাহজাহান চৌধুরী) এমন সব কথা বলেছিলেন, যাতে না কি অনেকে বলেছিল যে জামায়াতের ভেতরের চিত্রটা ধীরে ধীরে প্রকাশিত হচ্ছে। সেখানে তিনি বলেছিলেন যে প্রশাসনকে আমাদের কথা শুনতে হবে, পুলিশ আমাদের পেছনে পেছনে ঘুরবে, আমরা যাকে বলব তার বিরুদ্ধে মামলা দিতে হবে, আমরা যাকে বলব তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে- এ ধরনের কথা এবং সেখানে উনি আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেছিলেন যে প্রশাসনিকভাবে হয়ত আপত্তিকর নয় কিন্তু অনেকে ধর্মীয়ভাবে সেটা আপত্তিকর মনে করতে পারেন।
সেখানে বলেছিলেন যে আমি মনে করি, আল্লাহতায়ালা সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছেন, জামায়াতে ইসলামীকে ক্ষমতায় নেবেন। মানে উনি মনে করেন যে আল্লাহতায়ালা জামায়াতে ইসলামীকে ক্ষমতায় নেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটা উনি কেন মনে করেন, কীভাবে মনে করেন, কি যুক্তিতে মনে করেন- সেটা উনার ব্যাপার। কিন্তু এগুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমি নিজেও আলোচনা করেছিলাম।
তিনি বলেন, এখন উনার ১ মিনিট ৪০ সেকেন্ডের যে ভিডিওটা আবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে। সে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে যে উনি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন এবং এ সময় তিনি যে কথাটা বলেছিলেন, যে ভাষায় আমরা বুঝব, সেই ভাষায় অনুবাদ করলে, সেটা হলো- খবরদার! খবরদার! আমি শাহজাহান চৌধুরী, আমাকে যারা চিনে না, তারা এখনো মাটির নিচে বসবাস করে, আমার জন্য আল্লাহ আছে, আল্লাহর মেহেরবানি, সূর্য আমার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে। আল্লাহতায়ালা আমাকে এরকম মর্যাদা দিয়েছেন। আপনারা দোয়া করবেন।
উনার এই যে বক্তব্যটা, সূর্য উনার জন্য দাঁড়িয়ে থাকবে, আল্লাহ উনাকে এরকম মর্যাদা দিয়েছেন, যারা উনাকে চেনেন না- তারা এখনো মাটির নিচে বসবাস করছেন, এই যে কথাগুলো এগুলো শুনে অনেকে তো ভাবতে পারেন লোকটার কি মস্তিষ্ক বিকৃত, না কি এগুলো কখনো হয়, আবার অনেকে ভাবতে পারেন, উনি কি অতিঅহংকারী কেউ না কি? উনি কি করে বলেন যে উনার জন্য সূর্য দাঁড়িয়ে থাকবে, সূর্য দাঁড়িয়ে থাকার অর্থ মানে সময় স্থির হয়ে থাকবে। এটা হয়? পৃথিবীতে কারো জন্য হয়েছে? উনার জন্য বাদ দেন আপনি। এই পৃথিবীতে কারো জন্য কি সূর্য দাঁড়িয়েছিল কখনো? কোনো একটা মানুষের জন্য কি সময় স্থির ছিল? কখনো ছিল? আল্লাহ সেটা করবেন?
তিনি আরো বলেন, উনি আল্লাহর উপর ভরসা করে বলছেন যে আল্লাহ উনাকে এতটাই সম্মান দিয়েছেন যে উনার জন্য সূর্য দাঁড়িয়ে থাকবেন। তাহলে এটা কি ঔদ্ধত্য, না কি অজ্ঞতা? না কি মূর্খতা? কী? এই যে কথাগুলো উনি বলেন, কেন বলেছেন? উনি এখানে অবশ্য একজনকে হয়ত হুমকি দিয়ে কথাগুলো বলেছেন বলে মনে হয়। কারণ তার পরের আরেকটা বাক্য এরকম যে চুদুর বুদুর করিও না, লুলা হয়ে যাবা। মানে যদি আমি সহজ ভাষায় বলি যে উল্টাপাল্টা করো না, তাহলে তুমি কিন্তু পঙ্গু হয়ে যাবে। এটা কি হুমকি? এ সমস্ত পয়েন্ট আলোচনায় আসছে। অলরেডি আসা শুরু করেছে। সবচেয়ে বড় কথা হলো একজন মানুষ কেন এই ধরনের কথা বলেন?
এসএস/টিএ