বলিউডে তার যাত্রা ছিল একদম রাজকীয়। মা মুনমুন সেন, নানি মহানায়িকা সুচিত্রা সেন-পরিবারেই ছিলেন অভিনয়ের উজ্জ্বল ইতিহাস। খুব অল্প বয়সেই সেই আলোয় নিজের জায়গা করে নিয়েছিলেন রিয়া সেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে ফাল্গুনী পাঠকের জনপ্রিয় গান ‘ইয়াদ পিয়া কি আনে লগি’-র মিউজিক ভিডিও দিয়ে রাতারাতি পরিচিতি। এরপর শুরু অভিনয়ের পথচলা, যা তাকে পৌঁছে দেয় বলিউডের প্রথম সারির তরুণ অভিনেত্রীদের কাতারে। খবর বলিউড লাইফের।
১৯৯৯ সালে তামিল ছবি ‘তাজমহল’ দিয়ে বড় পর্দায় অভিষেক। দুই দশকের বেশি সময়ে রিয়া কাজ করেছেন ৩০টির বেশি চলচ্চিত্রে। ‘স্টাইল’, ‘কেয়ামত’, ‘ঝংকার বিটস’, ‘শাদি নম্বর ওয়ান’, ‘আপনা সাপনা মানি মানি’- এমন বহু হিট ছবিতে তিনি হয়ে ওঠেন পরিচিত মুখ।
বাংলাদেশের সিনেমাতেও দেখা গেছে তাকে।
কিন্তু সফলতার পরও ধীরে ধীরে গতি কমে আসে তার ক্যারিয়ারে। কেন? এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন রিয়া নিজেই।
ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রিয়া জানান, ক্যারিয়ারের শুরুতে কাজ নিয়ে তিনি উৎসাহে ভরপুর ছিলেন। কিন্তু দ্রুতই বুঝতে পারেন, করা চরিত্রগুলো তার সঙ্গে মানাচ্ছে না।
তার ভাষায়, আমি যে চরিত্র করছিলাম, তাতে আমি স্বচ্ছন্দ ছিলাম না। তখন বলিউডে সবকিছুই নির্ভর করত গ্ল্যামারের ওপর- কী পোশাক পরছি, কী মেকআপ করছি… এসব নিয়ে চাপ ছিল প্রচণ্ড।
অল্প বয়সেই ‘সাহসী অভিনেত্রী’র তকমা পাওয়াটা তাকে মানসিকভাবে আঘাত করেছিল। তিনি বলেন, আমি তখন স্কুলে পড়তাম। অথচ তখন থেকেই আমাকে লেবেল দেওয়া শুরু হয়।
দীর্ঘসময় ধরে গ্ল্যামারাস ইমেজ ধরে রাখার চাপ তাকে আরও ক্লান্ত করে তোলে। অবশেষে সচেতনভাবেই থামিয়ে দেন বলিউডের কাজ।
যা বলিউডের জন্য ‘ক্ষতি’, তা হয়ে ওঠে বাংলা সিনেমার জন্য লাভ। রিয়া নতুনভাবে আবিষ্কার হন ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘নৌকাডুবি’ (২০১১) ছবিতে। এরপর ‘জাতিস্মর’, ‘হিরো ৪২০’- একাধিক ছবিতে কাজ করে নিজের অভিনয়শক্তি নতুন করে প্রমাণ করেন।
তার ভাষায়, বাংলা ছবিতে আমি আমার নিজের মতো হতে পেরেছি। পরিচালকরা বুঝতে পেরেছেন আমি কী দিতে পারি।
স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের উত্থান রিয়ার ক্যারিয়ারে নতুন দিগন্ত খুলে দেয়। ‘রাগিণী এমএমএস: রিটার্নস’, ‘পয়জন’, ‘মিসম্যাচ’- এর মতো ওয়েব সিরিজে দেখা গেছে তাকে। তিনি বলেন, ওটিটির কাজ আমাকে নানা চরিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দিচ্ছে। এখানে আমি নিজেকে বেশি মানানসই মনে করি।
২০০৫ সালে রিয়া সেন-এর ব্যক্তিগত একটি ভিডিও ফাঁস হয়, যা নিয়ে তৈরি হয় তুমুল বিতর্ক। সেই সময় অনেক ছবির প্রস্তাব হারান তিনি। অনেকের মতে, এ ঘটনাই তার বলিউড ক্যারিয়ারকে বড়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
ধীরে ধীরে কাজের পরিমাণ কমে আসে; ফিরতে পারেননি আগের অবস্থানে। এখন কাজ করছেন মূলত পার্শ্ব চরিত্রে। চলতি বছর তাকে দেখা গেছে হিন্দি ছবি ‘নাদানিয়া’–তে। মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে তার ওয়েব সিরিজ ‘পরিণীতা’।
আরপি/টিকে