৯টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক

বোর্ডের অনুমোদন সাপেক্ষে ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্স ২০২৫–এর আওতায় নয়টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান অবসায়নের (লিকুইডেট) প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সম্প্রতি গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড এ অনুমোদন দিয়েছে বলে জানান তিনি।

ওই কর্মকর্তা আরও জানান, এ সিদ্ধান্তের ফলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এখন আনুষ্ঠানিকভাবে এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ, লিকুইডেটর নিয়োগ, সম্পদ বিক্রি এবং প্রাপ্ত অর্থ পাওনাদারদের মধ্যে বণ্টন করতে পারবে।

ব্যাংক রেজুলেশন অর্ডিন্যান্সে আর্থিক সংকটে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কীভাবে একীভূত করা, পুনর্গঠন করা বা বন্ধ করা হবে তা উল্লেখ করা হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সম্পদ বিক্রি করে পাওনাদারদের টাকা কীভাবে পরিশোধ করা হবে তাও এতে উল্লেখ আছে।

দুর্বল পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূতকরণের প্রক্রিয়ার পরপরই এ সিদ্ধান্ত এলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড এরইমধ্যে নতুনভাবে একীভূত সম্মিলিত ইসলামি ব্যাংকের লাইসেন্স দিয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যাংক একীভূতকরণ। নতুন প্রতিষ্ঠানটি এখন দেশের সবচেয়ে বড় ইসলামী ব্যাংক হবে।

জানা যায়, আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া এবং ব্যাংকগুলোকে একীভূত করার এ উদ্যোগের মাধ্যমে বোঝা যায়, আর্থিক খাতে দীর্ঘ বছরের অবনতির পর নিয়ন্ত্রক সংস্থা এখন অনেক কঠোর ও সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে শুরু করেছে।

নয়টি ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো—এফএএস ফাইন্যান্স, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি, প্রিমিয়ার লিজিং, ফারইস্ট ফাইন্যান্স, জিএসপি ফাইন্যান্স, প্রাইম ফাইন্যান্স, আভিভা ফাইন্যান্স, পিপলস লিজিং এবং ইন্টারন্যাশনাল লিজিং।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতের মোট খেলাপি ঋণের ৫২ শতাংশ এ নয়টি প্রতিষ্ঠানের। গত বছরের শেষে এ প্রতিষ্ঠানগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৮৯ কোটি টাকা।

এই নয়টির মধ্যে আটটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি গড় নিট সম্পদমূল্য ঋণাত্মক ৯৫ টাকা। এখান থেকে বোঝা যায়, সরকারি হস্তক্ষেপ ছাড়া তাদের পক্ষে দায় পরিশোধ করা প্রায় অসম্ভব। সহজ কথায়, প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্পদ বিক্রি করে সব ঋণ পরিশোধ করলেও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের জন্য কিছুই থাকবে না, অথবা থাকলেও তা খুবই সামান্য।

আমানতকারীরা অগ্রাধিকার পাবেন-
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই অনুমোদন দিয়েছে। অনেক আমানতকারীর স্কিমের মেয়াদপূর্তি হওয়ার পরও টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। তারা মাসের পর মাস অপেক্ষা করছেন, আবার অনেকে বছরের পর বছর।

এর আগে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে গভর্নর বলেছিলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক খুব শিগগিরই লিকুইডেটর নিয়োগ করবে। লিকুইডেশন প্রক্রিয়া শুরুর আগে আমানতকারীদের টাকা ফেরত দেওয়া হবে। সরকার ইতোমধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের আমানতকারীদের টাকা ফেরত দিতে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার মৌখিক অনুমোদন দিয়েছে।

আমানতকারীদের রক্ষা করতেই তারা এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ (লিকুইডেশন) করার পথে এগোচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানগুলোর গ্রাহকদের আমানত ফেরত দেওয়া আমাদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলেন তিনি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক দুই ধরনের আমানতকারী মিলিয়ে নয়টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানে মোট ১৫ হাজার ৩৭০ কোটি টাকার আমানত আটকে আছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৫২৫ কোটি টাকা একক গ্রাহকের এবং ১১ হাজার ৮৪৫ কোটি টাকা ব্যাংক ও করপোরেট আমানতকারীর।

একক আমানতকারীর আমানত আটকে থাকার দিক থেকে শীর্ষে আছে পিপলস লিজিং, প্রতিষ্ঠানটিতে ১ হাজার ৪০৫ কোটি টাকা আটকে আছে। এরপর আছে—আভিভা ফাইন্যান্স ৮০৯ কোটি টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং ৬৪৫ কোটি টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্স ৩২৮ কোটি টাকা, এফএএস ফাইন্যান্স ১০৫ কোটি টাকা।

এ বছরের শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন্স ডিপার্টমেন্ট আর্থিক প্রতিষ্ঠান বন্ধের সংক্ষিপ্ত তালিকা করে। ওই তালিকায় এই নয়টি প্রতিষ্ঠানের নাম ছিল এবং এবং নামগুলো ব্যাংক রেজুলেউশন ডিপার্টমেন্টে পাঠানো হয়।

এর আগে ১০ মাসের একটি মূল্যায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০টি দুর্বল আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে 'লাল' ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত করে।

তালিকায় থাকা বাকি ১১টি প্রতিষ্ঠান হলো—সিভিসি ফাইন্যান্স, বে লিজিং, ইসলামিক ফাইন্যান্স, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স, হজ ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স, আইআইডিএফসি, উত্তরা ফাইন্যান্স, ফিনিক্স ফাইন্যান্স, ফার্স্ট ফাইন্যান্স এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
কাগজে-কলমে রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ করে লাভ নেই : রুমিন ফারহানা Dec 02, 2025
img
কুড়িগ্রাম সীমান্তে ৩২ লক্ষ টাকার ভারতীয় পণ্যের চালান আটক Dec 02, 2025
img
টস হেরে তিন পরিবর্তন নিয়ে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ Dec 02, 2025
img
নির্বাচন নিয়ে ইসির চলমান প্রস্তুতি সন্তোষজনক: মাইকেল মিলার Dec 02, 2025
img
নির্বাচনকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় উচ্চ পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মশালা স্থগিত Dec 02, 2025
img
বঙ্গোপসাগরে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালাল ভারত Dec 02, 2025
img
ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে ডিএমপির ১৫৩৩ মামলা Dec 02, 2025
img
চুক্তি নিয়ে পার্বত্যবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে সরকার Dec 02, 2025
img
উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ সভায় বেগম জিয়ার জন্য দোয়া ও প্রার্থনা Dec 02, 2025
img
উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠকে খালেদা জিয়ার ব্যাপারে আলোচনা Dec 02, 2025
img
বৃহস্পতিবার দেখা যাবে বছরের শেষ সুপারমুন, চাঁদ হবে আরও উজ্জ্বল Dec 02, 2025
img
অমিতাভ বচ্চনকে আমার সবচেয়ে ভাল লাগার বিষয় হল তাঁর শৃঙ্খলা: জয়া বচ্চন Dec 02, 2025
img
ছাত্র অধিকার পরিষদে যোগ দিলেন ছাত্রদল নেতা Dec 02, 2025
img
গান করলেও কখনো মুখ দেখান না এ আর রহমানের মেয়ে খাতিজা Dec 02, 2025
img
মোটরবাইক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন ‘লেডি বাইকার’ Dec 02, 2025
img
আইন অমান্য করে পুলিশের নজরে ইংল্যান্ডের তিন ক্রিকেটার Dec 02, 2025
img
পেরুর আমাজন এলাকায় ভূমিধস, নিহত ১২ Dec 02, 2025
img
সংবিধানে পঞ্চদশ সংশোধনী: হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল শুনানি ফের কাল Dec 02, 2025
img

বিজেএ পরীক্ষা

পুলিশ ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়া সংস্কারের দাবি ছাত্র সংসদগুলোর Dec 02, 2025
img
চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারছেন বেগম খালেদা জিয়া: ডা. জাহিদ হোসেন Dec 02, 2025