ইনুর বিরুদ্ধে ফের সাক্ষ্যগ্রহণ ৭ ডিসেম্বর

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে কুষ্টিয়ায় ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর বিরুদ্ধে দ্বিতীয় দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ৭ ডিসেম্বর দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) ট্রাইব্যুনাল-২ এর সদস্য অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ দিন নির্ধারণ করেন। অপর সদস্য হলেন জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

এদিন দুই নম্বর সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেওয়া বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা ও প্রসিকিউটর তানভীর হাসান জোহাকে জেরা করেন ইনুর আইনজীবী মনসুরুল হক চৌধুরী। সোমবার (১ ডিসেম্বর) সাক্ষ্য দেন তিনি।

ট্রাইব্যুনালে আজ প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম। সঙ্গে ছিলেন প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ, সাইমুম রেজা তালুকদার, আবদুস সাত্তার পালোয়ানসহ অন্যরা।

এ মামলার প্রথম সাক্ষী মো. রাইসুল হকের বাড়ি মেহেরপুরে। তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় কুষ্টিয়া শহরের একটি মেসে থাকতেন। সোমবার ট্রাইব্যুনালে এসে ইনুর বিরুদ্ধে জবানবন্দি দেন তিনি। ছাত্র-জনতার ওপর হামলার প্রত্যক্ষ নির্দেশদাতা ও উসকানিদাতা হাসানুল হক ইনু ছিলেন বলে জানিয়েছেন এই সাক্ষী। তার কপালেও গুলি লেগেছিল। কিন্তু ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। এছাড়া ছয়জন শহীদ হয়েছিলেন। এসবের জন্য ট্রাইব্যুনালের কাছে ইনুর সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়েছেন রাইসুল।

এর আগে, ৩০ নভেম্বর মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। একই দিন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের বিরুদ্ধে ইনুর করা রিভিউ আবেদনের ওপর শুনানি হয়। তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সিফাত মাহমুদ ও মনসুরুল হক। প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ইনুর আবেদনটি খারিজ করে দেন ট্রাইব্যুনাল। গত ২ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আনা আটটি অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেওয়া হয়।

ওই দিন আটটি অভিযোগই ইনুকে পড়ে শোনান বিচারক। একপর্যায়ে নিজেকে পুরোপুরি নির্দোষ দাবি করেন এই জাসদ সভাপতি। ২৮ অক্টোবর তার পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনসুরুল হক। শুনানিতে কোনো অভিযোগ সত্য নয় জানিয়ে নিজের ক্লায়েন্টের অব্যাহতির আবেদন করেন তিনি। তবে ১৪ দলীয় জোটের শরিক নেতা হিসেবে কোনো দায় ইনু এড়াতে পারেন না বলে জানিয়েছে প্রসিকিউশন। ২৩ অক্টোবর ইনুর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের ওপর শুনানি করেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।

চলতি বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর এ মামলায় ইনুকে ট্রাইব্যুনালে হাজিরের নির্দেশ ছিল। ২৫ সেপ্টেম্বর এই জাসদ সভাপতির বিরুদ্ধে জুলাই-আগস্টে গণহত্যায় সহযোগিতাসহ সুনির্দিষ্ট আটটি অভিযোগ এনে ট্রাইব্যুনালে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। এরপর শুনানিতে আটটি অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়। শুনানি শেষে অভিযোগ আমলে নিয়ে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেন আদালত।

গত বছরের ২৬ আগস্ট রাজধানীর উত্তরা থেকে হাসানুল হক ইনুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। বর্তমানে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন এই জাসদ নেতা। তবে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে জোটের প্রার্থী হিসেবে কুষ্টিয়ায় নিজ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর কাছে হেরে যান তিনি।

উল্লেখ্য, জুলাই-আগস্ট আন্দোলন ঘিরে কুষ্টিয়া শহরে শহীদ হন শ্রমিক আশরাফুল ইসলাম, সুরুজ আলী বাবু, শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মুস্তাকিন, উসামা, ব্যবসায়ী বাবলু ফরাজী ও চাকরিজীবী ইউসুফ শেখ। আহত হন বহু নিরীহ মানুষ। এর পরিপ্রেক্ষিতে এই ইনুর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা হয়। পরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত সংস্থার কর্মকর্তারা। যাচাই-বাছাই শেষে উসকানি, ষড়যন্ত্রসহ সুনির্দিষ্ট আটটি অভিযোগ আনে প্রসিকিউশন। তার বিরুদ্ধে দেওয়া ফরমাল চার্জটি ৩৯ পৃষ্ঠা সম্বলিত। সাক্ষী করা হয়েছে ২০ জনকে। এছাড়া নথি হিসেবে তিনটি অডিও ও ছয়টি ভিডিও দিয়েছে প্রসিকিউশন।

ইএ/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
মায়ের মৃত্যুর পর অনধিকারচর্চায় ভেঙে পড়েছিলেন জাহ্নবী Dec 02, 2025
img
সাংবাদিক পরিচয় নয়, আচরণ দেখুন: জয়া বচ্চন Dec 02, 2025
img
খালেদা জিয়ার পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকলে শিগগিরই দেশে ফিরবেন তারেক Dec 02, 2025
img
টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বরেকর্ড গড়লেন তানজিদ তামিম Dec 02, 2025
img
সন্তানদের নয়, ধর্মেন্দ্র যাদের দিয়ে গেলেন কোটি টাকার সম্পত্তি! Dec 02, 2025
img
আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পেশাদার বাহিনী গড়ার প্রতিশ্রুতি সেনাপ্রধানের Dec 02, 2025
img
আয়ারল্যান্ডকে ১১৭ রানে অলআউট করল বাংলাদেশ Dec 02, 2025
img

জয়া আহসান

ঘুম থেকে উঠে মুখ না ধুয়ে চলে এসেছি Dec 02, 2025
img
এলপিজি গ্যাসের দাম বাড়ল ৩৮ টাকা Dec 02, 2025
img
৭ ডিসেম্বরের পর যেকোনো দিন তফসিল ঘোষণা : ইসি আনোয়ারুল Dec 02, 2025
img
রাশিয়া ও ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের চুক্তি করবে, খুবই আশাবাদী যুক্তরাষ্ট্র Dec 02, 2025
img
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও ভুয়া শিক্ষার্থী আটক Dec 02, 2025
img
বাড়িভাড়া নির্ধারণে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা করতে হাইকোর্টের রুল Dec 02, 2025
img
ফিফা আরব কাপে কাতারকে ১–০ গোলে হারিয়েছে ফিলিস্তিন Dec 02, 2025
img
এবার লটারিতে ৫২৭ থানার ওসি পদায়ন Dec 02, 2025
img
ঝাড়গ্রামের দুই অভিনেত্রী আবার মিলিত মঞ্চে Dec 02, 2025
img
খালেদা জিয়ার নিরাপত্তার দায়িত্ব নিল এসএসএফ ও পিজিআর Dec 02, 2025
img
ক্যাব চালকের হাতে হেনস্তার শিকার অভিনেত্রী সুদীপা Dec 02, 2025
img
মেয়েকে নিয়ে সিদ্ধার্থের আবেগঘন বার্তা Dec 02, 2025
img
বৈষম্য নিরসন না হলে আদিবাসীদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত সম্ভব নয়: ড. ইফতেখারুজ্জামান Dec 02, 2025