আবারও লিগ বর্জনের ঘোষণা দিলো বিদ্রোহী ক্লাবগুলো। ৪৩টির সঙ্গে এবার যোগ হয়েছে আরও ২টি। সংগঠকরা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, বোর্ডের চাওয়াতে নয়, কেবল ক্লাবগুলো চাইলেই লিগ মাঠে গড়াবে। আগে একাত্মতা জানিয়েও তামিম ইকবালের 'ওল্ড ডি.ও.এইচ.এসের' দলবদলে অংশগ্রহণের বিষয়টিকে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত বলেছেন সংগঠকরা। বিপিএল থেকে ৯ ক্রিকেটারকে বাদ দেয়ার প্রক্রিয়াকেও প্রশ্নবিদ্ধ বলছেন তারা। নারী ক্রিকেটারদের লাঞ্ছনার অভিযোগে বিসিবির কার্যক্রম নিয়েও ক্ষুব্ধ ক্লাবগুলো।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করে লিগ বর্জনের হুমকি দিয়েছিল বেশ কিছু ক্লাব। সেই সংবাদ সম্মেলনে থাকলেও এবার নেই তামিম ইকবাল। বর্তমান ক্রিকেট বোর্ডের অধীনে লিগে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে তার ক্লাব। লিগ বর্জনের ঘোষণা দিতে সংগঠকরা আবারও যখন একাট্টা হলেন, সেখানেও তামিমের দেখা নেই। সাবেক টাইগার অধিনায়কের সঙ্গে হঠাৎ কী হলো তাদের?
ব্যাখ্যা দিলেন আবাহনীর পরিচালক বশির আল মামুন, 'তামিমের খেলোয়াড় এবং সংগঠক হিসেবে দ্বৈত ভূমিকা আছে। এটা মনে করিয়েন না যে তামিম আমাদের সঙ্গে নেই, আমরা তামিমের স্ট্যান্ডে নেই।
মোহামেডানের ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান যোগ করলেন, 'ওর (তামিমের) একটা পারসোনাল বিচার-বিবেচনা থাকতেই পারে। আমাদের সঙ্গে ওর এখনও রেগুলার যোগাযোগ আছে, আমাদের সঙ্গেই আছে।'
বিদ্রোহী ক্লাবগুলোর নেতৃত্বে থাকা সংগঠকদের ব্যাখ্যায় ধোঁয়াশা। তবে তামিম সঙ্গে থাকুন বা না থাকুন, বিসিবির বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান আগের মতোই। ৪৩টির সঙ্গে আরও ২টি যোগ হয়ে মোট ৪৫ ক্লাব এখন বিদ্রোহী অবস্থানে। সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলসহ বর্তমান বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, মোহামেডান-আবাহনীর মতো শীর্ষ সারির ক্লাবের সঙ্গে কথাবার্তা এগিয়েছে। অথচ তা অস্বীকার করলেন সংগঠকরা।
মোহামেডানের ক্রিকেট কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুজ্জামান বলেন, 'প্রেস রিলিজ দিয়েছি, এর মাধ্যমে আমরা জানিয়ে দিয়েছি মোহামেডানের অবস্থানটা। এরপর উনি (আমিনুল ইসলাম বুলবুল) কী করেছেন-করেননি, সেটা নিয়ে আমি আর...'
বিসিবি সভাপতি এই ইস্যুতে মিথ্যাচার করেছেন কি–না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বিবেচনার ভারটা সাংবাদিকের ওপরই দিলেন। এরপর বলেন, 'ফারুক ভাই বলেন, বুলবুল ভাই, নান্নু ভাই বলেন, আকরাম ভাইরা কোথা থেকে আজকে...তারা যে আজকে ব্র্যান্ড, আজকে যে তাদের নাম হয়েছে, এটা কোথা থেকে আসছে? এই ক্লাবগুলো থেকেই। আমরাই তাদের সুযোগ করে দিয়েছি খেলার এবং ওনারা এই খেলার মাধ্যমেই তারা তাদের পারফরম্যান্স দেখিয়েছে।'
আবাহনীর বশির আল মামুন বলেন, 'ক্রিকেট প্লেয়াররা যেন জাতিকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারে, তার ভূমিকা কিন্তু ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ে আমরা রাখি পাইওনিয়ার হিসেবে। আমরা যদি না থাকি ক্রিকেটের উন্নতি হবে না।'
ফিক্সিং ইস্যুতে 'রেড মার্ক' দেখিয়ে বিপিএলের নিলাম থেকে ৯ ক্রিকেটারকে বাদ দেয়া কিংবা নারী ক্রিকেটারদের যৌন হয়রানির অভিযোগ নিয়ে কার্যক্রমেও বোর্ডকে ধুয়ে দিয়েছেন ক্লাব প্রতিনিধিরা।
ইন্দিরা রোড ক্রীড়া চক্রের কাউন্সিলর রফিকুল ইসলাম বাবু বলেন, 'কিছু হায়না তাদেরকে (নারী ক্রিকেটার) কীভাবে অপমান করেছে, লজ্জিত করেছে, শুধু ক্রিকেট বোর্ডের কর্মকর্তারা দেখছেন সিলি ব্যাপার। তাদের এটা বোধগম্য হয় না, এটার বিচারের চেষ্টাও তারা করেনি, বরং এটা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে। তারা করুক বা না করুক, এটা আমরা বিচার করব ভবিষ্যতে।'
সুর্যতরুণ ক্লাবের কাউন্সিলর ফাহিম সিনহা বলেন, উইদআউট এনি এভিডেন্স এবং প্রপার জাস্টিফিকেশন–যেটা জনগণের কাছে ওনাদের পৌঁছানো উচিত যে, কী কারণে এদের বাদ দিলাম। আর অভিযুক্তদের যদি শাস্তি দিতে হয় বোর্ডের ভিতরেও তো অনেক অভিযুক্ত আছে, এখন পরিচালক হয়ে আছে। অভিযুক্তদের যদি আমরা প্রমাণ পাওয়ার আগেই শাস্তি দেই, তবে ওনাদেরও শাস্তি হওয়া উচিত।'
আলোচনার জন্য সম্প্রতি ক্লাবগুলোকে চা-চক্রে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলো বিসিবি। কিন্তু, সে ডাকে সাড়া দেয়নি ঐ ৪৫ ক্লাব। সব মিলিয়ে ঘোলাটে পরিস্থিতি। ১২ ক্লাবের দলবদলের মধ্য দিয়ে প্রথম বিভাগ দিয়ে লিগ মাঠে গড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হলেও, আসলে বিরাট অনিশ্চয়তার মধ্যে সবকিছু।
টিজে/এসএন