মহান বিজয় দিবসকে নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েছেন ডাকসুর মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলন সম্পাদক ফাতিমা তাসনিম জুমা। ডিসেম্বরের শুরুতে দেওয়া পোস্ট নিয়ে রীতিমতো সামাজিক মাধ্যমে সমালোচনা চলছে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারী বলছেন জুমা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক অথচ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেই তিনি উল্টোভাবে তুলে ধরছেন।
বিজয় দিবসকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে ফাতিমা তাসনিম জুমা তার ওই পোস্টে লিখেছেন, ‘ডিসেম্বর আমাদের বিজয় ও নিজস্ব আত্মপরিচয়ে পরিচিত হওয়ার গৌরবের মাস।
ব্রিটিশ শোষণের বিরুদ্ধে টিপু সুলতান, তিতুমীর, রজব আলী হাবিলদার, মঙ্গল পান্ডে, লক্ষ্মীবাইসহ, সহস্র শহীদ, যাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছিল ব্রিটিশ সরকার, তাদের ২০০ বছরের সংগ্রামের ফলেই আমরা পেয়েছিলাম ১৯৪৭-এর বহুল কাঙ্ক্ষিত বিজয়।’
পস্টে তিনি বলেন, ‘বিজয়ের সুখ উপভোগের আগেই দুর্ভাগা এই অঞ্চলে আবারও নেমে আসে শাসন নামে শোষণের অন্ধকার। সেখান থেকেই বাংলা ও বাঙালির রাষ্ট্র-আকাঙ্ক্ষার জন্ম। দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা হয়।
সহস্র শহীদের রক্ত, সহস্র বোনের সম্মানের বিনিময়ে অর্জিত হলো বহুল কাঙ্ক্ষিত স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড। আমাদের শহীদেরা আমাদের দিয়ে গেলেন একটুকরো লাল সবুজের পতাকা, নতুন নিজস্ব একান্ত ভূমি, দেশ, জাতীয়তা।’
ডাকসু সদস্য আরো বলেন, ‘তথাপি, আমাদের রাষ্ট্র-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হলো না। স্বৈরাচার, দুঃশাসন, দুর্নীতি, ফ্যাসিবাদ, হেজিমনি, গুম-খুন, বিচারিক ও বিচারবহির্ভূত হত্যার পীড়নে এইটুকু দেশ ও দেশের মানুষ বারবার ক্লান্ত, বিধ্বস্ত।
২০২৪ আমাদের সামনে আরেকবার সুযোগ এনে দিয়েছে রাষ্ট্র-আকাঙ্ক্ষা পূরণের। এ পথে সফল হওয়ার সময় কারা কারা ৭১-পরবর্তী সময়ের মতো গাদ্দারি করল—একদিন ইতিহাসে তাদের নামও উচ্চারিত হবে; দ্বিগুণ ঘৃণায়। মহান বিজয়ের মাসের শুরু আজ, আমাদের নতুন আত্মপরিচয় দেওয়া সব শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা—যাদের রক্তের মূল্যায়ন আমরা কোনো বারই করতে পারি না…’
সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারকারীরা মূলত ক্ষিপ্ত হয়েছেন এই পোস্টে পাকিস্তান, মুক্তিযুদ্ধ, জামায়াতে ইসলামী এসব শব্দ না ব্যবহার করার কারণে। তবে জুমা বলছেন যারা সমালোচনা করার তারা এসব শব্দ ব্যবহার করলেও সমালোচনা করবে।
জান্নাতুল ফেরদৌস জিনিয়া নামের একজন জুমার তীব্র সমালোচনা করে ওই পোস্টে লিখেছেন, ‘এই লজ্জাবোধের জন্যই কি পাকিস্তান শব্দটা লিখতে কষ্ট হয়ে গেল আপু? এই পর্যন্ত আপনার কথা বা কাজ কোনোটাই আমার পার্সোনালি ভুল মনে হয়নি।
তবে এই পোস্ট পড়ার পর কিছু মানুষের কথায় বিশ্বাস চলে আসছে। হয়তো আসলেই আপনারা ৭১ মুছে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। তবে জেনে রাখা ভালো যে এ দেশে ২৪ যেমন থাকবে ৭১ ও থাকবে।’
তৃণ নামের আরেকজন লিখেছেন, ‘তুমি না মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক বিষয়ক সম্পাদক! তোমার লেখার কোথাও তো মুক্তিযুদ্ধ শব্দটা পেলাম না মনা... ’ এর উত্তরে জুমা লিখেছেন, ১৬ ডিসেম্বর কি অন্য কিছুর আপু? এইগুলা খুব লেইম যুক্তি না যে পাকিস্তান নাই কেন, মুক্তিযুদ্ধ নাই কেন? আপনার কি মনে হয় এগুলা থাকলে সমালোচনা আসতো না?’
রিফাত নামের একজন লিখেছেন, ‘সহস্র শহীদ আর সহস্র বোনের ইজ্জত’ মানে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আর বীরঙ্গনার সংখ্যা হাজারখানেক। আর ২টা সংখ্যা সমান সমান? এত বড় লেখার মধ্যে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ শব্দটা কোথাও পেলাম না। ৭১ সালে ঠিক কী হয়েছিল তার উল্লেখ নাই। কার সাথে যুদ্ধ লাগছিল তার উল্লেখ নাই। পড়ে মনে হচ্ছে আমরা বিজয় পেয়েছিলাম সাতচল্লিশে, একাত্তরে না।’
ইএ/এসএন