ইউএনওর কাছে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগে কারাগারে শিক্ষক

নড়াইলের লোহাগড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের চাকরিচ্যুত সাবেক প্রধান শিক্ষক আবদুর রহিম খানের (৫৮) বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকার চাঁদাবাজির অভিযোগ এনে মামলা করেছেন লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আবু রিয়াদ। ওই মামলায় অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে ইউএনও মো. আবু রিয়াদ দেশের একটি গণমাধ্যমকে মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। অভিযুক্ত আব্দুর রহিম খান মল্লিকপুর ইউনিয়নের আতোষপাড়া গ্রামের মৃত মঞ্জেল খানের ছেলে। লোহাগড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে তিনি চাকরিচ্যুত হন।

জানা যায়,  বুধবার (৩ ডিসেম্বর) সকালে ইউএনওর নির্দেশে পুলিশ আবদুর রহিম খানকে আতোষপাড়া তার গ্রামের বাড়ি থেকে আটক করে ইউএনওর কার্যালয়ে নিয়ে আসে। এ সময় উপজেলার বিভিন্ন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, সুধীজন ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পরে তাকে পুলিশ আটক করে থানায় নিয়ে যায়। এরপর ইউএনওর করা চাঁদাবাজি মামলায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়।

মামলায় ইউএনও আবু রিয়াদ উল্লেখ করেন, গত (১ ডিসেম্বর) বিকেলে লোহাগড়া উপজেলা অফিস থেকে ডাক বাংলোর বাসায় ফেরার পথে ইউএনওর গাড়ির গতিরোধ করেন আব্দুর রহিমসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিন থেকে চারজন।

এ সময় তারা নিজেদের এলাকার প্রভাবশালী দাবি করে বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে সম্মানের সঙ্গে চাকরি করতে গেলে ২ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। অন্যথায় সম্মানহানি হবে এমন কিছু প্রকাশ ও প্রচার করবেন বলে হুমকি দেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে লোকজনের উপস্থিতিতে প্রাণনাশের হুমকি দিয়ে অভিযুক্তরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

আরও উল্লেখ করা হয়, ইউএনওর ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল নম্বরে বিভিন্ন সময়ে কুরুচিপূর্ণ মেসেজ ও টাকা চেয়ে হুমকি দিয়ে ক্ষুদে বার্তা পাঠান অভিযুক্ত বহিষ্কৃত শিক্ষক রহিম। 'সাড়ে হারামজাদা সে-ই' নামে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ কবিতা লিখে ইউএনওর ব্যবহৃত মুঠোফোনে পাঠানোর পাশাপাশি তা বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ করে সম্মানহানি করেন অভিযুক্ত। এ ঘটনায় লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কার্যালয়ের আমানত হোসেন ও শরিফুল ইসলামকে ওই মামলার সাক্ষী করা হয়েছে।

জানা যায়, আট বছর আগে অনিয়ম দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে এলাকাবাসীর তোপের মুখে লোহাগড়া মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন বিদ্যালয়টির দায়িত্বে থাকা আব্দুর রহিম খান। পরে তিনি পুনঃনিয়োগ দাবি করে আদালতের দ্বারস্থ হন। আদালত তার বিপক্ষে আদেশ দেন। দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে পুনরায় নিয়োগ পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেন।

শিক্ষকের পরিবার থেকে দাবি করা হয়, নিয়োগ পুনরায় পেতে এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে পক্ষে নিতে অন্য একটি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের মাধ্যমে দুই লাখ টাকা দেয়া হয়। পরে ওই দু'জন ইউনওকে ম্যানেজ করতে না পারায় তারা শিক্ষককে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ফেরত দেন।

আরও জানা যায়, শিক্ষক আব্দুর রহিম চলতি বছরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু রিয়াদের স্বাক্ষর জাল করে রেজুলেশন লেখেন। পরে সেটা জানাজানি হলে সে দফায় ক্ষমা চেয়ে পার পেয়ে যান।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আবু রিয়াদ দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তিনি (শিক্ষক আব্দুর রহিম) অনেক বছর আগে থেকেই চাকরিতে নেই। চাকরি ফিরে পেতে আমাকে নানাভাবে চাপ প্রয়োগ করেন। আমি তার সম্মান বিবেচনায় ভদ্রতার সঙ্গে সহ্য করেছি। তিনি তার নিয়োগ ফিরে পেতে আমার কাছে তদবির করান, কিন্তু তার নিয়োগের ব্যাপারে আমার হাতে কিছুই নেই। তাকে না করে দেয়ার পর থেকে আমাকে নানাভাবে সম্মানহানির চেষ্টা করছেন। সর্বশেষ আমাকে অনেকটা লাঞ্ছিত করে গাড়ি আটকে তিনি চাঁদা চেয়েছেন। অনেকটা বাধ্য হয়ে থানায় মামলা করেছি।’

লোহাগড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) অজিত কুমার রায় বলেন, ‘আব্দুর রহিম খানকে বুধবার আটক করা হয়। ওই রাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের করা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়। বৃহস্পতিবার আদালতে সোপর্দ করা হলে বিজ্ঞ আদালত অভিযুক্তকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।’

এসএস/টিএ

Share this news on:

সর্বশেষ

img
লিবিয়া থেকে দেশে প্রত্যাবাসন করা হচ্ছে আরও ৩১০ বাংলাদেশিকে Dec 05, 2025
img
ইউএনওর কাছে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগে কারাগারে শিক্ষক Dec 05, 2025
img
মার্কিন পরিকল্পনার কিছু অংশের সাথে একমত নয় মস্কো: পুতিন Dec 05, 2025
img
আন্তর্জাতিক সংস্থার ভোটাভুটিতে বাংলাদেশ-স্পেন পারস্পরিক সমর্থনের ঘোষণা Dec 05, 2025
img
৩৮ কোটি টাকার ঋণখেলাপি মান্না, পরিশোধে ব্যাংক নোটিশ Dec 05, 2025
img
মালয়েশিয়ায় প্রবেশ করতে না পারা কর্মীদের সুখবর দিলো বাংলাদেশ হাইকমিশন Dec 05, 2025
img
রোববার থেকে বার্ষিক পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রাথমিক শিক্ষকদের Dec 05, 2025
img
গত কয়েক বছরে ২৮ লাখ কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে: নুরুল হক নুর Dec 05, 2025
img
পদ ফিরে পেলেন বিএনপি নেতা মাহফুজুর রহমান Dec 04, 2025
img
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে ঐতিহাসিক: সালাহউদ্দিন Dec 04, 2025
img
দেশের পথে জোবাইদা রহমান, সরাসরি যাবেন হাসপাতালে Dec 04, 2025
img
খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে আইজিপি ও ডিএমপি কমিশনার Dec 04, 2025
img
সৌরসেনীর মন্তব্যে ফের জোরালো প্রেমের গুঞ্জন! Dec 04, 2025
img
গাইবান্ধায় এনিসিপির অস্থায়ী কার্যালয়ে তালা Dec 04, 2025
img
বিপিএলে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি চান লিটন দাস Dec 04, 2025
img
আন্দোলনরত ৪২ শিক্ষক নেতাকে অন্য জেলায় বদলি Dec 04, 2025
img
জান্নাতের টিকেট দিতে পারবো না, ভোট দিলে উন্নয়ন করবো: মির্জা আব্বাস Dec 04, 2025
img
‘বাকসু’ নিজেদের রাখতে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীদের হুঁশিয়ারি Dec 04, 2025
img
নাটোর-৩ আসনে ধানের শীষ পেলেন অধ্যক্ষ আনু Dec 04, 2025
img
৫৪ বছর পরে সুযোগ এসেছে আলেম-ওলামাদের ক্ষমতায় আসার: ধর্ম উপদেষ্টা Dec 04, 2025