পার্থে দুইদিনেই টেস্ট হারার পর ঘুরে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার করেছিল ইংল্যান্ড। ব্রিসবেন টেস্ট চারদিনে গড়ালেও ফলাফলে পরিবর্তন নেই। গ্যাবায় ইংল্যান্ড হেরেছে ৮ উইকেটের ব্যবধানে। প্রথম দুই টেস্ট জিতে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে গেছে ২-০ ব্যবধানে।
ব্রিসবেন টেস্টে ৮ উইকেটের হারের পর ইংল্যান্ডের কোচ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম দাবি করেছেন যে, তার দল অ্যাশেজের দ্বিতীয় টেস্টের জন্য 'অতিরিক্ত প্রস্তুতি' নিয়েছিল এবং অ্যাডিলেড টেস্টের আগে নুসা রিসোর্ট টাউন সফরের পরিকল্পনাকে তিনি সমর্থন করেছেন।
ইংল্যান্ড দ্বিতীয় টেস্টের আগে পাঁচবার অনুশীলন করেছিল, একবার অ্যালান বর্ডার ফিল্ডে এবং চারবার গ্যাবায়। অনুশীলনের জন্য তারা ক্যানবেরায় আয়োজিত প্রধানমন্ত্রী একাদশের বিপক্ষে গোলাপি বলের প্রস্তুতি ম্যাচটিও খেলেনি। তবে অস্ট্রেলিয়ান সামারের তপ্ত আবহাওয়ায় চারদিন ক্লান্তিকর লড়াই শেষে ইংল্যান্ড বড় ব্যবধানে হেরেছে এবং ম্যাককালাম মনে করেন অতিরিক্ত অনুশীলনই তার দলের ক্ষতি করেছে।
দলের হারের পর ম্যাককালাম চ্যানেল ৭-কে বলেন, 'এই টেস্টের আগে আমার সত্যিই মনে হয়েছিল আমরা অতিরিক্ত প্রস্তুতি নিয়েছি। আমরা পাঁচটি তীব্র অনুশীলন সেশন করেছি। যুদ্ধের উত্তাপে কখনো কখনো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নিজেকে সতেজ রাখা এবং মাথাটা পরিষ্কার রাখা।'
তিনি আরও বলেন, 'এখন ছেলেদের কয়েকদিন বিরতি দরকার। কিছু অনুশীলন পদ্ধতিও বদলানো দরকার। আমি ঘোড়দৌড়ের মানুষ, একইভাবে ঘোড়াকে বারবার দৌড় করানো যায় না, কখনো ফিগার-এইট ট্র্যাক, কখনো ছোট জাম্প, এভাবে তাকে চাঙ্গা করতে হয়। আমরা আগামী কয়েকদিনে কিছু বিকল্প পদ্ধতি চেষ্টা করব।'
এই সফরজুড়ে ইংল্যান্ডের প্রস্তুতি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে, বিশেষ করে পার্থে লায়ন্সদের বিপক্ষে একটিমাত্র ওয়ার্ম-আপ ম্যাচ খেলা এবং টেস্টের মাঝখানে গোলাপি বলের প্রধানমন্ত্রী একাদশের ম্যাচ খেলার সুযোগ ফিরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে।
স্টুয়ার্ট ব্রড বলেছিলেন ইংল্যান্ডের বোলাররা 'আন্ডারকুকড' ছিল; আর মাইকেল ভন বলেন, 'আমাকে কেউ বোঝাতে পারবে না যে এই ইংল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট দলকে সিরিজ জেতার সর্বোচ্চ সুযোগ করে দিয়েছে।'
দল এবং সাপোর্ট স্টাফরা মঙ্গলবার (৯ নভেম্বর) নুসায় চার রাতের 'সিরিজের মধ্যবিরতি' কাটাতে যাবে, যা ম্যাককালামের মতে প্রথম দুই টেস্টের অভিজ্ঞতা পর্যালোচনার সুযোগ করে দেবে।
তিনি বলেন, 'গত দু’সপ্তাহ খুব কঠিন কেটেছে। সেখানে একটু স্বাভাবিক সময় কাটানো, ধুলোবালি ঝেড়ে ফেলার মতো হবে। তারপর সিরিজে ফিরে আসার পরিকল্পনা শুরু করব।'
অ্যাডিলেডে তৃতীয় টেস্টের আগে ইংল্যান্ড পাঁচবারের পরিবর্তে তিনবার অনুশীলন করবে। অধিনায়ক বেন স্টোকসও নুসা সফরকে সমর্থন করে বলেছেন, এটাই খেলোয়াড়দের সতেজ রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
স্টোকস বলেন, 'আমরা এখানে চার সপ্তাহ ধরে আছি। মাঠ ও মাঠের বাইরে মিলিয়ে সবকিছুই খুব চাপের ছিল। খেলা যেমন শারীরিক, তেমনি মানসিক দিকটাও বড় বিষয়। আমি জানি যখন মাথা ঠিক মতো কাজ না করে, তখন খেলা তোমাকে কতটা ভোগাতে পারে। দল হিসেবে কয়েকদিনের জন্য চাপ থেকে দূরে থাকা খুব জরুরি। এটি মানে এই নয় যে আমরা সবকিছু ভুলে যাব। আলাপ-আলোচনা চলতেই থাকবে। কিন্তু মাথা রিফ্রেশ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।'
ম্যাককালাম এবং স্টোকস দু’জনই নতুন বলে বোলিং ব্যর্থতাকে ম্যাচের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত হিসেবে দেখিয়েছেন। দ্বিতীয় দিনের চা বিরতির আগে অস্ট্রেলিয়া ২১ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ১৩০ রান তুলে ফেলে।
ম্যাককালাম বলেন, 'আমরা খুব চেষ্টা করছিলাম। প্রথম ইনিংসে আমাদের স্কোর ভালো ছিল, আর জানতাম দ্রুত উইকেট নিতে পারলে ম্যাচে মোড় ঘুরতে পারত। কিন্তু অতিরিক্ত চেষ্টায় লাইন-লেন্থ নষ্ট হয়ে যায়, চাপ ধরে রাখা যায়নি। আমরা স্বীকার করি, ওই সময় আমরা ভয়াবহ বোলিং করেছি, আর অস্ট্রেলিয়া সহজেই রান তুলেছে।'
স্টোকস এর দায় ব্রেইডন কার্সের পাশাপাশি নিজের কাঁধেও নিচ্ছেন, 'আমি এবং ব্রাইডন চাপ ধরে রাখতে পারিনি। জোফরা আর গাস যে স্পেল করেছিল, আমরা টিকিয়ে রাখতে পারিনি।'
ম্যাককালাম ইংল্যান্ডের ফিল্ডিংকেও বড় সমস্যা হিসেবে উল্লেখ করেন, প্রথম ইনিংসে পাঁচটি ক্যাচ মিস হওয়ায় তারা কার্যত ১০ উইকেটের বদলে ১৫ উইকেট নিতে বাধ্য হয়েছিল।
তিনি বলেন, 'ব্যাটে ঘাটতি ছিল, বলে ঘাটতি ছিল, আর ফিল্ডিংতেও ঘাটতি ছিল। ভালো দলের বিরুদ্ধে ১০ উইকেট নেওয়াই কঠিন, সেখানে ১৫টা নিতে গেলে কী পরিস্থিতি দাঁড়ায় সবাই জানে।'
এমআর/টিকে