উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে লন্ডন নেওয়া এ মুহূর্তে অনিশ্চিত। আপাতত দেশেই তাঁর চিকিৎসা চালিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। এখন লন্ডন যাচ্ছেন না, তাঁকে বহন করার জন্য আজ সকালে যে বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকায় আসার কথা ছিল সেটিও আসছে না। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটির শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের যে অনুমতি নেওয়া হয়েছিল সেটি প্রত্যাহারের আবেদন করেছে প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ। বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। তবে বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার উন্নতি সাপেক্ষে মেডিকেল বোর্ড যখন বিদেশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেবে- তখন আবারও এয়ার অ্যাম্বুলেন্স চাওয়া হতে পারে। দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য গত কিছুদিন ধরেই তাঁকে বিদেশে নেওয়ার তোড়জোড় চলে।
জানা গেছে, এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি কাতার সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জার্মানভিত্তিক এফএআই এভিয়েশন গ্রুপ থেকে ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। তারা স্থানীয় সমন্বয়কারী সংস্থার মাধ্যমে পূর্বের স্লট অনুমোদন প্রত্যাহারের আনুষ্ঠানিক আবেদন করেছে। এটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এর আগে রবিবার জমা দেওয়া অপারেটরের প্রাথমিক আবেদনের ভিত্তিতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টায় অবতরণ ও একই দিন রাত ৯টার দিকে উড্ডয়নের অনুমোদন নিয়েছিল।
মেডিকেল বোর্ডের চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থায় বিদেশ পাঠানোর সময় বারবার পেছানো হচ্ছে। দীর্ঘ যাত্রার ঝুঁকি বিবেচনায় নেওয়া এই সিদ্ধান্ত এখন পুরোপুরি নির্ভর করছে দেশনেত্রীর শারীরিক অবস্থার পরিবর্তনের ওপর।
গতকাল রাত পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তাঁর শারীরিক অবস্থায় নতুন কোনো উন্নতি বা অবনতি কোনোটিই হয়নি। তাঁর ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের সমস্যা কিছু সময় নিয়ন্ত্রণে থাকলেও- মাঝেমধ্যে হঠাৎ করেই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। এ কারণে তাঁর সার্বিক অবস্থা স্থিতিশীল বলা যাচ্ছে না। সর্বশেষ পরীক্ষায় কিডনি ও ফুসফুসের অবস্থার কিছুটা অগ্রগতি দেখা গেছে। তবে এসব উন্নতি সামগ্রিক ঝুঁকি কমাতে যথেষ্ট নয়। তিনি এখনো আশঙ্কামুক্ত নন বলেই চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন। এই অনিশ্চিত অবস্থার কারণে খালেদা জিয়াকে বিদেশে পাঠানোর সম্ভাব্য তারিখ বারবার পরিবর্তিত হচ্ছে। খালেদা জিয়া লন্ডনে যেতে পারবেন কি না, সেটি পুরোটাই নির্ভর করছে তাঁর শারীরিক অবস্থার ওপর। তাঁর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেনও বলেছেন, খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরিস্থিতির ওপরই নির্ভর করছে তাঁর বাইরে যাওয়া।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে একাধিক জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভুগছেন। এই অসুস্থতাগুলোর মধ্যে লিভার সিরোসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস (বাত) এবং কিডনি জটিলতা অন্যতম।
শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে ২৩ নভেম্বর রাজধানীর বসুন্ধরায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয় খালেদা জিয়াকে। হাসপাতালে ভর্তির পর তাঁর শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটে। ২৭ নভেম্বর তাঁকে সিসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। বর্তমানে দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গঠিত মেডিকেল বোর্ডের নিবিড় পর্যবেক্ষণে তিনি প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে ‘অত্যন্ত সংকটাপন্ন’ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। এই চিকিৎসার সমন্বয় করছেন তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্রবধূ ডা. জুবাইদা রহমান।
এসএস/টিকে