জনগণ যদি দায়িত্ব দেয়- বিএনপি আবারও সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত : তারেক রহমান

দুর্নীতি কীভাবে প্রতিদিনের জীবনে সাধারণ মানুষের অগ্রগতি থামিয়ে দিচ্ছে-তা আবারও সামনে এসেছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবসের প্রেক্ষাপটে। সরকারি সেবা পেতে নাগরিকের ভোগান্তি, বাজারে অস্থিতিশীলতা, শিক্ষার মানের অবনতি-সব কিছুর মূলেই রয়েছে গভীর দুর্নীতি চক্র। এমন বাস্তবতায় বিএনপি তাদের শাসনামলের দুর্নীতি প্রতিরোধের পদক্ষেপ স্মরণ করিয়ে দিয়ে নতুন করে জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার অঙ্গীকার জানিয়েছে তারেক রহমান। 

আজ মঙ্গলবার (০৯ ডিসেম্বর,২০২৫) তারেক রহমান তার ভেরিফাইড ফেসবুকে একটি পোস্টে এসব কথা বলেন।

বাংলাদেশ টাইমস এর পাঠকদের জন্য তারেক রহমান এর পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ

দুর্নীতি কীভাবে বাংলাদেশকে পঙ্গু করে দিচ্ছে- তা বুঝতে দূরে যাওয়ার দরকার নেই। মেধার ভিত্তিতে চাকরি খুঁজতে বের হওয়া একজন গ্র্যাজুয়েটের সঙ্গে কথা বললেই বুঝবেন। মাসের পর মাস ধরে একটি সাধারণ সরকারি সেবা পেতে হিমশিম খাওয়া কৃষকের দিকে তাকান। হাসপাতালে গিয়ে এক তরুণের পরিবার কীভাবে ভোগান্তিতে পড়ে, সেটা শুনুন। অথবা ব্যবসা বাঁচিয়ে রাখতে ঘুষ দিতে বাধ্য হওয়া উদ্যোক্তাদের ভোগান্তি দেখুন।


খাবারের দাম কেন বাড়ে, স্কুলে ভালো পড়াশোনা কেন মেলে না, রাস্তায় কেন নিরাপত্তা নেই- সব কিছুর পিছনে সেই একই কারণ: দুর্নীতি। এটা লাখো মানুষের প্রতিদিনের জীবনকে দমবন্ধ করে ফেলেছে।


বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই নতুন নয়, এটা বহু যুগের আলোচনার বিষয়। আন্তর্জাতিক দুর্নীতি বিরোধী দিবস আমাদের সেই লড়াইয়ের কথা মনে করিয়ে দেয়, আর মনে করিয়ে দেয় সেই সময়টাও, যখন বাংলাদেশ সত্যিকারের অগ্রগতি করেছিল। আর সেই সময়টা এসেছে মূলত বিএনপির আমলে।


রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রশাসনে শৃঙ্খলা ফেরানো, পরিচ্ছন্য সরকারি সেবা আর অর্থনীতিকে মুক্ত করার কাজে হাত দিয়েছিলেন- যা অনিয়ম ও ক্ষমতার অপব্যবহার কমিয়ে দিয়েছিল।


তারপর প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সময়ে সরকারি প্রতিষ্ঠানে আধুনিকায়ন শুরু হয়; নতুন ক্রয় নীতিমালা, কঠোর আর্থিক আইন, শক্তিশালী অডিট ব্যবস্থা, আর পরিষ্কার নজরদারি।


সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ ছিল ২০০৪ সালে ‘দুদক’ গঠন; একটি স্বাধীন কমিশন, যেখানে সরকার চাইলে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। বিশ্বব্যাংক, এডিবি সবাই বলেছিল- এটা বাংলাদেশের জবাবদিহিতার বড় অগ্রগতি।


টিআইবি’র জরিপেও দেখা গেছে- ২০০২ থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে পরিস্থিতি উন্নতি হয়েছে। মানুষ নিজেরাই বলেছে- দুর্নীতি কমেছে। এটা কোনো গল্প নয়, এটা তখনকার সংস্কারের প্রমাণ।


বিএনপি গর্ব করতে পারে কিছু বড় পরিবর্তনের জন্য:


১। শক্তিশালী অর্থ ব্যবস্থাপনা: বাজেট নিয়ন্ত্রণ, অডিট, ব্যাংকিং ও মানি লন্ডারিং-বিরোধী আইন।


২। স্বচ্ছ ক্রয় নীতি: প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র, নিয়মের মধ্যে সরকারি ক্রয়- যা পরবর্তীতে দেশের সবচেয়ে বড় স্বচ্ছতার আইনের ভিত্তি তৈরি করে।


৩। উন্মুক্ত বাজার: টেলিকম, মিডিয়া, বিমান পরিবহন; যেখানে প্রতিযোগিতা বাড়ায় দুর্নীতি কমে, সাধারণ মানুষের সুযোগ বাড়ে।


৪। ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ: প্রশাসন কম জটিল, কম ইচ্ছাধীন, বেশি মানুষের কাছে জবাবদিহিতা।

তাই কথাটা স্পষ্ট- দুর্নীতি কমানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিক রেকর্ড একমাত্র বিএনপি’রই আছে।


আগামী দিনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ আরও শক্তভাবে চালাতে বিএনপির পরিকল্পনা:


১। প্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা: আদালত, দুদক, নির্বাচন কমিশন, সরকারি সেবা; কেউই যেন রাজনৈতিক চাপের মধ্যে না থাকে।


২। পুরোপুরি স্বচ্ছতা: উন্মুক্ত দরপত্র ব্যবস্থা, সম্পদ বিবরণী, রিয়েল-টাইম অডিট, শক্তিশালী তথ্য অধিকার আইন।


৩। বিচার ও আইনশৃঙ্খলা সংস্কার: পেশাদার পুলিশিং, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, ডিজিটাল তথ্য-প্রমাণ।


৪। ই-গভর্ন্যান্স: লাইসেন্স, জমি, পেমেন্ট; সব অনলাইনে এনে ঘুষের সুযোগ কমানো (বিশ্বমান অনুযায়ী ৩০-৬০% দুর্নীতি কমতে পারে)।


৫। হুইসলব্লোয়ার সুরক্ষা: অনিয়ম ফাঁস করতে যারা সাহস দেখায়, তাদের নিরাপত্তা প্রদান।


৬। নৈতিক শিক্ষা: স্কুল-কলেজ থেকেই সততার চর্চা পাঠ্যসূচির অন্তর্ভূক্ত করা।


৭। শক্তিশালী আর্থিক নজরদারি: ডিজিটাল ব্যয় ট্র্যাকিং ও স্বাধীন অডিট, সংসদের কঠোর তদারকি।


বহু বছর অব্যবস্থাপনার পর দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই অবশ্যই কঠিন হবে। কিন্তু বাংলাদেশের ইতিহাসই প্রমাণ করে, যখন সৎ নেতৃত্ব, শৃঙ্খলা ও জনগণের সমর্থন একসাথে আসে, তখন পরিবর্তন অসম্ভব নয়।


জনগণ যদি দায়িত্ব দেয়- বিএনপি আবারও সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত।


টিকে/

Share this news on:

সর্বশেষ

img
সৃজলার সঙ্গে বন্ধুত্ব আজও অটুট: শন বন্দ্যোপাধ্যায় Dec 09, 2025
img
ওমরাহ পালনে সৌদি আরবের পথে ওমর সানী Dec 09, 2025
img
ক্ষমতাচ্যুতদের পালিয়ে যেতে সহযোগিতাকারীদের ভোট না দেয়ার আহ্বান দুদক চেয়ারম্যানের Dec 09, 2025
img
কিউবার সাবেক অর্থমন্ত্রীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড Dec 09, 2025
img
জীবনের কষ্টে কখনও ভেঙে পড়বেন না: রিয়া Dec 09, 2025
img
মাত্র ১৫ টাকায় ভিডিও কলের সুযোগ পাবেন কারাবন্দিরা Dec 09, 2025
img
এনইআইআর সংস্কারের দাবিতে বিটিআরসির সঙ্গে বৈঠকে মোবাইল ব্যবসায়ীরা Dec 09, 2025
img
সিরাজগঞ্জে জামায়াত নেতাকর্মীদের ওপর হামলায় আহত ১৫ Dec 09, 2025
img
জটিল ভ্যাট আইনের কারণে কাঙ্ক্ষিত মূসক আদায় হচ্ছে না: এনবিআর চেয়ারম্যান Dec 09, 2025
img
ঢাকা কলেজ ও আইডিয়ালের শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ Dec 09, 2025
img
সারা দেশে বাড়তে পারে রাতের তাপমাত্রা Dec 09, 2025
img
জনগণ যদি দায়িত্ব দেয়- বিএনপি আবারও সেই লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত : তারেক রহমান Dec 09, 2025
img
চাকরি বিধিমালা প্রণয়নের দাবিতে মেট্রোরেল কর্মচারীদের অবস্থান কর্মসূচি Dec 09, 2025
img
৩১ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক পদে পদোন্নতি Dec 09, 2025
img
গাজীপুরে কারখানা বন্ধের প্রতিবাদে শ্রমিকদের বিক্ষোভ Dec 09, 2025
img
অর্থ পাচারকারীদের সামাজিকভাবে ঘৃণার আহ্বান ড. সালেহউদ্দিনের Dec 09, 2025
img
৪ নারীর হতে বেগম রোকেয়া পদক তুলে দিলেন প্রধান উপদেষ্টা Dec 09, 2025
জীবনের সবচেয়ে বড় ২টি নিয়ামত | ইসলামিক টিপস Dec 09, 2025
img
আইপিএল নিলামে নেই সাকিব আল হাসানের নাম Dec 09, 2025
img
ভেঙে ফেলা মূল বাবরি মসজিদের ইট হুমায়ুনের হাতে তুলে দেবেন সাবেক সিআরপিএফ সদস্য Dec 09, 2025