ফিলিস্তিনের গাজায় যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও তা শত শতবার লঙ্ঘিত হয়েছে— এমন অভিযোগ তুলে ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে উপত্যকাটির ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী হামাস। তারা বলছে, যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয়েও সেই অঙ্গীকার ভঙ্গের ধারা চলতে থাকলে শান্তি প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপে এগোনো সম্ভব নয়। আর এ পরিস্থিতিতে মধ্যস্থতাকারীদের ভূমিকা আরও জোরদার করা জরুরি। খবর আল জাজিরা
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন চালিয়ে গেলে সমঝোতার পরবর্তী ধাপে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে হামাস। গাজা কর্তৃপক্ষের হিসাব অনুযায়ী, গত অক্টোবর থেকে কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি এ পর্যন্ত কমপক্ষে ৭৩৮ বার লঙ্ঘন করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলকে তার অঙ্গীকার সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়নে চাপ দেয়ার জন্য হামাসের কর্মকর্তা হুসাম বদরান আন্তর্জাতিক মধ্যস্থতাকারীদের আহ্বান জানিয়েছেন।
বদরান বলেন, ‘ইসরায়েল চুক্তিভঙ্গ ও দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া বন্ধ না করলে যুদ্ধবিরতির পরবর্তী ধাপ শুরু হতে পারে না... হামাস মধ্যস্থতাকারীদের বলেছে, প্রথম ধাপের বাস্তবায়ন সম্পন্ন করতে ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়াতে হবে।’
গত ১০ অক্টোবর কার্যকর হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে গাজায় আটক ব্যক্তিদের বিনিময়ে ইসরায়েলের হাতে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি এবং গাজা থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর আংশিক প্রত্যাহার অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে পরবর্তী ধাপের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোর মধ্যে গাজার ভবিষ্যৎ শাসনব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানো হবে কি না এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত ‘বোর্ড অব পিস’–এর গঠনের মতো বিষয়ও রয়েছে। তবে এসব বিষয় এখনও অনির্ধারিত অবস্থায় রয়েছে।
এদিকে যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ইসরায়েলি হামলা অব্যাহত থাকায় ফিলিস্তিনসহ আন্তর্জাতিক মহলে ক্ষোভ বাড়ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানায়, যুদ্ধবিরতি কার্যকর হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৩৭৭ জন নিহত এবং ৯৮৭ জন আহত হয়েছেন।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা আল–জাজিরাকে জানান, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপ নিয়ে আলোচনা এগোচ্ছে, কিন্তু এখনও কয়েকটি বড় বাধা কাটেনি। যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যাশা, ২০২৬ সালের শুরুর দিকেই আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতা বাহিনী গাজায় মোতায়েন শুরু হতে পারে। বর্তমানে কোন কোন দেশ এ বাহিনীতে অংশ নেবে, নেতৃত্ব কেমন হবে এবং এর কার্যপরিধি কী হবে— এসব বিষয়েই আলোচনা হচ্ছে।
মার্কিন কর্মকর্তা আরও বলেন, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ অনুমোদিত যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনায় স্পষ্টভাবে বলা আছে— ইসরায়েলকে পুরোপুরি গাজা থেকে সরে যেতে হবে এবং হামাসকে নিরস্ত্র হতে হবে। গাজায় স্থানীয় জনগণের ভেতর থেকেই একটি পুলিশ বাহিনী গঠনের বিষয়েও আলোচনা চলছে।
গাজায় এখনও প্রায় ৫৮ শতাংশ এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী অবস্থান করছে। যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে তাদের পূর্ণ প্রত্যাহারের কথা থাকলেও এ বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও সময়সীমা উল্লেখ নেই।
ইএ/এসএন