ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অলরাউন্ডার যুবরাজ সিংয়ের জন্মদিন আজ। ১৯৮১ সালের ১২ ডিসেম্বর পাঞ্জাবের চণ্ডীগড়ে জন্মগ্রহণ করেন তিনি।
যুবরাজ সিং ভারতীয় দলের প্রাক্তন অলরাউন্ডার, যিনি সব ধরনের ফরম্যাটেই দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। ২০০৭ টি-টোয়েন্টি ও ২০১১ একদিনের বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন তিনি।
তাঁর বাবা যোগরাজ সিং ছিলেন ভারতের প্রাক্তন ক্রিকেটার। ছোটবেলায় টেনিস এবং স্কেটিংয়ের প্রতি বেশি আগ্রহ ছিল যুবরাজ সিংয়ের। অনূর্ধ্ব ১৪ স্কেটিং চ্যাম্পিয়নশিপে জাতীয় চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলেন যুবরাজ। তাঁর বাবা সেই পদক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ছেলেকে বলেছিলেন স্কেটিং ছেড়ে ক্রিকেটে মনোযোগ দিতে। তারপর থেকেই ক্রিকেটে আসা যুবরাজের। চণ্ডীগড়ের ডিএভি পাবলিক স্কুলে পড়াশোনা করার সময়ই তিনি ক্রিকেটার হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেন।
১৩ বছর ১১ মাস বয়সেই পাঞ্জাবের অনূর্ধ্ব ১৬ দলে সুযোগ পান যুবরাজ। অনূর্ধ্ব ১৬ ক্রিকেটে সাফল্য তাঁকে পাঞ্জাবের অনূর্ধ্ব ১৯ দলে সুযোগ করে দেয়। হিমাচল প্রদেশের বিরুদ্ধে ১৩৭ রানে অপরাজিত ছিলেন। এই ইনিংস তাঁকে পাঞ্জাব রঞ্জি দলের সুযোগ করে দেয়।
১৯৯৭-৯৮ মরশুমে ওড়িশার বিরুদ্ধে রঞ্জি অভিষেক যুবরাজ সিংয়ের। রঞ্জি অভিষেকেই শূন্য রানে আউট হয়েছিলেন। এরপর অনূর্ধ্ব ১৯ কুচবিহার ট্রফির ফাইনালে মহেন্দ্র সিং ধোনির নেতৃত্বাধীন বিহারের বিরুদ্ধে ৪০৪ বলে ৩৫৮ রান করেছিলেন। এরপর সেই বছরই অনূর্ধ্ব ১৯ ভারতীয় দলের সুযোগ পান। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে তৃতীয় একদিনের ম্যাচে ৫৫ বলে ৮৯ রান করেন। ১৯৯৯-২০০০ মরশুমে হরিয়ানার বিরুদ্ধে রঞ্জি ট্রফিতে ১৫৯ রান করেছিলেন যুবরাজ। ২০০০ সালে অনূর্ধ্ব ১৯ বিশ্বকাপজয়ী ভারতীয় দলেও ছিলেন। অলরাউন্ড পারফরম্যান্সের সুবাদে তিনি প্রতিযোগিতার সেরা ক্রিকেটারের পুরস্কার পান। এরপর ২০০০ সালে তিনি জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে সুযোগ পান।
ঘরোয়া ক্রিকেটে দুরন্ত সাফল্য অল্পদিনের মধ্যেই যুবরাজের সামনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের দরজা খুলে দেয়। ২০০০ সালে তিনি জাতীয় দলে ডাক পান। অক্টোবরে আইসিসির নকআউট প্রতিযোগিতায় কেনিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের ক্রিকেটে অভিষেক যুবরাজ সিংয়ের। ওই প্রতিযোগিতায় কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ৮০ বলে ৮৪ রান করেছিলেন। ম্যাচের সেরার পুরস্কারও পেয়েছিলেন যুবরাজ।
এরপর ভারত, শ্রীলঙ্কা ও জিম্বাবোয়ের বিরুদ্ধে ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে ছিলেন। কিন্তু চূড়ান্ত ব্যর্থ হন। এরপর ২০০০ সালের ডিসেম্বরে জাতীয় দল থেকে বাদ পড়েন। ২০০১ সালে আবার জাতীয় দলে ফিরে আসেন। ২০০২ সালে ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে দুরন্ত পারফরম্যান্স করেছিলেন যুবরাজ। ফাইনালে মোহম্মদ কাইফের সঙ্গে জুটি বেঁধে দলকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন। ২০০৩ বিশ্বকাপেও দলে ছিলেন। এরপর ২০০৬ সালে টেস্ট দলে ডাক পান। অক্টোবরে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে মোহালিতে টেস্ট অভিষেক। অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২০ রানে আউট হয়েছিলেন যুবরাজ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ রানে অপরাজিত ছিলেন।
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও ভারতীয় দলের সদস্য ছিলেন যুবরাজ। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেপ্টেম্বরে তাঁর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অভিষেক। ওই বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের স্টুয়ার্ট ব্রডের এক ওভারে ছয়-ছটি ছক্কা হাঁকিয়ে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন। জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর একটানা খেলে গিয়েছিলেন। খারাপ ফর্মের জন্য ২০১০ সালে তিনি প্রথম জাতীয় দল থেকে বাদ যান। তিনি আবার দারুণভাবেই জাতীয় দলে ফিরে আসেন এবং ২০১১ বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে জায়গা করে নেন। গোটা প্রতিযোগিতায় তিনি ৩৬২ রান করেছিলেন এবং ১৫ উইকেট তুলে নেন। ওই বিশ্বকাপে তিনি ৪ বার ম্যান অফ দ্যা ম্যাচের পুরস্কার পেয়েছিলেন এবং বিশ্বকাপের সেরা ক্রিকেটারও নির্বাচিত হয়েছিলেন।
৪০ টি টেস্ট খেলেছিলেন যুবরাজ। রান করেন ১৯০০, সর্বোচ্চ ১৫৯। গড় ৩৩.৯২। সেঞ্চুরি ৩ টি, হাফ সেঞ্চুরি ১১ টি। টেস্টে তাঁর ঝুলিতে ৯ উইকেট। ইনিংসের সেরা বোলিং ৯ রানে ২ উইকেট। ম্যাচে সেরা ২০ রানে ২ উইকেট। ৩০৪ টি একদিনের ম্যাচ খেলেছেন। রান করেছেন ৮৭০১। গড় ৩৬.৫৫। সেঞ্চুরি করেছেন ১৪ টি, হাফ সেঞ্চুরি ৫২ টি। একদিনের ক্রিকেটে উইকেট নিয়েছেন ১১১ টি। সেরা বোলিং ৩১ রানে ৫ উইকেট। দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন ৫৮ টি। রান করেছেন ১১৭৭। সর্বোচ্চ অপরাজিত ৭৭। হাফ সেঞ্চুরি ৮ টি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে উইকেট নিয়েছেন ২৮ টি, সেরা বোলিং ১৭ রানে ৩ উইকেট।
একাধিক কৃতিত্ব রয়েছে যুবরাজ সিংয়ের। টি-টোয়েন্টির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিনি বিশ্বের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এক ওভারে ছয়-ছ'টি ছক্কা মারেন। এছাড়া টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে দ্রুততম হাফ সেঞ্চুরির রেকর্ডও তাঁর দখলে। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ১২ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছিলেন।
২০১১ বিশ্বকাপের পর তাঁর ক্যান্সার ধরা পড়ে এবং চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে আবার ক্রিকেটে ফিরে আসেন। ২০১৪ এবং ২০১৫ আইপিএলে তিনি সর্বোচ্চ মূল্যের ক্রিকেটার ছিলেন। IPL-য়ে তিনি দিল্লি ডেয়ারডেভিলস, পাঞ্জাব কিংস, মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর এবং সানরাইজার্স হায়দরাবাদের হয়ে খেলেছেন। মোট ১৩৯টি আইপিএল ম্যাচ খেলেছেন যুবরাজ। রান করেছেন ২৬৫১। সর্বোচ্চ ৮৩। স্ট্রাইক রেট ১২৯। হাফ সেঞ্চুরি করেছেন ১৩ টি। ১২৯ ম্যাচে উইকেট নিয়েছেন ৩৬ টি।
২০১২ সালে অর্জুন পুরস্কার পান যুবরাজ। ২০১৪ সালে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত হন। ২০১৯ সালের ১০ জুন সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর নেন।
ইএ/এসএন