বেঙ্গালুরুর এক সাধারণ মরাঠি পরিবারে জন্ম নেওয়া সেই ছেলেটির নাম তখন খুব কম মানুষই জানত। সংসারে অর্থকষ্ট, বাবার আগে সময়েই অবসর, ছ’জনের পরিবারের দায় সব মিলেই রজনীকান্তের শৈশব ছিল সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি। কখনও কুলি, কখনও কাঠের কাজ একসময় বাস কনডাক্টরের চাকরি জোটে তাঁর হাতে। কিন্তু মানুষের মধ্যমণি হয়ে ওঠার এক অদ্ভুত ক্ষমতা যেন শুরু থেকেই ছিল রজনীর মধ্যে। বাসে টিকিট দেওয়ার সময়ও তিনি যাত্রীদের হাসিয়ে রাখতেন, তাঁর স্টাইল আর ভঙ্গিতে মুগ্ধ হয়ে লাইন দিয়ে সেই বাস ধরতেন মানুষ।

অভিনয়ের টান তাঁকে নিয়ে যায় মাদ্রাজ ফিল্ম ইনস্টিটিউটে। সেখানেই চোখে পড়ে যান কিংবদন্তি পরিচালক কে বালাচন্দ্রের। তাঁর পরামর্শেই রজনী শেখেন তামিল ভাষা, প্রস্তুত হন বড় পর্দার জন্য। ১৯৭৫ সালে ‘অপূর্বা রাগাঙ্গাল’-এ অভিনয়ের মাঝেই জন্ম নিল দক্ষিণী সিনেমার এক নতুন যুগ। তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। একের পর এক চরিত্রে তিনি ভেঙেছেন নিয়ম, তৈরি করেছেন নিজস্ব স্টাইল, আর হয়ে উঠেছেন দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় মুখগুলির একটি।
বাস কন্ডাক্টর থেকে রুপালি পর্দার সুপারস্টার রজনীকান্তের যাত্রা তাই কেবল একটি নায়কের উত্থান নয়, বরং সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে উঠে এসে অসাধারণ হয়ে ওঠার এক প্রতীকী গল্প। আজ তাঁর বয়স পঁচাত্তর, তবুও তাঁর জনপ্রিয়তা অনন্য। দক্ষিণে তিনি শুধু অভিনেতা নন, এক শক্তিশালী সাংস্কৃতিক প্রভাব, যাঁকে পূজা করেন ভক্তরা। তাঁর ছবি মানেই বক্সঅফিসে নিশ্চিন্ত প্রযোজক, হলজুড়ে উৎসবের আবহ।
এখনো তিনি ভারতের অন্যতম উচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত অভিনেতা। কোনও আভিজাত্যের ছায়া ছাড়াই, নিছক প্রতিভা, পরিশ্রম আর অদম্য ইচ্ছাশক্তিতে আজ প্রায় ৪৩০ কোটি সম্পত্তির মালিক হয়ে দাঁড়িয়েছেন রজনীকান্ত। অথচ মাটির মানুষ রজনী আজও ভুলে যাননি নিজের শুরুটা কোথায় ছিল।
দক্ষিণের নতুন তারকারা উঠছেন, জনপ্রিয়তা ছড়াচ্ছে। কিন্তু ‘থালাইভা’ এখনও একজনই। আর তিনি হলেন রজনীকান্ত।
আরপি/এসএন