আবারও মাঠে নামছেন বিশ্বের বহু তারকা ক্রিকেটার। ক্যারিবিয়ান কিংবদন্তি ক্রিস গেইল, দক্ষিণ আফ্রিকার অলরাউন্ডার জ্যাক ক্যালিস এবং অস্ট্রেলিয়ার সাবেক তারকা শেন ওয়াটসনের অংশগ্রহণে শুরু হচ্ছে প্রথমবারের মতো লিজেন্ডস প্রো টি-টোয়েন্টি লিগ। ভারতের গোয়ায় অনুষ্ঠিত এই টুর্নামেন্টকে ঘিরে ক্রিকেট মহলে তৈরি হয়েছে ব্যাপক উত্তেজনা।
২০২৬ সালের ২৬ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে লিগটি। পুরো টুর্নামেন্টই আয়োজিত হবে গোয়ার ১৯১৯ স্পোর্টজ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে। ছয়টি ফ্র্যাঞ্চাইজি দল নিয়ে সাজানো এই প্রতিযোগিতায় খেলবেন মোট ৯০ জন সাবেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার-যা একে পরিণত করেছে এক ধরনের তারকাদের পুনর্মিলনীতে।
ইতোমধ্যেই অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছেন শিখর ধাওয়ান, হরভজন সিং, ডেল স্টেইন, শন মার্শ, অমিত মিশ্র, বিনয় কুমার, মন্টি পানেসার, রবিন উথাপ্পা ও আম্বাতি রায়ুডুর মতো তারকা ক্রিকেটাররা। এছাড়া থাকছেন ভারতের সাবেক অলরাউন্ডার স্টুয়ার্ট বিনি। টুর্নামেন্টের তারকাখচিত তালিকা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে লিগ নিয়ে আগ্রহও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
লিগ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। দায়িত্ব পেয়ে উত্তেজনা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ভারত বিশ্বের সবচেয়ে উচ্ছ্বসিত ক্রিকেটভূমিগুলোর একটি, আর এখানকার আবেগ সবসময়ই তাকে বিশেষভাবে টানে। ক্লার্কের মতে, পুরোনো বন্ধু ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে আবার একই পরিবেশে ফেরা লিগটিকে ভিন্ন মাত্রা দিয়েছে। তিনি বিশ্বাস করেন, গোয়ার দর্শকরা স্মরণীয় কিছু মুহূর্ত উপভোগ করবেন।
ক্রিস গেইলও টুর্নামেন্টটি নিয়ে দারুণ উত্তেজনা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ক্যালিসের বিরুদ্ধে প্রতিবারই লড়াই যেন ছিল এক কঠিন যুদ্ধের মতো, উথাপ্পার সঙ্গে ব্যাটিং নিয়ে অসংখ্য আলোচনা আর রায়ুডুর খুনসুটিতে ভরা স্মৃতিগুলো আজও। ধাওয়ান বা ওয়াটসনের মতো নাম দেখলে তার কাছে পুরোনো দিনের রসিকতা, প্রতিযোগিতা আর পারস্পরিক সম্মান ফিরে আসে। গেইলের মতে, লিজেন্ডস প্রো টি–টোয়েন্টি সেই স্মৃতিগুলোই আবার বাঁচিয়ে তুলছে।
জ্যাক ক্যালিস বলেন, খেলা থেকে দূরে থাকার সময় মানুষ সবচেয়ে বেশি মিস করে হাতে ব্যাট ধরা আর বল মারার যে ছন্দ—সেই অনুভূতি ফিরে পেতে তিনি মুখিয়ে আছেন। তার মতে, মাইকেল ক্লার্ক লিগে নতুন পেশাদারিত্ব ও পরিকল্পনা যুক্ত করেছেন, যা পুরো আয়োজনকে আরও আকর্ষণীয় করেছে।
রবিন উথাপ্পাও নিজের অনুভূতি ভাগ করেছেন। তিনি বলেন, রায়ুডুর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা এবং পরে একই ড্রেসিংরুম ভাগ করার অভিজ্ঞতা সবসময়ই স্মরণীয়। আন্ডার–১৯ দল থেকে শুরু করে দিনেশ কার্তিকের সঙ্গে ম্যাচ ফিনিশিং নিয়ে অসংখ্য আলোচনা—সবই মনে করিয়ে দেয় পুরোনো দলীয় বন্ধুত্ব। উথাপ্পার মতে, ফ্র্যাঞ্চাইজি চাপ ছাড়াই আবার সেই পরিবেশে ফিরে যাওয়া সত্যিই দারুণ অভিজ্ঞতা হবে।
আম্বাতি রায়ুডুর কাছে লিগটি যেন একটি আবেগের পুনর্জাগরণ। তিনি বলেন, যাদের সঙ্গে লড়েছেন, যাদের সঙ্গে শিরোপা জিতেছেন—তাদের সঙ্গে আবার একত্র হওয়া খেলাটির প্রতি ভালোবাসা আরও বাড়িয়ে দেয়। বিনির সঙ্গে কঠিন ম্যাচ, উথাপ্পার সঙ্গে দীর্ঘ নেট, গেইলের সঙ্গে স্মরণীয় লড়াই এবং শেন ওয়াটসনের সঙ্গে পুরোনো মুহূর্তগুলো তাকে আবার সেই দিনগুলোর কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। অমিত মিশ্র বা বিনয় কুমারকে দেখে যেন আগের সেই ড্রেসিংরুমের আবহই ফিরে আসে।
স্টুয়ার্ট বিনি বলেন, তাকে সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত করছে এই গ্রুপটাই। ক্যালিসের দেওয়া ব্যাটিং টিপস, গেইলের গল্পে হাসিতে ভরা মুহূর্ত, মন্টি পানেসারের হঠাৎ করা বিতর্ক—এসবই তাদের ক্রিকেটজীবনের অংশ। বিনির মতে, সেই পরিবেশে ফেরার সুযোগ পাওয়া সত্যিই বিশেষ অভিজ্ঞতা।
গোয়ার তটবর্তী পরিবেশে এবারের লিজেন্ডস প্রো টি–টোয়েন্টি লিগ তাই শুধুই একটি ক্রিকেট টুর্নামেন্ট নয়—এটি ক্রিকেটারদের স্মৃতি, সম্পর্ক, বন্ধুত্ব ও প্রতিযোগিতার পুনর্জন্মের এক অনন্য মঞ্চ হয়ে উঠছে।
ইএ/এসএন