ভোলার চরফ্যাশন উপজেলায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী প্রচারণাকে কেন্দ্র করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের মধ্যে দুই দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য চরফ্যাশন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এক পক্ষ অন্য পক্ষকে দোষারোপ করছে।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে চরফ্যাশন উপজেলার জিন্নাগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের চকবাজার এলাকায় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সোমবার সকাল থেকে জিন্নাগর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জামাল উদ্দিনের নেতৃত্বে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণা চলছিল। এ সময় স্থানীয় বিএনপির একদল নেতাকর্মীর সঙ্গে জামায়াতের নেতাকর্মীদের মধ্যে উত্তপ্ত বাকবিতণ্ডা হয়। পরে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠলে উভয় পক্ষ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। আহত জামায়াত কর্মীদের অ্যাম্বুলেন্সযোগে হাসপাতালে নেওয়ার সময় আবারও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ যৌথ বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর ভোলা জেলা সেক্রেটারি মাওলানা কাজী হারুনুর রশিদ অভিযোগ করে বলেন, আমাদের কর্মী জামাল উদ্দিন জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে ভোট চেয়ে প্রচারণা করছিলেন। এ সময় বিএনপি নেতাকর্মীরা প্রথমে জামাল উদ্দিনের ওপর হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে। পরে খবর পেয়ে আমাদের অন্যান্য কর্মীরা পুলিশকে জানিয়ে আহতকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নেওয়ার পথে বিএনপি নেতাকর্মীরা আবারও হামলা চালায়। তাদের হামলায় আমাদের ২০-২৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। গুরুতর আহতরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, এই হামলার ঘটনায় প্রশাসন কোনো কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেনি। এ ঘটনায় মামলা করার প্রস্তুতি চলছে। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে চরফ্যাশন উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর মালতিয়া বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শাসনামলে চরফ্যাশনে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা ব্যাপক অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে। সেই চিহ্নিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে যদি জামায়াত মাঠে নামতে চায়, তাহলে আমাদের যেসব ছেলেরা বিগত দিনে মার খেয়েছে, তাদের মনে তো ক্ষোভ থাকবেই। তারা বাধা দেবে, কারণ তারা অতীতে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এখন জামায়াত যদি তাদেরকে আওয়ামী লীগের লোক হিসেবে নিজেদের দলে পরিচয় করিয়ে দিতে চায়, তাহলে সেটা আমাদের জন্য দুঃখজনক।
তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, আওয়ামী লীগ অনুপ্রবেশ করে এসব ঘটনা ঘটাচ্ছে। ওই জামাল উদ্দিন আগে আওয়ামী লীগ করতেন। আওয়ামী লীগের আমলে তিনি আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর অন্যায়-অত্যাচার করেছেন। আমাদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের প্রথমে হাতাহাতি হয়। পরে চরফ্যাশন উপজেলা শহর থেকে ২০-৩০টি মোটরসাইকেলযোগে জামায়াতের নেতাকর্মীরা এসে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। তাদের হামলায় আমাদের ৮-১০ জন আহত হয়েছেন। তারা চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চরফ্যাশন থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর বাদশা দেশের একটি গণমাধ্যমকে বলেন, সংঘর্ষে একাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। এখনো কোনো পক্ষ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পরিস্থিতি বর্তমানে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।