দেড় যুগ নির্বাসন কাটিয়ে দেশে ফেরার পর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কোথায় থাকবেন ও কোথায় বসবেন-সেই প্রস্তুতি গুছিয়ে এনেছে বিএনপি। জানা গেছে, তিনি উঠবেন গুলশান অ্যাভিনিউয়ের ১৯৬ নম্বর বাড়িতে। এর পাশেই ‘ফিরোজা’ নামের বাড়িটিতে থাকেন তার মা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্য আলাদা রুমও তৈরি করা হয়েছে। এছাড়া গুলশানে আরেকটি বাসা ভাড়া নেওয়া হয়েছে, যেখান থেকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
মঙ্গলবার বিকালে গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কে ১০/সির নতুন কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তারেক রহমানের দেশে প্রত্যাবর্তন উপলক্ষ্যে ‘আমার ভাবনায় বাংলাদেশ’ শিরোনামে জাতীয় রিল মেকিং প্রতিযোগিতা কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা মাহদী আমিন। ২৫ ডিসেম্বর লন্ডন থেকে ঢাকায় ফিরছেন তারেক রহমান। এ উপলক্ষ্যে বিএনপি ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে।
২৫ তারিখ ঢাকার হযরত শাহজালাল (রহ.) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছালে তাকে সংবর্ধনা জানাবে নেতাকর্মীরা। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের নেতার অপেক্ষায় আছেন দেশবাসী। সেদিন দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা সড়কের দুপাশে সুশৃঙ্খলভাবে অবস্থান নিয়ে প্রিয় নেতাকে অভ্যর্থনা জানাবেন। আমরা সেই প্রস্তুতির কাজ করছি।
তারেক রহমানকে কীভাবে অভ্যর্থনা জানানো হবে তা নিয়ে সোমবার গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের যৌথসভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এ সভায় সভাপতিত্ব করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জানা গেছে, তারেক রহমান যে বাসভবনে উঠবেন, সেই ১৯৬ নম্বর বাড়িটি রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পরে তার সহধর্মিণী খালেদা জিয়াকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তারের মন্ত্রিসভা। মাস কয়েক আগে এ বাড়ির দলিলপত্র বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে হস্তান্তর করেন গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান ও রাজউক চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম রিজু। এ বাড়ির প্রস্তুতির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সরেজমিন দেখা গেছে, বাড়ির সামনে নিরাপত্তা চৌকি বসানো হয়েছে। সড়কের সামনে স্থাপন করা হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মী জানান, ‘এ বাড়িতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান থাকবেন, সেজন্য এই নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
এদিকে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের পাশাপাশি নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও তারেক রহমানের জন্য আলাদা রুম তৈরি করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের আলাদা রুম রয়েছে। এখন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের জন্যও রুম করা হলো।
নতুন অফিস, প্রথম অনুষ্ঠান : গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কের ১০/সি এর চারতলা ভবনটিতে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এখানে দোতলায় রয়েছে ব্রিফিং রুম। অন্যান্য তলায় বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্তদের বসার ব্যবস্থা রয়েছে; আছে গবেষণা সেল। নতুন অফিস খোলার পর প্রথমবারের মতো মঙ্গলবার আয়োজিত প্রথম সংবাদ সম্মেলনে মাহদী আমিন বলেন, এটি বিএনপির একটি কার্যালয়। এখান থেকে নির্বাচনের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
তিনি বলেন, ‘আপনারা নিশ্চয়ই অবগত যে, ২৫ ডিসেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বাংলাদেশে ফিরবেন। তার এই স্বদেশ প্রত্যাবর্তনকে ঘিরে গণমানুষের মাঝে রয়েছে তীব্র আবেগ, আকাঙ্ক্ষা ও আগ্রহ। আমাদের নেতা বিশ্বাস করেন, আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হলে রাজনীতি এবং আদর্শের ঊর্ধ্বে গণতন্ত্রকামী প্রতিটি মানুষকে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য আমাদের এ রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য।’
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে বিএনপি প্রণীত ‘দেশ গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক কর্মসূচি নিয়ে ঢাকায় এক সপ্তাহব্যাপী মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিএনপি এবং অঙ্গ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতারা এসেছিলেন। আমাদের তৃণমূলের নেতা, গণমানুষের নেতা তারেক রহমান দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন; যেহেতু এই বাংলাদেশটা আমাদের সবার; তাই ধর্ম-বর্ণ, আদর্শ-দর্শন ও রাজনৈতিক অবস্থান সবকিছুর ঊর্ধ্বে এবং দল-মত ও পার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে সবাইকে এক হয়ে এই দেশটাকে গড়তে হবে। আমাদের সবাইকে একযোগে ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।’
এবি/টিকে