হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণ ও সারাদেশে বিজয়ের লাল-সবুজ উড়লেও ব্যতিক্রম ছিল খুলনা। সেদিনও হানাদারদের আগ্রাসন বন্ধ হয়নি। পরাজয়ের শেষ প্রতিশোধে মরিয়া। তারা খুলনার প্রবেশ পথে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী অগ্রযাত্রায় আক্রমণ করে পাক সেনারা।
চারিদিক থেকে তীব্র প্রতিরোধ গড়ে বীর মুক্তিযোদ্ধারা। হার মানতে বাধ্য হয় হানাদার বাহিনী, মহান বিজয় দিবসের একদিন পর হানাদার মুক্ত হয় খুলনা। তাই আজ ১৭ ডিসেম্বর খুলনা মুক্ত দিবস।
১৯৭১ সালের এদিন সূর্যোদয়ের পরপর গল্লামারী রেডিও সেন্টার থেকে সেনা ছাউনি ছেড়ে কনভয় নিয়ে বর্তমান সার্কিট হাউজে উপস্থিত হন।
সেখানে শিরোমণি যুদ্ধেও পরাজয়ের খবর আসে। কিছুক্ষণের মধ্যে আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে খুলনায় পাকবাহিনীর পতনের খবর প্রচার করা হয়। সকাল ৯টার দিকে ৯ নম্বর সেক্টর অধিনায়ক মেজর জয়নাল আবেদীন, লে. গাজী রহমতুল্লাহ দাদু বীর প্রতীক ও মুজিববাহিনীর আঞ্চলিক তৎকালীন প্রধান স ম বাবার আলী সার্কিট হাউজে উপস্থিত হয়ে পতাকা উত্তোলন করেন। হানাদার পাকবাহিনী ভীত সন্তস্ত্র হয়ে সার্কিট হাউজে আশ্রয় নেয়।
বীর মুক্তিযোদ্ধা ইত্তেহাদুল হক এক স্মৃতি চারণায় বলেছিলেন, মাগুরা মুক্তির পর একটি এসএলআর নিয়ে একাই খুলনা যাত্রা করি। তখনও খুলনা মুক্ত হয়নি। শিরোমণিতে যুদ্ধ চলছে। ১৬ ডিসেম্বর খুলনার যাবার পথে নওয়াপাড়ায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর একজন কর্ণেলের সাথে রণাঙ্গণে আমার পরিচয় ঘটে। যখন তিনি জানতে পারেন আমার বাড়ি খুলনায়।
তিনি আমাকে তাদের সঙ্গে নিয়ে নেন। তাদের সঙ্গে শিরোমণি যুদ্ধে অংশ নিই। ১৭ ডিসেম্বর খুলনা মুক্ত হলে প্রথমে সার্কিট হাউজ, তারপর বাসায় ফিরে যাই।
মহানগরী খুলনা- ইতিহাসের আলোকে গ্রন্থে ড. শেখ গাউস মিয়া লিখেছেন, খুলনায় আত্মসমর্পণের প্রধান অনুষ্ঠান হয় সার্কিট হাউস ময়দানে, ১টা ৩০ মিনিটে। বিগ্রেডিয়ার দেলবার সিং, মেজর মঞ্জুর, মেজর জলিল, মেজর জয়নাল আবেদীন প্রমুখের সামনে ৮ জন সঙ্গীসহ খুলনাস্থ সদর দপ্তরের অধিনায়ক বিগ্রেডিয়ার হায়াৎ খান (পিএ ২১০৩)। অস্ত্র ও বেল্ট খুলে নত হয়ে আত্মসমর্পণ করেন।
আত্মসমপর্ণের দ্বিতীয় অনুষ্ঠান হয় খালিশপুর নিউজপ্রিন্ট মিলে হায়াৎ খানের সদর দপ্তরে। বারি তখন প্রচণ্ড উল্লাস ধ্বনি শোনা যায়।
সাংবাদিক ও লেখক কাজী মোতাহার রহমান বাবু এক নিবন্ধে জানান, ১৯৭১ সালের ১৭ ডিসেম্বর, শুক্রবার। খুলনার পূর্বাকাশে প্রত্যুষে নতুন সূর্য উকি দেয়। তখনও শহরবাসী ঘুমে আচ্ছন্ন। গল্লামারী ও শিরোমণিতে দুপক্ষের মেশিনগান গর্জে উঠছে। শহরের পথে প্রান্তরে হাজার হাজার মুক্তিবাহিনী। শিপইয়ার্ড, ফায়ার বিগ্রেড, ওয়াপদা, পিএমজি, খুলনা সার্কিট হাউজের সেনা ছাউনি গুটিয়ে পাকবাহিনীর কর্মকর্তারা নিউজপ্রিন্ট মিলে আশ্রয় নেয়। সেখানে পাকবাহিনীর আত্ম সমর্পণের পর জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী পরাজিত পাক সেনাদের নিরাপত্তার জন্য জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। হাজার হাজার মানুষ বিজযের স্লোগানে মুখরিত করে মহানগরী।
এবি/টিকে