জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সিনিয়র যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক ও নোয়াখালী-৬ (হাতিয়া) আসনে শাপলা কলি প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল হান্নান মাসউদকে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ সংক্রান্ত কয়েকটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাতে হাতিয়া থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। জিডিতে তাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। ওই হুমকির স্ক্রিনশটগুলো বৃহস্পতিবার রাতেই ভাইরাল হয়। এতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
হান্নান মাসউদের চাচা ও জাতীয় নাগরিক পার্টির হাতিয়া উপজেলার সমন্বয় কমিটি প্রধান সমন্বয়কারী হেডমাস্টার শামছল তিব্রিজ এই সাধারণ ডায়েরিটা করেন।
জিডিতে উল্লেখ করা হয়, ১৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ৪ মিনিটে ‘রুপক নন্দী’ নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে আবদুল হান্নান মাসউদকে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়।
এছাড়া একই দিন বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে ‘Israt Raihan Ome’ নামের আরেকটি ফেসবুক আইডি থেকে এনসিপির এক কর্মীর মেসেঞ্জারে বার্তা পাঠিয়ে হান্নান মাসউদ ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
জিডিতে মোট সাতজনের নাম উল্লেখ করে বলা হয়, তারা বিভিন্ন সময় নানা কৌশলে আবদুল হান্নান মাসউদ ও তার সহযোগীদের হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে। এতে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয় যে, বিবাদীরা যেকোনো সময় বড় ধরনের ক্ষতি সাধন করতে পারে।
অভিযুক্তরা হলেন, হাতিয়া উপজেলার কান্তি লালের ছেলে রুপক নন্দী (২৫), চরঈশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হালিম আজাদ (৪৬), তার ছেলে ইসরাত রায়হান অমি (২৭), সংকর চন্দ্রের ছেলে প্রেম নাল (২৫), তোফায়েল সেরাংয়ের ছেলে নুর হোসেন রহিম (২৬), সংকর চন্দ্র দাসের ছেলে বাবুলাল (৩২) ও বেলায়েত হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক (৩২)।
জানা গেছে, স্ক্রিনশটগুলো হাতিয়ার চরঈশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হালিম আজাদের ছেলে ইসরাত রায়হান অমি এবং তার অনুসারী রুপক নন্দীর।
স্ক্রিনশটে দেখা যায়, মেসেঞ্জারে ইসরাত রায়হান অমি লিখেছেন, ‘আবদুল হালিম আজাদকে নাকি গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করছে কতিপয় নেতা। হান্নান বল আর তানভির বল যেই নেতাই হোক, খোদার কসম করে বললাম, উত্তর অঞ্চলে চলাচল হারাম হয়ে যাবে। আমাদের নেতাকর্মীরা ডাইরেক গিলে খেয়ে ফেলবে। এখনো ধৈর্য ধরে আছি। তোর নেতাকে এটা কপি করে পাঠাইছ।’
অন্যদিকে, রুপক নন্দী তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘হান্নান আগুন নিয়ে খেলা কোরো না, পরে পস্তাতে হবে। যারা আবদুল হালিম আজাদ চেয়ারম্যানকে ভালো জানে, তারা কখনো তোমাকে আস্ত রাখবে না। ভোট করা ঢুকাই দেবে ভিতর দিয়ে। এখনো শান্ত আছি। আমার নেতাকে যদি গ্রেপ্তার করা হয়, তাহলে উত্তরাঞ্চলে তোকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করবো’
হান্নান মাসউদের চাচা শামছল তিব্রিজ সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমার ভাতিজা আবদুল হান্নান মাসউদকে দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বারবার ভয়ভীতি ও প্রাণনাশের হুমকি আসায় আমরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। যেকোনো সময় তার বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছি। এ কারণে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছি এবং প্রশাসনের কাছে তার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।
হাতিয়া উপজেলা যুবশক্তির আহ্বায়ক মো. ইউসুফ রেজা বলেন, সম্প্রতি চরঈশ্বর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান একটি চা-দোকানে কথা বলেন। সেখানে তিনি হান্নান মাসউদকে ইঙ্গিত করে বলেন ভোটের আগে অনেক জনপ্রিয় প্রার্থীকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুমকি-ধমকি শুরু হয়। তারই অংশ হিসেবে তার ছেলে ও অনুসারীরা এসব স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। আমরা দ্রুত আইনি ব্যবস্থার দাবি করছি।
বাগছাসের কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক হাফিজুর রহমান সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ন্যায় ও ইনসাফের পথে থাকায় জুলাইয়ের সহযোদ্ধা শহীদ শরীফ ওসমান হাদীর মতো আমার ভাই হান্নান মাসউদকেও প্রকাশ্যে হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আজও ওপেন থ্রেট এসেছে। অথচ প্রশাসন নীরব। ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষার পরও তার নিরাপত্তায় কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেই—এটি চরম ব্যর্থতা।
তিনি আরও বলেন, ইউনূস সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহ্বান, হান্নান মাসউদসহ আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন। সন্ত্রাসীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনুন। অন্যথায় কোনো পূর্বপরিকল্পিত ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার আপনাদেরকেই নিতে হবে।
আব্দুল হান্নান মাসউদ গণমাধ্যমকে বলেন, হত্যার হুমকি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মতো ঘৃণ্য অপরাধ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের কর্মকাণ্ড সরাসরি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্টের অপচেষ্টা এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের ওপর নগ্ন হামলা। বিষয়টি ইতোমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করা হয়েছে। আমি স্পষ্টভাবে বলতে চাই—দোষীদের দ্রুত শনাক্ত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা না হলে এ ধরনের অপরাধ আরও উৎসাহিত হবে। তাই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানাচ্ছি।
হাতিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সাইফুল আলম বলেন, ঘটনাটি আমাদের নজরে এসেছে। এ সংক্রান্ত একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাপ্ত স্ক্রিনশটগুলো যাচাই-বাছাই করে তদন্ত সাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেএন/টিকে