ওসমান হাদি ছিলেন আধিপত্যবাদ-দুর্নীতির বিরুদ্ধে আপসহীন বীর : শিবির সভাপতি

যারা শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদিকে শহীদ করেছে তারা ভুল করেছে। কত বড়ো ভুল করেছে তারা শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির জানাজা দেখে আশা করি বুঝতে পেরেছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম।

তিনি বলেন, শহীদ হাদি ছিলেন আধিপত্যবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক আপসহীন বীর। খুনিদের ন্যূনতম জ্ঞান থাকা দরকার ছিল জুলাই এবং আগস্টের যেই আদর্শিক ভিত্তির উপর বাংলাদেশ দাঁড়িয়ে আছে সেখানে একজন হাদিকে হত্যা করে জুলাইকে পরিবর্তন করে দেওয়া যাবে না। তারা যদি মনে করে একজন জুলাই যোদ্ধাকে হত্যা করে বাংলাদেশের আগামী দিনের সম্ভাবনার ধারাকে পরিবর্তন করে দেওয়া যাবে, তাহলে তারা নিঃসন্দেহ তারা বোকার স্বর্গে বাস করছে।

শহীদ শরিফ ওসমান হাদি’র শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনায় ‘ঠাকুরগাঁও উন্নয়ন ফোরাম’-এর উদ্যোগে এক আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল গতকাল শনিবার রাতে রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট হলরুমে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন শিবির সভাপতি।

শিবির সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, যারা শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত তাদেরকে মৃত্যুর ভয় দেখানো যায় না, তারা মৃত্যুকে ভয় পায় না। জুলাই যোদ্ধা তরুণ বিপ্লবীরা মৃত্যুকে ভয় পায় না।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি আগামী দিনে শহীদ ওসমান হাদির স্বপ্নগুলো আরও অসংখ্য হাদি তৈরি হবে এবং হাদির স্বপ্নের ইনসাফ ভিত্তিক বাংলাদেশ বিনির্মাণ করবে।

তিনি আরও বলেন, ৫ আগস্টের আগের প্রেক্ষাপট আর পরের প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের অনেক সমীকরণ চেঞ্জ করে দিয়েছে। আমরা ৫ আগস্টের আগে ভাবতাম যে এই জনপদে জুলুমের কোনো নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে না। তবে আমাদের বিশ্বাস ছিল আল্লাহ তায়ালা ক্ষমতার পরিবর্তন করেন, রাতকে-দিন করেন। আমরা আল্লাহ তায়ালার সেই ক্ষমতা স্পষ্ট দেখেছি। ফ্যাসিস্টের পতনের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে জুলুমের হাত থেকে মুক্ত করেছেন। নব্য ফ্যাসিবাদের হাত থেকেও আল্লাহ তাওয়ালা এই জাতিকে মুক্ত করবেন। এজন্য আমাদেরকে বিপ্লবী চেতনা লালন করে সকল অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে।

তিনি নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণে দেশি-বিদেশি যেকোনো ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করতে তরুণ প্রজন্মকে শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির ভূমিকায় আবির্ভূত হওয়ার আহ্বান জানান। ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক ও ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম বলেন, শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদি আমাদেরকে দেখিয়েছেন কীভাবে ইনসাফের জন্য লড়াই করতে হয়। কীভাবে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে হয় এবং কীভাবে আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হয়। কীভাবে আগ্রাসনের বিরুদ্ধে, কীভাবে মাফিয়া তন্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়।

কীভাবে সমাজে ন্যায়ের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করতে হয়। শহীদ ওসমান হাদি আজকে সারা বাংলাদেশের মানুষের প্রেরণার বাতিঘর। আজকে বাংলাদেশের ছাপান্না হাজার বর্গমাইল জুড়ে শহীদ ওসমান বিন হাদির আদর্শ ছড়িয়ে পড়েছে। এবং আগামীর যেই প্রজন্ম, আগামীর যেই বাংলাদেশ সেই বাংলাদেশে শহীদ ওসমান বিন হাদি সবসময় জীবন্ত থাকবে।

তিনি বলেন, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে, আগ্রাসনের বিরুদ্ধে এবং বাংলাদেশে ইনসাফ কায়েমের জন্য ও শহীদদের আকাঙ্ক্ষার আলোকে এক নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমরা শহীদ ওসমান বিন হাদিসহ একত্রে রাজপথে লড়াই করার সুযোগ হয়েছে। তিনি আমাদেরকে ইনসাফ ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণের যেই স্বপ্ন দেখিয়েছেন আমরা তার স্বপ্ন পূরণ না করে ঘরে ফিরে যাবো না।

তিনি প্রত্যেক তরুণ বিপ্লবী সহযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের সবাইকে হাদি হতে হবে। আমাদেরকে আধিপত্যবাদের হাত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আপসহীন ভূমিকা রাখতে হবে।

ঠাকুরগাঁও উন্নয়ন ফোরামে ভাইস-চেয়ারম্যান আমিনুর ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামী ঠাকুরগাঁও জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক বেলাল উদ্দিন প্রধান, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা) সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর ইকবাল হোসেন, ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় অফিস সম্পাদক সিবগাতুল্লাহ সিবগা, ইসলামী ছাত্রশিবির ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি বেলাল হোসাইন, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা জামায়াতের আমির রফিকুল ইসলাম, ঠাকুরগাঁও জেলা কর্মপরিষদ সদস্য শাহজালাল জুয়েল, ঠাকুরগাঁও চিরন্তন সংগঠনের সভাপতি সুজন আলী প্রমুখ।

সভা শেষে শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদির শাহাদাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা কামনায় বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়।

এবি/টিকে

Share this news on:

সর্বশেষ

img
অহংকার নয়, নম্রতাই আসল সৌন্দর্য: ক্যাটরিনা কাইফ Dec 22, 2025
img
সাকিবের ম্যাচসেরার দিনে জয় পেল এমআই এমিরেটস Dec 22, 2025
img
কূটনৈতিক সাংবাদিকতা পররাষ্ট্রনীতিকে শক্তিশালী করছে : পররাষ্ট্রসচিব Dec 22, 2025
img
বাবাকে দেখেই আমি কাজ আর সংসার ব্যালেন্স করা শিখেছি: কোয়েল মল্লিক Dec 21, 2025
img
বাজেভাবে হারলেও অধিনায়কত্ব ছাড়ছেন না স্টোকস Dec 21, 2025
img
কটু কথার জবাবে নীরবতাই সবচেয়ে বড় প্রতিরোধ: পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় Dec 21, 2025
img
রিকশাচালকের করা মামলায় বিএনপির সাবেক এমপি কারাগারে Dec 21, 2025
img
ময়মনসিংহে দীপু চন্দ্রকে হত্যার ঘটনায় মাদারীপুরে প্রতিবাদ মিছিল Dec 21, 2025
img
ইনকিলাব মঞ্চের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা Dec 21, 2025
img
সুদানে মার্কেটে ড্রোন হামলায় নিহত ১০ Dec 21, 2025
img
মাইলি সাইরাস পেলেন বিশেষ সম্মাননা Dec 21, 2025
img
ভারতীয় আধিপত্যবাদের কবর রচিত হয়ে গেছে : পীর চরমোনাই Dec 21, 2025
img
কারাগারে বসে মনোনয়নপত্র নিলেন সাবেক এমপি Dec 21, 2025
img
তারেক রহমানের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের অনুমতি পেয়েছে বিএনপি Dec 21, 2025
img
হিন্দু সম্প্রদায়ের পাশে থাকবে বিএনপি : প্রিন্স Dec 21, 2025
img
প্রবৃদ্ধি ১৫ শতাংশ, তবু রাজস্বে ঘাটতি ২৪ হাজার কোটি Dec 21, 2025
img
২৫ ডিসেম্বরের মধ্যে পোস্টাল ভোটিং অ্যাপে নিবন্ধন সম্পন্ন করতে হবে Dec 21, 2025
img
আন্দোলনের মুখে রাবিতে আওয়ামীপন্থী ছয় ডিনের পদত্যাগ Dec 21, 2025
img
কে করবেন রাজশাহীর উইকেটকিপিং? মুশফিক নাকি আকবর? Dec 21, 2025
img
ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে চুরি প্রায় ৬০ লক্ষ টাকার সামগ্রী , আটক ৩ Dec 21, 2025